প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

রহস্যজনক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে নিয়ে প্রবাসীদের কৌতুহল

 

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। জুন ৭, ২০১৯ ।।

একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পোস্টার কে কেন্দ্র করে জাপান প্রবাসীদের মধ্যে তীব্র কানাঘুষা শুরু হয়েছে । আগামী ১৬ জুন ২০১৯ রোববার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর ঘোষণা দিয়ে একটি পোস্টার প্রচার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ।

জাপান প্রবাসীদের রীতি অনুযায়ী কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে স্থানীয় পোর্টাল গুলোতে প্রচার সহ বেশ আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম , ভাইবার , লাইন সহ বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচার করা হয়ে থাকে । কিন্তু আগামী ১৬ জুনের আয়োজনটির খবর কোন মাধ্যমেই তা প্রকাশিত হয়নি। অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথেই তা সম্পন্ন করা হয় ।

বাংলাদেশ-জাপান ফ্রেন্ডশিপ এর ব্যানারে আয়োজনে পোস্টারটি বিগত দিনে জাপান প্রবাসীদের আয়োজনের সাথে কোন ভাবে মিল করা যায় না। কিছুটা দৃষ্টিকটুও বটে ।

অনুসন্ধানে জানা যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে জাপানে আদম আনার রমরমা ব্যবসা করার প্রয়াসে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে জাপানে ২২ জন শিল্পী আনার জন্য কর্ম সম্পন্ন করা হয়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন জাপানে প্রবেশ ও করেছেন । আজ–কালের মধ্যে আরো কয়েকজন আসার পথে ।

পোস্টারটিতে ইতোপূর্বে জাপানে আসা গায়িকা কনার ছবি স্থান পেলেও গায়িকা কনা তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারন , জাপানের বিষয়টি পূর্ব থেকেই জানা বিধায় তিনি যথেষ্ট সন্দিহান ছিলেন।

এর আগেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে জাপানে আদম পাচার কেলেঙ্কারি ঘটেছে। বাংলাদেশ থেকে ভিসা সংগ্রহের পরও অনেক নামীদামি শিল্পীকে জাপানের বিমানবন্দর থেকে অভিবাসন বিভাগের নজরদারিতে পড়ে নকুল বিশ্বাস, বেবী নাজনীন, মমতাজ বেগম কিংবা হানিফ সংকেতের মতো প্রতিথযশা ব্যক্তিকেও হয় ফেরত যেতে হয়েছে নতুবা নাজেহাল হতে হয়েছে নজরদারির কারণে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় ২০১৪ সালে এবং ২০১৫ সালে একই দুষ্ট চক্র জাপানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে আদম পাচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন । ডিসেম্বর ২০১৪ সালে ৫২ জন আদম এনেছিলেন যার মধ্যে ৪০ জন ই ছিলেন ভুয়া । বিভিন্ন কাগজ পত্র তৈরি করে তাদের আনা হয়েছিল ।

এরপর ২০১৫ সালে ১১ ও ১২ এপ্রিল একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ১৭১ জন শিল্পী কলাকুশলী আনার উদ্যোগ নিলে তা ভেস্তে যায়।

মাছরাঙা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবুর একটি অনুসন্ধানী সাহসী এবং সময়োপযোগী প্রতিবেদন প্রচারিত হয় ২২ মার্চ ২০১৫।

মাছরাঙা টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাপানে 'স্বাধীনতা দিবস কনসার্ট ২০১৫' নামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংস্কৃতি প্রতিনিধি দল জাপান আগমনের কাজটি প্রায় সম্পন্ন করে এনেছিল একটি মহল। আর এই ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের মধ্যে শিল্পী, কলাকুশলী এবং যন্ত্রী মিলে সর্বসাকুল্যে মাত্র ৩০ জন। আর বাকি ১৪১ জনই হলো আদম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নামে এই আদম পাচারে প্রতিজন আদম থেকে নেয়া হয়েছে গড়ে ১৫ লাখ টাকা করে। আর বিশাল অঙ্কের এই টাকার ভাগ প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, শিল্পী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং দেশের স্বনামধন্য একজন ক্রিকেটার ও জাপানের একজন দালালসহ অনেকে।

গত ১১ ও ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয়ভাবে একটি হলও ভাড়া নেয়া হয় এবং ১৭১ জন সদস্যের থাকার জন্য স্থানীয়ভাবে জাপানে হোটেল ইম্পেরিয়াল বুকিং দেয়া হয়। বিশাল এই আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি 'ফেয়িস্টা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড' নামক একটি কোম্পানি। যার চেয়ারম্যান হলেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক নকিব চৌধুরী। এই নকিব চৌধুরী জাপানের একজন দালাল ইয়োশিমাসা নিনোমিয়া যিনি নিজেকে চিওদা পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক সোসাইটির চেয়ারম্যান দাবি করেন, তার সঙ্গে ভাগ বাটোয়ারার মাধ্যমে আদম পাচারের মতো কাজের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান। প্রবাসী দালাল হিসেবে নেওয়াজ শরীফ এর নামটি তখন প্রচার পেতে থাকে । যদিও নেওয়াজ শরীফ তখন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন, মাছরাঙা টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাদের কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ হয়ত এই কাজটি করিয়েছেন। অথবা প্রতিবেদক কারও প্ররোচনায় বা অর্থের বিনিময়ে কাজটি করেছেন। আমরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখেই সবকিছু করি। খুব শীঘ্রই আপনি তা দেখতে পাবেন। আমরা কাজে তার প্রমাণ দেখিয়ে দেব।

এবারের আয়োজনেও সেই একই নাম জড়িয়ে আছে । তার সাথে যোগ হয়েছে আরো কিছু রাজনৈতিক নেতা । আদম এনে রাজনৈতিক হামলার শিকার হয়ে দেশ ত্যাগ করে এসেছেন এবং রিফিউজি ভিসায় আবেদন তাদের দিয়ে করানো হয় । নিজেদের কর্মীদেরই তারা ভুক্তভোগী সাজিয়ে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে এসব আবেদন জানানো হয়ে থাকে ।

এ ব্যাপারে নেওয়াজ শরীফের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি ।

কানাগাওয়া কেন এর সাগামীহারাবাসী প্রবাসীরা শুক্রবার মসজিদে জুম্মা নামাজ আদায় করতে গেলে বিষয়টি প্রথম অবগত হয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ।

জাপান প্রবাসীরা মনে করেন জাপানে প্রতিদিন অনুষ্ঠান হোক, দেশ থেকেও নামীদামি শিল্পী আসুক, এটা তাদের বাড়তি পাওয়া। একদিকে অনুষ্ঠান উপভোগ অপরদিকে শিল্পীদের সান্নিধ্য এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি পাওয়ার মতো। কিন্তু কোনোরূপ অনুষ্ঠানের আয়োজন না করে কিংবা নামকা ওয়াস্তে অনুষ্ঠানের নাম করে শিল্পী আনার নামে আদম পাচার কোনোভাবেই গ্রহণীয় নয়। কিছুতেই তা মেনে নেয়া যায় না। এতে করে এতদিন গড়ে ওঠা ভাবমূর্তি তো নষ্ট হবেই, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যারা সত্যিকারের আয়োজন করবেন তাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে শিল্পীদের ভিসা পাওয়ার বিষয়টি। জাপান প্রবাসীরাও বঞ্চিত হবে বিনোদন থেকে।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]