প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামত সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

জাপান বিএনপি'র প্রতিবাদ প্রতিহতের অপচেষ্টা

 

 

জাপানের প্রভাবশালী দৈনিক নিক্কেই শিম্বুন আয়োজিত 'এশিয়ার ভবিষ্যৎ' শিরোনামের এক আন্তর্জাতিক ফোরামে অন্যতম বক্তা হিসেবে যোগদানের জন্য তাদের আমন্ত্রনে সম্প্রতি জাপান সফর করে গেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ফোরামে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন মালয়েশিয়ার প্রধান মন্ত্রী ডঃ মাহথির মাহমুদ।

২৮মে থেকে ৩১ মে '১৯ তিন দিন ব্যাপী সফরে আন্তর্জাতিক ফোরামে যোগদান ছাড়াও জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনযো'র সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক , ব্যাবসায়ীদের সাথে বৈঠক , ২০১৬ সালে ঢাকার হোলি আর্টিজানে নিহতদের স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ এবং বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় অংশ গ্রহন সহ ব্যস্ততম সময় কাটান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

এসব সংবাদ সবাই জেনেছেন। যা জানেননি এমন দু-একটি বিষয় উল্লেখ করছি।

টোকিওস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস প্রধানমন্ত্রীর সন্মানে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাপান প্রবাসী সংবাদকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পঞ্চমবারের মতো জাপান সফরের আরও একটি ঘটনার কথা বলি। ঘটনাটি ঘটিয়েছেন আওয়ামীলীগ নামধারী কয়েকজন। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের একজন এবং আরেকজন জাপান আওয়ামীলীগের স্বঘোষিত নেতা।

৩০মে ছিল হোটেল ইম্পেরিয়াল-এ নিক্কেই শিম্বুন আয়োজিত 'এশিয়ার ভবিষ্যৎ'শীর্ষক ফোরামে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রদানের নির্দিষ্ট দিন ও সময়। ডঃ মাহথির মাহমুদের পর ছিল শেখ হাসিনার বক্তব্যের পালা ।

প্রতিবাদ জানানোর জন্য জাপান বিএনপি এই সময়টাকেই মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেয়। জাপান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে হোটেল প্রাঙ্গনের রাস্তায় শেখ হাসিনার প্রবেশ পথে মুখে কালো কাপড়, বিভিন্ন প্লাকেড ,ফেস্টুন এবং ব্যানার নিয়ে অবস্থান করে। বিএনপির বিবাদমান দুইটি গ্রুপ ই ভিন্ন ভিন্ন অনুমোদন পায়। সাধারন সম্পাদক মীর রেজাউল করীম রেজার নেতৃত্বে মূল দলটি সকাল ৯ টা থেকে ১০টা এবং মোঃ নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে অন্য গ্রুপটি সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়ানোর অনুমতি পায়।

মত পার্থক্য থাকলেও উদ্দেশ্য এবং আদর্শ এক ও অভিন্ন হওয়ায় উভয় গ্রুপ এক হয়ে জাপান পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ে প্রায় ১৫০ জনের মতো নেতা কর্মী হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে জাপানী ও ইংরেজী ভাষায় বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে।

বিএনপির প্রতিবাদ প্রতিহত করতে এগিয়ে আসে স্বঘোষিত স্থানীয় এক নেতা সমমনা কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে। যারা জাপান আওয়ামীলীগের মূল দলের কেউ নয়। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের থেকে ব্যানার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। অশালীন ভাষা ব্যবহার করতে থাকে।

যা জাপান আইনে সন্ত্রাস হিসেবে দেখা হয়। তারা জাপান পুলিশকে বাংলাদেশী পুলিশ এবং জাপান কে বাংলাদেশ ভেবে ভুল করে বসেন। হয়তো তারা মনে করেছিলেন তাদের এই আগ্রাসনে পুলিশ তাদের সহযোগিতা করবে । যেমনটি বাংলাদেশে করে থাকে। এছাড়া তাদের শারীরীক অঙ্গভঙ্গি, বচন ব্যবহার সবই ছিল দৃষ্টিকটু। বাংলাদেশে এসব ভাষা ব্যবহার স্বাভাবিক হলেও জাপানে যা সম্পূর্ণ অশোভন। একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেন এবং পূর্ব অনুমতি না থাকায় আগ্রাসীদের স্থান ত্যাগে বাধ্য করে জাপান পুলিশ । বিএনপি প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে।

জাপানে পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব জাপান পুলিশ দিয়ে থাকে। সেটা প্রধানমন্ত্রী আবের উপস্থিতিতে এবং আবের বিপক্ষে গেলেও। এটাই নিয়ম। কারন পুলিশ জনগনের , সবার ।

আওয়ামী নামধারী গ্রুপটির দাবী অনুযায়ী তারা যদি প্রতিহত করতে না যেতো তাহলে বিএনপির লোকেরা নাকি নেত্রীর ( শেখ হাসিনা ) গাড়ীতে পচা ডিম ছুঁড়তো যা তাদের জন্য এবং শেখ হাসিনার জন্য বিব্রতকর হ'তো।

তিন বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে থাকা জাপান দ্বারা আরোপিত জাপানীদের ভ্রমণ সতর্কতা রয়েছে বাংলাদেশে। জাপান এই সতর্কতার মাত্রা বৃদ্ধি করেছিল ২০১৫ সালে দেশের উত্তরাঞ্চলে এক জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও নিহত হওয়ার পর থেকে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকায় হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী ঘটনার পর এই নিষেধাজ্ঞা অনেকটা যেন স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের ওপর বসে গেছে। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশে যাওয়ার বিষয়ে জাপানি নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করে এবং বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগে বড় অন্তরায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে এই সতর্কতা তুলে নেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন সেখানে এই জাতীয় আগ্রাসী ভুমিকা কতোটুকু সহায়তা হবে ? এছাড়া বিএনপি বরাবরই দাবী করে আসছে বাংলাদেশে তারা কোন কথা বলতে পারছে না, দাবী জানানোর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে পারছে না, আওয়ামী নাম ধারীদের ওই দিনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কি বিএনপির দাবীর যৌক্তিকতা কি প্রমান করে না ? তাদের এই কর্মকাণ্ডে বিএনপি জাপান পুলিশ , সরকার এবং জাপানী জনগণকে তাদের দাবীর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে সেদিন।

কি প্রয়োজন ছিল প্রতিহত করার নামে তাদের এই আগ্রাসী ভুমিকার ? বিএনপির ওই কর্মসূচীর কারনে ফোরামে যোগ দেয়া , বক্তব্য রাখা কিংবা শেখ হাসিনার জাপান সফরে কোন সমস্যা ছিল না।

বিএনপির ওই কর্মসূচী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা এস,এস,এফ এর সাথেও দেন দরবার হয়েছে। মূলধারার আওয়ামীলীগ থেকেও প্রবাসে এধরনের কর্মসূচী পালন করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট না করার জন্য বিএনপিকে বলা হয়েছিল। স্মারক লিপি দিতে বলা হয়েছিল এস,এস,এফ এর পক্ষ থেকে। বিএনপি শুনেনি । দেশে থাকা আত্মীয় স্বজনদের নিরাপত্তার কথাটিও ভেবে দেখতে বলা হয়েছিল। তাতেও কাজ হয়নি।

এমনিভাবে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাপান সফর করেছিলেন তখন আওয়ামীলীগ ও মুখে কালো কাপড় বেধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তখন তাদের দাবী ছিল স্মারক লিপি পেশ করার সুযোগ দেয়ার। কিন্তু বিএনপির নেতারা সে দাবী না মানায় আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে ।

আর ২০১৯ সালে আওয়ামীলীগ এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল স্মারক লিপি দেয়ার সুযোগ নিতে । বিএনপি তাতে কর্ণপাত না করে প্রতিবাদ জানিয়েছে । তবে , নিয়মাতান্ত্রিক ভাবে । আর সেখানে কিছু সংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পুরো জাতীর মাথা নত হয়েছে ৩০মে টোকিওর হিবিয়া পার্কে । শুধুই কি জাপানীরা তা দেখেছে বা জেনেছে ? জেনেছে বিশ্ববাসী । কারন আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণ ছাড়াও হিবিয়া পার্কে অভিবাসীদের পদচারনা এবং বিশ্ব মিডিয়ার নজর সর্বদা এমনিতেই থাকে । এর দায়ভার কার ?

উল্লেখ্য, জাপানে আওয়ামী লীগের স্বীকৃত সংগঠন ও নেতাকর্মী আছেন। তারা এই অপকর্মে শরিক হননি।

আগামীতে ৯টি দেশ থেকে প্রায় ৩,৫০,০০০ শ্রমিক জাপানে আনা হবে। প্রাথমিকভাবে সেখানে বাংলাদেশের নামটি নেই । বাংলাদেশ সরকার , টোকিও দুতাবাস এবং ব্যাক্তিগত ভাবেও অনেকে বিভিন্ন চেষ্টা তদবীর করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের নামটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। সেখানে এই সমস্ত কর্ম কাণ্ড অন্তরায় হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

আওয়ামীলীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক থেকে এইসব সুবিধাবাদীদের দমানোয় ভুমিকা না নিতে পারলে সরকারের ভালো কাজ গুলো ধামাচাপা পড়ে যাবে এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে ।।

তথ্য সুত্র ; উভয় দল থেকে প্রচারিত লাইভ শো , ফেইস বুক , আন্তর্জাল ।
ছবি – ফেইস বুক থেকে ।

rahmanmoni@gmail.com

২০ জুন ২০১৯ সাপ্তাহিক –এ প্রকাশিত

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]