[প্রথমপাতা]

 

 

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহয্যকারী জাপানি বন্ধুদের সম্মাননা ও সাহিত্য সভা

 

 

কাজী ইনসানুল হক ।। এপ্রিল ২, ২০১৪ ।।

একটি অনুপম আনন্দঘন অনুষ্ঠান। আমাদের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম, জাপান আয়োজিত এই ভিন্নতর অনুষ্ঠানটি এই প্রবাসেও বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেমের অম্লান উদাহরণ হয়ে থাকবে। গত ৩০ মার্চ শিবুইয়া কোরিৎসু কিনরোউ ফুকুশি কাইকানের হলে আমন্ত্রিত জাপানি বন্ধুরা, দূতাবাসের কর্মকর্তা সহ প্রবাসী কমিউনিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রিত অতিথিরা সবাই বাংলাদেশ সরকারের "ফ্রেন্ডস অফ লিবারেশন ওয়ার" এর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পদক প্রাপ্ত। অনুষ্ঠানে তারা নিজেরাই তাদের অভিজ্ঞতার কথা ও প্রবাসীদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

সূচনায় ফোরামের পক্ষে সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক- ফোরাম সভাপতি জুয়েল আহসান কামরুল, উপদেষ্টা মনজুরুল হক, প্রধান অতিধি দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর নূর এ আলম ও জাপানি বন্ধুদের এক এক করে মঞ্চে স্বাগত জানান। পরবর্তীতে অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্যে তিনি জুয়েল আহসান কামরুললে অনুরোধ জানান। সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক আমন্ত্রিত প্রত্যেক অতিথির পরিচয়, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের সহায়তা ও অবদানের বর্ণনা দেন। উল্লেখ্য, সে সময়ের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। তাদের পক্ষে একজনের পূত্র ও একজনের দৌহিত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক নারা'র বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ফোরাম থেকে প্রায় ১২ জন অতিথিকে আমন্ত্রন ও তাদের জন্যে ক্রেস্ট তৈরি করা হয়। অনেকেই টোকিও থেকে দূরে বসবাস করার কারণে, বয়সের ভারে ন্যূয হয়ে যাওয়া অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও আসতে না পারার কারণে দুঃখ প্রকাশ করে তাদের শুভেচ্ছা বানী পাঠান। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে চারজন অথিথি নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। বাকীদের ক্রেস্ট ডাকযোগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সম্মাননা প্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ

 

ওসামু হাইয়াকাওয়াঃ

 


 
বাংলাদেশের পরম বন্ধু জাপান পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য হাইয়াকাওয়ার পূত্র। বঙ্গবন্ধুর অতি ঘনিষ্ঠ ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে জাপান সরকারের সকল সহযোগিতা এসেছে তার হাত ধরে। আমৃত্যু তিনি বাংলাদেশের পাশে ছিলেন। গত বছর তার লেখা জাপানি গ্রন্থ থেকে কাজুহিরো ওয়াতানাবে অনুদিত বাংলাভাষায় গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় "আমার বাংলাদেশ"। প্রকাশক প্রথমা। বইটি পড়লেই বাংলাদেশকে তিনি যে গত গভীর ভাবে ভালোবাসতেন এবং তার দীর্ঘ ২৫ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের নানা দূর্যোগে তার অবদানের কথা জানা যায়।

সম্মাননা গ্রহণ করে পূত্র ওসামু হাইয়াকাওয়া তার পিতার প্রতি এই সম্মান প্রদর্শনের জন্যে গভীর কৃতজ্ঞতা জানান এবং সদ্য প্রয়াত মা'ও বাংলাদেশের কথা সব সময়ে বলতেন বলে জানান। বহুবার তারা বাংলাদেশ সফর করেছিলেন।

 

 

অধ্যাপক কানা তোমিজাওয়াঃ

 



প্রয়াত লেঃ জেনারেল ইওয়াইচি ফুজিওয়ারা ছিলেন জাপান ইম্পেরিয়াল আর্মির জেনারেল, তার পক্ষে তার দৌহিত্রী কানা তোমিজাওয়া সম্মাননা গ্রহণ করেন। জেনারেল ফুজিওয়ারা ৪০ এর দশকে আজাদ হিন্দ ফৌজের সাথে লিয়াঁজোর দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন। নেতাজীর সাথেও তার সরাসরি যোগাযোগ ছিলো। কথিত আছে নেতাজীর জাপানে অবস্থান এবং তার অন্তর্ধানের অনেকটাই তার জানা। ১৯৬৫ সালে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে তিনি জাপান সেলফ ডিফেন্স ফোর্সে যোগদান করেন। এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতি নির্ধারক হিসেবে যোগ্যতার পরিচয় দেন। নেতাজীর সাথে সম্পর্ক থাকায় বাংলাদেশ তার মনে একটা স্থান পায়। তাই আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জাপান সরকারকে বাংলাদেশের পক্ষে মতামত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সামরিক বিষয়ে নানা পরামর্শও দেন।

দাদার পক্ষে সম্মাননা নিতে দাঁড়িয়ে কানা তোমিজাওয়া বলেন, শেখ আহমেদ জালালের বই পড়েই তিনি তার দাদার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন। কাকতলীয় ভাবে তার জন্ম সালটিও ১৯৭১। এই সম্মান পেয়ে আমি আমার সমবয়সী বাংলাদেশকে আরো গভীর ভাবে জানবো।

 

 

হেইজি নাকামুরাঃ

 



প্রফেসর এমেরিটাস হেইজি নাকামুরা তরুণ শিক্ষক হিসেবে এশিয়া ও আফ্রিকা বিষয়ে পড়াশোনা করতেন এবং সামান্য হিন্দি ও উর্দু ভাষা শিখেছিলেন। পত্রিকায় কলাম ও ফিচার লিখতেন আমন্ত্রিত লেখক হয়ে। মধ্য ষাট এর দশকে তিনি অধ্যাপক নারা'র সন্নিধ্যে আসেন এবং বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা সম্পর্কে আগ্রহী হন। '৭১ সালে তিনি প্রফেসর নারার সাথে রাস্তায় রাস্তায় বাংলাদেশের পক্ষে চাঁদা তোলেন। বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে সাধারণ জাপানিদের জনমত গড়তে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। সে সময় তার লেখা অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। সে রকম একটি পুরোনো পত্রিকার কপি অনুষ্ঠানের সবাইকে দেখতে দেন। গত বছর বাংলাদেশে তাকে রাষ্ট্রীয় ভাবে আমন্ত্রন করলে নতুন করে বাংলাদেশ বিষয়ে জানতে পারেন। আমাদের রাজনীতি, সরকারি দল, বিরোধী দল, রানা ট্র্যাজেডি সব বিষয়ে বোঝা যায় তিনি ওয়াকাফিহাল। ১৯৬০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফরের সময়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে তার পরিচয় ও কথাপোকথনের কৌতুহলী বর্ণনা দেন। সবশেষে তিনি বাংলায় বলেন "সোনার বাংলা অমর রহ"।

 

 

কেন আরিমাৎসুঃ

 



মূলত কবি। ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের শক্ত কর্মী। '৭১ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত "মৃত মানুষের মাংস খাচ্ছে একটি কুকুর" ছবিটি দেখে শিহরিত হন এবং বাংলাদেশের প্রতি তার মমত্ববোধ থেকে স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের জন্যে কিছু করতে তৎপর হয়ে ওঠেন। এ সময়ে তিনি অধ্যাপক নারা'র সন্ধান পান তিনি তাকে নিয়েই সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনজন মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক, অজিত বড়ুয়া, আব্দুল ওয়াদুদ ও প্রবীন প্রবাসী আব্দুর রহমান অতিথিদের হাতে স্মারক সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।

অনুষ্ঠানের মূল আলোচনায় অংশ নেন- ড. এরশাদউল্লাহ, ছালেহ মোঃ আরিফ, মোফাজ্জল হোসেন, মীর রেজাউল করিম, কাজী ইনসানুল হক, খন্দকার আসলাম হীরা, আলমগীর হোসেন মিঠু প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সাহিত্য সভায় কবিতা আবৃত্তি করেন মোঃ নাজিম উদ্দিন, কমল বড়ুয়া, মইনুল শাওন, বাকের মাহমুদ, মইনুল ইসলাম মিল্টন, বেলায়েত হোসেন তুহিন, জুয়েল আহসান কামরুল, মনজুরুল হক।

 
 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]