|
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড কাহিনীঃ -(২)
৭০
থেকে শুরু করে ৯০ এর দশক পর্যন্ত বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়েছিলেন কুখ্যাত সব
সন্ত্রাসী। রূপকথার মতো এসব কিছু সন্ত্রাসীদের ইতিহাস
কমিউনিটি নিউজের পাঠকদের জন্যে পুনরায় সামনে তুলে ধরা
হচ্ছে। এখানে প্রকাশিত লেখা গুলি "বাংলাদেশ প্রতিদিন" এ প্রকাশিত হয়েছিলো।
গান আর খুন, দুই-ই ছিল
গাল কাটা কামালের কাজ
ছোটখাটো যুবকটি প্রাণপণ ছুটছেন। শার্ট-প্যান্ট পরা। পায়ে কালো হিল সু। তাকে
ধাওয়া করছে পুলিশের তিনটি পিকআপ। পিকআপে জনা বিশেক সশস্ত্র পুলিশ। হঠাৎ যুবকটি
বড় রাস্তা ছেড়ে সরু গলিতে ঢুকে পড়ল। পিকআপ ঢুকতে পারল না। থেমে গেল। পিকআপ ছেড়ে
পুলিশ দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু যুবকটি ছুটতে গিয়ে কানা গলিতে আটকে যায়। চোখের
সামনে তার বিশাল এক প্রাচীর! ধরা দিতেই হবে তাকে। পুলিশও খুশি। কিন্তু সবাইকে
অবাক করে দিয়ে যুবকটি সেই প্রাচীর টপকে অপরপাশে লাফিয়ে পড়ল! কিংকর্তব্যবিমূঢ়
পুলিশের কেউ কেউ প্রাচীর টপকে তার পিছু নিল। কেউ আবার ভিন্ন পথে অগ্রসর হলো।
যুবকটি আধাঘণ্টা দৌড়ে এভাবে একে একে ১১টি দেয়াল টপকালেন। শেষ দেয়ালটি টপকানোর
সময় তার জুতার হিল ভেঙে যায়। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পুলিশ তাকে ধরে ফেলে।
এটি ইংরেজি বা বাংলা কোনো চলচ্চিত্রের খণ্ডিত চিত্র বা কোনো কাল্পনিক গল্প নয়।
১৯৮২ সালের জানুয়ারির শীতের এক সকালে এমনই এক শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয় ঘটনার অবতারণা
হয়েছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাচ্ছিলেন দুর্ধর্ষ কামাল, গালকাটা কামাল। এফডিসি
থেকে বেরিয়ে ট্রাকস্ট্যান্ড হয়ে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় যাওয়ার সময় পুলিশ তাকে
ধাওয়া করে। একে একে ১১টি দেয়াল টপকেও শেষ রক্ষা হয়নি। ধরা তাকে পড়তেই হয়েছিল
পুলিশের কাছে। পুরো নাম আবুল হাসনাত কামাল। পুরান ঢাকার একটি বৈঠকে কামালের
সঙ্গে হাতাহাতি, পরে ভাঙা বোতলের আঘাত। সেই আঘাতেই কামালের চিবুকে বড় ক্ষতের
দাগ। তখন থেকেই তিনি হলেন ‘গালকাটা’ কামাল। আর এই গালকাটা কামাল নামটিই হয়ে ওঠে
পরবর্তীতে সন্ত্রাসের মূর্তপ্রতীক। কামাল গান গাইতেন, শেখাতেনও। যে হাতে তিনি
হারমোনিয়ামে সুর তুলতেন, সেই হাতেই তিনি অস্ত্র চালাতেন। লাশ ফেলতেন। কখনো নিজ
প্রয়োজনে, কখনো ভাড়াটে হয়ে। প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে গুলি করে খুন করতে যেমন
ছিলেন পারদর্শী, তেমনি ধারালো অস্ত্রের ব্যবহারে দেহ থেকে মাথা আলাদা করতেও
ছিলেন সিদ্ধহস্ত। খুনের নেশায় মত্ত এই মানুষটির ভয়াবহ সব কর্মকাণ্ডে কাঁপতো ঢাকা
শহর। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মতো সেই দানবে রূপ নেওয়া গালকাটা
কামালের অপরাধ জীবনের ইতি ঘটে কারাগারের দেয়ালের আড়ালের ফাঁসির দড়িতে। ১৯৭৪ সালে
গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা কলেজ ছাত্র কামালের নাম-ডাক খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে
পড়ে। গালকাটা কামালের অপরাধ জীবন সম্পর্কে জানতে এই প্রতিবেদক কামালের ঘনিষ্ঠ
সূত্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাদের বক্তব্যে প্রায় ৩৭ বছর আগেকার
কামালের অপরাধ জীবনের নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। কামালের ঘনিষ্ঠ ওই
সূত্রগুলো জানায়, ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন গালকাটা কামাল।
কখনো মোটরসাইকেলে, কখনো জিপে করে। দাপিয়ে বেড়াতেন ঢাকার এ মাথা থেকে ও মাথা।
একাই খুন করতে পছন্দ করতেন তিনি। একে একে খুন করে গেছেন, কিন্তু তাকে খুন করার
সাহস দেখায়নি কেউ। যে কারণে ‘খুনের বদলা খুন’- আন্ডার ওয়ার্ল্ডের এই নীতিও ধোপে
টিকেনি তার অসীম সাহসিকতার কারণে। এক সময়ে এই গালকাটা কামালের নাম ছড়িয়ে পড়ে
রাজধানীজুড়ে। পুলিশের খাতায় তিনি মোস্ট ওয়ান্টেড। এরপরও তিনি কোমরের দুপাশে দুটি
পিস্তল গুঁজে বুক চিতিয়ে চলাফেরা করতেন। সরকারের রেড কার্ডধারী এই দুর্ধর্ষ
অপরাধী এক সময় হয়ে ওঠেন ‘ঢাকার ডন’। ১৯৭৪ সাল থেকে ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের
নিয়ন্ত্রক গালকাটা কামালের হাতে একজন এমপি, যুবদলের জাফর, ফিরোজ, রানাসহ অসংখ্য
খুনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি এতটাই প্রতিশোধপরায়ণ ছিলেন যে, তার প্রতিপক্ষ
সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই ছাত্রনেতার বাসা লক্ষ্য করে প্রতিদিন নিয়ম করে চার
রাউন্ড করে গুলি ছুড়তেন। পুলিশ বা অবৈধ অস্ত্রধারী কেউ তাকে এই গুলিবর্ষণ থেকে
বিরত রাখতে পারেনি। দিনের কোনো না কোনো এক সময় তিনি নিজেই গুলি করে চলে আসতেন।
তাকে ঠেকানোর পরিস্থিতি সে সময়ে কারও ছিল না। ফরিদপুরের করণগোলার কার্তিকপুর
কামালের গ্রামের বাড়ি। ঢাকায় এসে প্রথমে মোহাম্মদপুর সৈয়দ নজরুল ইসলাম রোডে
খালার বাসায় থাকতেন। পরে গোপীবাগের অভয় দাস লেনে তার বাসা ছিল। বিয়ের পর তিনি
গেণ্ডারিয়াতেও ছিলেন। কামালের বাবা আবুল হোসেন খান, যিনি প্রথমে পুলিশে চাকরি
করতেন। পরবর্তীতে ব্যবসা ও হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার। কামালরা ছিলেন দুই বোন, তিন
ভাই। তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান। ভাইদের মধ্যে বড়। তার পরিবারের সবাই ছিলেন সংগীত
শিল্পী। কামাল নিজেও গান গাইতেন, শেখাতেন। চলচ্চিত্রেও তিনি গান গাইতেন।
সূত্রগুলো জানায়, ‘৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল নবম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
ভারতের বাগাবাড়িতে ট্রেনিং নিয়ে স্থানীয় মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার মতিনের নেতৃত্বে
কামাল যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর ১৯৭৩ সালে ডামুড্যা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন।
এ সময় কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রশ্নে পারিবারিক অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়তে থাকেন কামাল। ওই সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল হক খুন
হন। পুলিশি তদন্তে পাওয়া যায়, এই খুনের নেপথ্যে ছিলেন নূরুল হকের রাজনৈতিক
প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদের এক নেতা। ওই নেতাই ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে নৃশংস
হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটান। আর ভাড়াটে খুনি ছিলেন গালকাটা কামাল। কিন্তু জাসদের ওই
নেতা প্রতিশ্রুতি মতো টাকা পরিশোধ না করায় কামালের সঙ্গে তার নতুন করে দ্বন্দ্ব
বাধে। কিন্তু এরই মধ্যে কামাল গ্রেফতার হন নুরুল হক খুনের মামলায়। পরে কামালের
মা ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে ছোটাছুটি করে কামালকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনেন। এর
কয়েকদিন পরই অর্থাৎ নুরুল হক খুন হওয়ার ১৭ দিনের মাথায় কামালের বাবা আবুল হোসেন
মারা যান। ভাইদের মধ্যে বড় হওয়ায় পরিবারের দায়-দায়িত্ব চলে আসে কামালের ওপর।
’৭৪ সালে কিছু করার মানসিকতা নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন কামাল। ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে।
ওই সময়ে কামালের এক আত্মীয় তৎকালীন পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সেই সুবাদে
কামাল একটি গোয়েন্দা বিভাগের তথ্য সরবরাহকারী হিসেবে চাকরি পান। এই কাজের জন্য
কামালকে একটি মোটরসাইকেলও দেওয়া হয়। কিন্তু অপরাধ জীবনের হাতছানির কারণে ওই
বছরই সেই চাকরি ছেড়ে দেন কামাল। কিন্তু মোটরসাইকেলটি তিনি ফেরত দেননি গোয়েন্দা
সংস্থাকে। এই অভিযোগে পুলিশ কামালকে গ্রেফতার করে। কিছুদিন পর কামাল ছাড়া পান।
১৯৭৫ সালে কামাল বিয়ে করেন খালাতো বোন বিউটিকে। গেণ্ডারিয়ায় বাসা ভাড়া করেন।
কামাল তিন চারজন ছাত্রছাত্রী নিয়ে গানের শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই বছর ১৫ আগস্টে
সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কামালের পরিবর্তিত জীবন শুরু হয়। জগন্নাথ
কলেজের তৎকালীন প্রভাবশালী ছাত্র নেতা হালিমের ছত্রছায়ায় অপরাধ জীবন শুরু করেন
কামাল। মোহাম্মদপুরে তার খালাতো ভাই জামান খুন হন। ওই খুনের পর তিনি চলে যান
পুরান ঢাকায়। ১৯৭৬ সালে ওয়াইজঘাট এলাকার জনৈক নুরু মিয়া সদরঘাট বার্ষিক ইজারা
নিলেন কামালের সহযোগিতায়। এই ইজারা নেওয়াকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী কলেজের
ছাত্র দিলা-মোখলেসের সঙ্গে কামালের দ্বন্দ্ব বাধে। পরে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়।
দ্বন্দ্ব এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে, দেখা মাত্র একে অপরকে গুলি করার পরিস্থিতির
সৃষ্টি হয়েছিল। গালকাটা কামাল তাদের দুজনকে হত্যার নানা পরিকল্পনা করলেও শেষমেশ
তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ক্ষুব্ধ কামাল পুরান ঢাকার ‘আজাদ’ সিনেমা হলের সামনে
দিলা-মোখলেসের বাড়ির সামনে গিয়ে দু’রাউন্ড গুলি ছোড়ে। প্রতিদিন নিয়ম করে
মোটরসাইকেলে করে আসতেন কামাল। কাউবয় স্টাইলে কোমরে গুঁজে রাখা দুটি পিস্তল
দুহাতে নিয়ে দুম দুম করে গুলি করতেন তিনি। ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন হিসাবে
নাম ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে তার ফিল্মি স্টাইলে নানা অপারেশনের কারণে। জিয়াউর
রহমানের আমলে জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠনের পর কামাল যুবদলে যোগদান করেন। তিনি
কোতোয়ালি থানা যুবদলের সভাপতি মনোনীত হন। কামালকে রাজনৈতিকভাবে তখন উপরে তোলেন
বরিশাল অঞ্চলের তৎকালীন বিএনপির এক নেতা। এ পর্যায়ে কামাল তার পরিবার অর্থাৎ মা
ও ভাই-বোনদের ঢাকায় নিয়ে আসেন। অভয় দাস লেনে চিত্রনায়ক বুলবুল আহমেদের বোনের
বাড়ি ভাড়া নেন কামাল।
পল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদল কর্মী ছিলেন জাফর। তিনি ছিলেন অবাঙালি। নয়াপল্টনের
জাফর নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডে এই জাফরের নামডাক ছিল। তৎকালীন
মন্ত্রী আবুল কাশেমের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন এই জাফর। সেই সময়ে মতিঝিল ক্লাবপাড়ার
সবচেয়ে প্রভাবশালী জুয়াড়ি ছিলেন সিরাজ। সারা দেশের অপরাধীদের নিয়ে দেশের
বিভিন্ন জেলায় জুয়ার বোর্ড বসাতেন তিনি। এই সিরাজের সঙ্গে জাফরের কলহ হয় জুয়া
নিয়ে। ক্লাবপাড়ায় শত শত লোকের সামনে সিরাজকে মাটি থেকে থুথু চাটতে বাধ্য
করেছিলেন জাফর। এই অপমান সহ্য করতে পারেননি সিরাজ। জাফরকে হত্যার পরিবল্পনা
আঁটেন তিনি। আর এ জন্য তিনি ভাড়া করেন রাজধানীর তখনকার সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অপরাধী
গালকাটা কামালকে। কামাল ভাড়াটে খুনি হিসেবে জাফরকে হত্যা করেন। এর আগে জাফরকে
অনুসরণ করতে করতে তিনি গুলিস্তান পর্যন্ত যান। কামান পয়েন্টে তিনি জাফরকে গুলি
করেন। শত শত লোকের সামনে জাফরকে গুলি করে নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন কামাল।
ঘটনাস্থলেই জাফরের মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে ওই সিরাজের বিরুদ্ধে ক্লাবপাড়ায় খুনের
অভিযোগ ওঠে। নাসির নামে এক যুবককে হত্যার পর লাশ লুকাতে আজাদ বয়েজ ক্লাবের
ম্যানহোলে ফেলে রেখেছিল সিরাজ। সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার নওয়াবপুর এলাকার
জাতীয়তাবাদী যুবদলের কর্মী ছিলেন ফিরোজ ও রানা। অভয় দাস লেনের প্রামাণিকের সঙ্গে
ফিরোজ-রানার গোলমাল হয়। প্রামাণিক ছিলেন কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আপস মীমাংসার কথা
বলে যাত্রাবাড়ী থেকে ফিরোজ-রানাকে একটি জিপে তুলে নেন কামাল। তাদের নেওয়া হয়
অভয় দাস লেনের শহীদ নবী বিদ্যালয়ের ভিতর। সেখানে ফিরোজ আর রানাকে কামাল জবাই করে
হত্যা করে। হত্যার পর তাদের দেহ আর মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। দুজনের খণ্ডিত লাশ
আবারও জিপে তুলে নেন কামাল ও তার সহযোগীরা। জগন্নাথ কলেজের ভিতরের একটি মাঠে
লাশ ফেলে রাখেন কামাল। এ ঘটনাটি তখন সারা দেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে লাশ
উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে এই জোড়া খুনের ঘটনাই কামালের জীবনের কাল হয়ে
দাঁড়ায়। সূত্র জানায়, ১৯৮২ সালের প্রথম দিকে কামাল চিত্রজগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
তার বন্ধু ফজলুর রশিদ ঢালী ছিলেন ‘রসের বাঈদানী’ ছবির প্রযোজক আর কামাল ছিলেন
এর প্লেব্যাক সিঙ্গার। রসের বাঈদানী ছবির প্রথম দিনের শুটিংয়ের খবর একটি
পত্রিকায় গ্রুপ ছবিসহ প্রকাশিত হয়। ওই ছবিতে কামালও ছিলেন। তখন পুলিশ হন্যে হয়ে
খুঁজছিল কামালকে। পত্রিকায় গ্রুপ ছবি দেখে পুলিশ কামালকে গ্রেফতারের সূত্র খুঁজে
পায়। ঢালীর মোহাম্মদপুরের বাসায় হানা দেয় পুলিশ। তাকে জেরা করে পুলিশ। এক
পর্যায়ে পরদিন যেখানে ঢালীর সঙ্গে দেখা হবে কামালের, সেখানে পুলিশ ওতপেতে থাকে।
পরদিন কামাল এফডিসিতে যান। এফডিসি থেকে বেরিয়ে তেজাগাঁও শিল্প এলাকায় যাওয়া
মাত্র পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এ সময় ১১টি দেয়াল টপকান কামাল। কামালের তথ্য মতে
পুলিশ ওই সময়ে তার বাসা থেকে দুটি রিভলবার উদ্ধার করে। সে সময়ে যুবমন্ত্রী আবুল
কাশেম পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে বলেন, কামালের সঙ্গে যুবদলের কোনো সম্পর্ক নেই।
সামরিক আদালতে জাফর, ফিরোজ ও রানাসহ বেশ কয়েকটি হত্যা মামলায় ফাঁসির রায় হয়।
১৯৮২ সালে সেই ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।
কামালের পরিবারের অভিযোগ : কামালের পারিবারিক সূত্র জানায়, কামালকে যেদিন ফাঁসি
দেওয়া হয়, সেদিনই হঠাৎ জানানো হয়েছে পরিবারের সদস্যদের। কামালের সঙ্গে তার মা
দেখা করতে যান কারাগারে। কামাল এ সময় তাকে দেখে অবাক হন। কামালকে তার মা বলেন,
সে দিনই তার শেষ দিন। তখন কামাল তার মাকে বলেন, এটা হতে পারে না। তাহলে তাকেও
জেলার জানাতেন। বিশ্বাস করতে না পেরে কামাল তার মাকে বলেন, জেলারের সঙ্গে দেখা
করতে। যদি শেষ দিনই হয়, তাহলে তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবেন তার মাকে। এই
কথা শুনে কামালের মা জেলারের কাছে ছুটে যান। জেলার জানান, সে দিনই কামালের ফাঁসি
হবে। তখন কামালের মা তার ছেলের কাছে ফের যেতে চাইলে তাকে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি।
কামালের সেই শেষ কথাটিও তার মায়ের কাছে জানানো হয়নি। না বলাই থেকে গেল মা আর
ছেলের সেই শেষ কথাটি।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|