প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

ফিউচার অব এশিয়া কনফারেন্স,২০১৯

 

 

 

কাজী ইনসানুল হক

 
 

প্রথম দিন ৩০ মে,২০১৯
ভেন্যু;"ফুজি হল",ইম্পেরিয়াল
হোটেল,টোকিও


দু'দিনের প্রেস কভারেজের আমন্ত্রন পত্রে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সকাল ৮:৩০ থেকে প্রেস রেজিস্ট্রেশন শুরু হবে, পেন জার্নালিস্ট হিসেবে বড় ক্যামেরা নেয়ার সুযোগ নেই। হাতব্যাগ জমা দিতে হবে। যথারীতি রেজিস্ট্রেশন করে, হাতব্যাগ জমা দিয়ে,কঠিন নিরাপত্তা চেকিং শেষ করে হলে ঢুকে দেখি হল পরিপূর্ন।

নিজের আসনে বসি। সব আসন জুড়ে জাপানীরা।বাংলাদেশের জনাব বাদল চাকলাদার,জনাব শাহীন চোধূরী, ও জনাব আলাউদ্দিনকে চোখে পড়লো,পরে এলেন জনাব সাকূরা সাবের ও জনাব নাসিরুল হাকিম। প্রথম কনফারেন্স ডে তে আমরা দু'জন প্রেস সদস্য ও ওনারা পাচজন ছাড়া আর কোন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী চোখে পড়েনি।প্রবেশ মুল্য ছিল ৬৮৪০০ ইয়েন, সেটিও কারণ। তাছাড়া
টিকিটও শেষ হয়ে গিয়েছিল।

বাংলাদেশ থেকে আসা মিডিয়ার লোকজন হলের দুদিকের প্রেসজোনে প্রস্তুত।

আসবার সময় হলের বাইরে হিবিয়া পার্কে এই হোটেল বরাবর উল্টোদিকে বি এন পি জাপান এর সদস্যদের হাসিনা বিরোধী ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। হলের লবিতেও আওয়ামী লীগের অনেককেই চোখে পড়লো।

ফিউচার অব এশিয়া
————————

জাপানের মর্যাদাবান মিডিয়া প্রতিষ্ঠান নিক্কেই ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও ৩০ ও ৩১ মে দুদিনব্যাপী টোকিওতে 'ফিউচার অব এশিয়া 'আন্তজার্তিক কনফারেন্সের 'আয়োজন করছে। এটি ২৫ তম আয়োজন। সেখানে বিশ্ব নেত্রীবৃন্দের সাথে বিশেষ অতিথী হিসেবে বক্তৃতা করবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফিলিপিনস'র প্রেসিডেন্ট রডরিগ্রো রোয়া দুতারতে, চারজন প্রধানমন্ত্রী, মালেয়েশিয়ার মহাথির বিন মোহাম্মদ,লাওসের প্রধানমন্ত্রী থংলউন সিসোলিথ,কম্বেডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভিয়েতনাম ও সিংগাপুরের উপ প্রধানমন্ত্রী সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের বক্তৃতায় মুখর থাকবে দু'টি দিন। এটি one of the most dignified global conference of Asia হিসেবে পরিচিত। ২৫ তম এ বছরের 'থীম' Seeking a new global order-overcoming the chaos.(বিশৃংখলা দূর করে একটা নতুন বিশ্ব ব্যাবস্থা চাই)

মহাথির বিন মোহাম্মদ
—————————
Nikkei Asian Review এর প্রকাশক ও ওসাকা ব্যুরো প্রধান ওয়াতানাবে সোনোকোর সঞ্চালনে keynote স্পিকার হিসেবে প্রথমে বক্তব্য রাখতে আসেন মালয়েশিয়া বর্ষিযয়ান নেতা মহাথির বিন মোহাম্মদ।প্রথমে তার পরিচয় বর্ননা করা হলো,আপাদমস্তক একজন সফল রাজনীতিবিদ ৯-৩০ থেকে ১০-২০ অনর্গল তার বক্তৃতায় মার্কিন যুক্তরাস্ট্র,চীনের সমালোচনার বারুদ ছড়ালেন।
বিগত দিনে মাহাথীরের রাষ্ট্র পরিচালনা এবং উন্নয়নের মন্ত্র কেবল নিজের দেশের ক্ষেত্রেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। 'আমাকে ১০ জন যুবক দাও, আমি মালয়ীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্বজয় করে ফেলব'- এমনি আদর্শিক চেতনা নিয়ে দারিদ্র্যের তলানিতে অবস্থান করা মালয়েশিয়াকে তুলে এনেছেন উন্নয়ন আর আধুনিকতার শীর্ষে।

এরপর গ্যালারী থেকে একজনের আশীয়ানভুক্ত সদস্যদের ঐক্য ও আগামীতে আরও শক্তিশালী মোর্চা গঠনবিষয়ক প্রশ্নের জবাবও দিলেন।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
 


দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে করতালীর মাধ্যমে মন্চে এলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সন্চালক জাতীর জনক বংগবন্ধূ ও বঙ্গবন্ধুর নির্মম মৃত্যুর পর শেখ হাসিনার রাজনীতিতে আগমন
এবং আগে একবার ও এবার টানা তিনবারের ক্ষমতারোহনের বর্ননা দেয়ার পর শেখ হাসিনা তার বক্তব্য শুরু করলেন।
শুরুতে তিনি জাপানী ভাষায় সম্বোধন করলে মন্চের সবাই হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান।জাপানী পর্বটি আরেকটু সংক্ষিপ্ত হলে প্রধানমন্ত্রী তার সহজবাগ্নিতায় আরও সুন্দরভাবে উপস্হাপন করতে পারতেন বলে আমার ধারনা।
পূর্ব নির্ধারিত ১০-৩০ থেকে ১১-০০ টা পর্যন্ত শেখ হাসিনার ভাষণের সূচনাপর্বে ৭-৮ মিনিট বিলম্ব হওয়ায় বক্তব্য শেষে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর পর্বটি করা হয়নি.তবে সঞ্চালকের প্রশ্নের জবাব পর্বটি ছিল।
প্রধানমন্ত্রী নিজেও দর্শকদের প্রশ্ন আশা করেছিলেন বলে মনে হচ্ছিল কেননা তাকে সহযোগিতা করতে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা মঞ্চে এসে আসন গ্রহন করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত এশিয়া গড়ে তোলার লক্ষে পাঁচটি ধারণা পেশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায়। যা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্ববাসীর জন্য একটি উদাহারণ হতে পারে।
এশিয়ার নেতৃবৃন্দের সামনে একটি সমৃদ্ধ এশিয়া গড়ে তোলার জন্য পাঁচটি ধারণা উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে বাস্তবে রূপদান করতে সরকার হিসেবে আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করেছি এবং এ সম্পর্কে আপনাদের অভিমত ব্যক্ত করার জন্য এখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
প্রথম ধারণায় তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং সংঘাতে পরিপূর্ণ।
তাই, আমাদের বৃহত উদারতায় বিশ্বকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করা প্রয়োজন, বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জগুলো যৌথভাবে মোকাবেলা করা, স্বচ্ছতা ও ন্যায় বিচার সুরক্ষা করা এবং উদ্ভাবনী ধারনা এবং পদক্ষেপের ব্যবহার করে সহযোগিতার নতুন উদ্দীপনা জোরদার করা।
প্রধানমন্ত্রী তার দ্বিতীয় ধারনায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, 'দলগত কর্মকান্ডকে অতিক্রম করে অর্থনীতিকে উদ্ভাবনী চর্চার মধ্যদিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সম্মানের উপর ভিত্তি করে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে হবে, জনগণের লাভের জন্য এবং সাধারণ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সকলের জন্য সমান সুবিধাজনক কৌশল গ্রহণ করতে হবে।'
তৃতীয় ধারণায় তিনি আরো বলেন, এশীয় দেশগুলোকে খোলা মন নিয়ে পরস্পরের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে, অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে, সমতা, অংশীদারিত্ব এবং যৌথ অনুদানের ভিত্তিতে।
চতুর্থ ধারণায় শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক ধারাবাহিকতা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবার জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে টেকসই এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়নের ওপর এশিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, আমাদের সংঘবদ্ধভাবে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে। সে জন্য আমরা একটি গোত্রবদ্ধ হয়ে দলগত ভাবে বিশ্ব শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি, যার লক্ষ্য হবে একটি বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর যথাযথ অধিকার এবং স্বার্থকে সংরক্ষণ করা।
যোগাযোগ সম্পসারণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা যোগাযোগ ব্যবস্থারই একটি গতিশীলতা যেটি বিশ্বজুড়ে শান্তি এবং সমৃদ্ধির ভিত রচনা করেছে। অবকাঠামো, মুক্ত বাণিজ্য এবং সহজ বিনিয়োগ এশিয়ার উন্নয়নের ভিত্তি ।
করতালীর মাধ্যমে তার বক্তৃতা পর্ব শেষ হয়।

হাসিনা সরকার বিরোধী প্রতিবাদ
 


এ সময় হোটেলের গেটের উল্টোদিকে হিবিয়া পার্কের গেটে জাপান পুলিশের কঠোর নিয়ন্ত্রনে জাপান বি এন পি ও সরকারবিরোধী সদস্যদের আয়োজিত হাসিনাবিরোধী শ্লোগান হচ্ছিল যা আমরা লাইভ দেখতে পারি।
কনফারেন্সের তৃতীয় বক্তার বক্তব্য শুরুর আগের বিরতিতে কৌতূহল নিয়ে সেখানে গেলে আমি বি এন পির কজন সদস্যকে দেখতে পারি,তারা জানান পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে তার প্রতিবাদ করেছে। একই স্হানে তখন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুনসেনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছিল।

অব্যাবস্থাপনা
——————
কনফারেন্সের প্রথম দিন দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে শেখ হাসিনার মঞ্চে আরোহনের আগ মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রীর সংগের ডেলিগেটদের বসার ব্যাবস্থায় কিছুটা অব্যাবস্থা চোখে পড়েছে। মঞ্চের একেবারে সামনের তিনটি সারি তাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকলেও প্রয়োজনীয় গাইডের অভাবে ইতস্তত তারা বসে পড়েছিলেন,এমনকি দর্শকদের শেষ সারিতে আমি নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের বসে থাকতে দেখেছি। পরে অবশ্য দূতাবাসের জনাব জিয়াউল ও জনাব হাসান আরিফের তৎপরতায় তারা প্রথম দিকের নির্দিষ্ট আসনে বসেছিলেন। ক্রম অনুযায়ী আসন বিন্যাস না থাকায় হাইপ্রোফাইল কেউ কেউ অসন্তুষ্ট হচ্ছিলেন বলে মনে হয়েছে।

দৃষ্টিকটু সেলফি
——————-
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্চে আগমন ও প্রস্থানের সময় নেতৃর সাথে একটা সেলফি তোলায় মরিয়া কোন কোন নেতা(!) ও ক্যামেরা সাংবাদিকের(!) তৎপরতা ছিল লজ্জাজনক ও দৃষ্টিকটু। জাপানী ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীরা যে প্রক্রিয়ায় তাদের বিরত করেছেন তা দেখে নিজেই লজ্জা পেয়েছি।


দূতাবাসের অনধিকার চর্চা
—————————-
নিক্কেই আয়োজিত দুদিনব্যাপী এই কনফারেন্স মিডিয়া কভারের জন্য আমি আমন্ত্রণ পাই। ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনবারের জাপান সফরকালীন সময়ে (আবে শিনযোর আমলে দু'বার ও কান নাওতোর সাথে একবার ) চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠা কভার করার সুযোগ হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী ও মহাথির মোহাম্মদের মুল্যবান বক্তব্য শুনবো বলে আমি প্রথমদিন উপস্হিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। প্রেস কার্ড নেয়ার সময় নিক্কেই কর্মকর্তা জানালেন,বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আপনার বিষয়ে মৃদু আপত্তি জানানো হয়েছিলো । দূতাবাসের'কে আপত্তি জানিয়েছিল জানতে চাইলে নিক্কেই কতৃপক্ষ টেলিফোনে দূতাবাসের জাপানী স্টাফকে আমার সামনে ডেকে আনেন তিনি আমার প্রশ্নের জবাব দিতে না পেরে তার ফোন থেকে দূতাবাসের জনাব বেলালের সাথে সংযোগ করে কথা বলতে বলেন। বেলাল সাহেবকে আমি স্পস্ট জানিয়েদেই নিক্কেই আয়োজিত অনুষ্ঠানে দূতাবাসের আমার ব্যাপারে আপত্তি জানানের এখতিয়ার আছে কিনা। তিনি অবশ্য দায়িত্ব অস্বীকার করেন। যদিও জাপানী স্টাফের কথা ও তার ফোনে বেলাল সাহেবকে সংযোগ করিয়ে দেয়া প্রমান করে তিনি সত্য বলছেন না। দুতাবাসের এই অনধিকার চর্চার আমি প্রতিবাদ করি।


 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]