[প্রথমপাতা]

 

 

 

প্রবাসীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত উত্তরণ -জাপান'র রজতজয়ন্তী উৎসব

 

New Page 2

ছবিঃ কমল বড়ুয়া

 

কাজী ইনসানুল হক, উপদেষ্টা সম্পাদক,
কমিউনিটি নিউজ ।। ডিসেম্বর ১০, ২০১৩ ।।

শীতের বিকেল, ৮ ডিসেম্বর ২০১৩ রাজধানী টোকিও সাক্ষী রইলো এক অনুপম সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের গৌরব নিয়ে। উত্তরণ বাংলাদেশ কালচারাল গ্রুপ এর রজতজয়ন্তী উৎসবের দুর্দান্ত বর্ণময়, রূদ্ধশ্বাস ৫ ঘন্টা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন পাঁচ শতাধিক প্রবাসী ও জাপানি দর্শক। দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি আর নানা চমক ও বাহারি আয়োজনে উত্তরণ প্রমাণ করলো -না হেলাখেলায় কাটেনি গত ২৫ বছর। স্বদেশের প্রতি, বাংলা সাংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা আর অনেক পরিশ্রম ও নানান প্রতিকূলতার কঠিন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এসে থিতু হওয়া গেছে একটি জায়গায়। নির্ভর এই অবস্থানটি আরো দায়িত্ববান করে তুলেছে উত্তরণের সকল কুশীলবদেরকে। সামনে সুদূর পথ -যে পথটি দূর-দিগন্তে মিশেছে সেই পথে গানের একতারা বাজিয়ে ছুটতে হবে আরশিনগরের সেই অচিন পাখির খোঁজে।

সেটা ১৯৮৬ সাল। ভাগ্যান্বেশনে জাপানে আসা তরুণদের মধ্যে ওরা ৫ জন। থাকতেন নাকানো-কু'র কোয়েনজি'র একটি ৬ তাতামির ছোট্ট ঘরে। দিনভর জাপানি ভাষা শিক্ষার ক্লাস, ক্লাস শেষে কাজ, মধ্য রাতে ঘরে ফেরা। একটাই ছুটির দিন -রোববার। দিনভর আড্ডা খাওয়া-দাওয়া, গান শোনা। জোরে জোরে কথা বলার সুযোগ নেই। প্রবাসীদের ঘর ভাড়া পাওয়া নানান বিড়ম্বনা। প্রতিবেশিরা অভিযোগ করলেই ঘর ছেড়ে দেয়ার নোটিশ জানাতো ফুদোসান। তাই আড্ডাটা হতো বাড়ির পাশের পার্কে। জুন মাসের এক রাতে পার্কের পাশে হাঁটতে যেয়ে পাওয়া গেলো একটি তার ছেঁড়া ব্যবহৃত গিটার। সেই গিটারেই টুং টাং করে গান গাওয়ার অপচেষ্টা। তীব্র ভালোবাসায় সেই গীটারে তার লাগানো হলো। শুরু হলো ছুটির দিনে ঐ পাঁচ তরুণের সংগীত চর্চা। শ্রোতার সংখ্যা বাড়তে লাগলো পার্কের বেঞ্চে, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায়, লোকালয় থেকে দূরে নদীর পাড়ে, রেললাইনের নীচে। টোকিওর আকাশ-বাতাসে ভিন্ন ভাষার গানের ইথার ছড়ালো সেটা বোধহয় তাল-লয়ে হীন বাংলা গান এই প্রথম।

১৯৮৭ সাল। ইতিমধ্যেই ওই ৫ তরুণ অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে নিজেদের আলাদা আলাদা অ‌্যাপার্টমেন্ট, নিজেদের অর্থনৈতিক ভিতও কিছুটা মজবুত। তবুও শনিবার রাত ও পুরো রোববার ওরা ৫ জন একসংগে। নিত্য সংগী সেই পথে কুড়িয়ে পাওয়া গীটার। কোমাবাতোদাইমায়ে অঞ্চলের একটি হলে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় বাংলাদেশিদের একটি অনুষ্ঠানের খবর পেয়ে ওরা ছুটে গেলো। অভাবিত ভাবে ওদের একজনের গান গাওয়ার সুযোগ এলো। সে এক অভাবনীয় মুহূর্ত, চোখ ভরে গিয়েছিলো আনন্দের জলে। দূতাবাসের তৎকালীন কর্মকর্তা ওদেরকে নিয়মিত দূতাবাসের রোববারের আয়োজনে এসে গান গাওয়ার অনুরোধ জানালেন। শুরু হলো পথ চলা। এভাবেই ১৯৮৮ সালের ১১ নভেম্বর সুগিনামি-কু এর সাগিনোমিয়া'র এক সদস্যের বাসায় উত্তরণ গ্রুপের নামকরণ ও প্রতিষ্ঠা।

আজ এতোদিন পরও উত্তরণ গভীর কৃতজ্ঞতায় মাযহারুল ইসলাম দুলালা যিনি প্রথম গান গাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং সেই দূতাবাস কর্মকর্তা জনাব মিজারুল কায়েসকে স্মরণ করেন। উত্তরণ প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে তাদের সহযোগিতার কথা মনে করছেন।

 

সূচনা করেছিলেন সেই দূতাবাস কর্মকর্তা আর আজ এই অনুষ্ঠানে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব মাসুদ বিন মোমেন উত্তরণকে তাদের রজতজয়ন্তীতে তাদের স্মারক সম্মান জানিয়ে ক্রেস্ট প্রদান করে আরেকবার প্রমাণ করলেন প্রবাসে দূতাবাস ও প্রবাসীদের মধ্যে বন্ধন চাইলেই অটুট রাখা যায়। পরষ্পরকে সম্মান জানিয়ে পাশাপাশি থাকা যায়।


অনুষ্ঠান জুড়ে ছিলো নানান আয়োজন। অনুষ্ঠানটিকে সার্বজনীন করার চেষ্টা ছিলো। উত্তরণ নাকি তাদের শিল্পিদের গোষ্ঠির বাইরে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বেশ কঠোর অথচ দেখা গেলো এই অনুষ্ঠানে প্রবাস প্রজন্ম, কলি একাডেমি, স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি, আরাধনা ও ওসাকা থেকে আগত একজন জাপানি সেতার বাদক ও তবলচীর চমৎকার পরিবেশনা।

তাকিনাগাওয়া কোইয়ো চুগাক্কো'র শিশু শিক্ষার্থীরা ব্যান্ড বাজিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত ও বিশেষ অথিথি বাংলাদেশের পরম বন্ধু এপিএফএস এর ইয়োশিনারি সানকে সম্মানিত করা হয়েছে। উত্তরণের সূচনা লগ্নের সদস্য জনাব বারকাত ও নূর বাংলাদেশ থেকে উত্তরণের ২৫ বছরকে ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সূচনা তরুণের ৫ জনের ২ জন এখনো যারা জপানে উত্তরণের হাল ধরে আছেন সেই রতন খন্দকার ও মান্না চৌধুরিকে উত্তরণের অপর সদস্যরা স্মারক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন পুরোনো সদস্য তারেক, ঢাকা থেকে মান্না, বাবু, ওসাকা থেকে রুমি। প্রকাশ হয়েছে বিশেষ স্মরণিকা। গান, নাচ, কৌতুক, বৃন্দগান সবই ছিলো, দর্শকরা এসেছিলেন উত্তরণকে শুভেচ্ছা জানাতে -তাই ভালোমন্দ বিচার করার ইচ্ছে কারোই ছিলোনা। তবুও অনুষ্ঠানে কবিতা পর্ব ছিলোনা বললেই চলে। 

আর যেটুকু না বললেই নয় সদ্য প্রয়াত আফ্রিকান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে স্মরণ করলে অনুষ্ঠানের মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেত।

প্রবাসে শত প্রতিকূলতায় একটি সংগঠনের ২৫ বছর উদযাপন করার ঘটনা খুব কমই ঘটে। এই দূরহ পথ পরিক্রমায় উত্তরণের প্রতিটি সদস্যই তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছেন। তাই সকল প্রবাসী তাদের এই অর্জনকে ফুলেল ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন।

 

উত্তরণ তোমাকে অভিবাদন।

 


WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]