[প্রথমপাতা]

 

 

জাপানি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করুনঃ কানের ভোজ সভায় শেখ হাসিনা
 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। নভেম্বর ৩০, ২০১০ ।।

জাপান সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানি ব্যবসায়ীদের সংগে বৈঠকে মিলিত হন। দেশের ভৌত অবকাঠামো নির্মান ও জনকল্যানমূলক বৃহৎ প্রকল্প যেমন, নতুন বিমান বন্দর, সমুদ্র বন্দর, বিদ্যুত প্রকল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাপানি সহযোগিতা ও বিনিয়োগের আহ্বান জানান। দু'টো আনুষ্ঠানিক বৈঠকেই প্রধামন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাথে অংশিদারত্বের অথবা সরাসরি বিনিয়োগের জন্য জাপানি শিল্পপতির প্রতি আহ্বান জানান। এছাড়াও জাইকা প্রধান সাদাকা ওগাতাও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করলে প্রধানমন্ত্রী জাইকার সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

সন্ধ্যায় জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয়ে জাপানি প্রধানমন্ত্রী নাওতো কানের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন। দু'দেশের পতাকা দিয়ে শোভিত আলোচনা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান। এ সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমদ ও ড. মশিউর রহমান, পুঁজি বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ, এ্যাম্বাসেডর এ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, বীর বাহাদুর এমপি, আওয়ামী লীগ নেতা এম আখতারুজ্জামান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম এ করিম, ইআরডি সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইয়া, পররাষ্ট্র সচিব মুহাম্মদ মিজারুল কায়েস, প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ, এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম মজিবুর রহমান ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

 



অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত মিডিয়ারকর্মীরা ছাড়াও জাপান প্রবাসী সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক, কাজী ইনসানুল হক ও ফটো সাংবাদিক খন্দোকার আনিস উপস্থিত ছিলেন।

তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য জাপানী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন তাঁর সরকার দেশে চমৎকার ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ উদীয়মান অর্থনীতির পরবর্তী এগার (Next Eleven Emerging Economics) হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। আর্থিক মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে।
 


তিনি সোমবার তাঁর সম্মানে জাপানী প্রধানমন্ত্রী নাওতো কানের দেয়া নৈশভোজে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।

জাপানকে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১২ সালে দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপন হবে। জাপানের উদার ও অব্যাহত সহযোগিতা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রধানমন্ত্রী জাপানের অপেক্ষাকৃত কম লাভজনক কলকারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তরের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এ ধরনের বিনিয়োগ দু'দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে জাপানী রফতানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী। সেখানে জাপানে আমাদের পণ্য রফতানির পরিমাণ মাত্র ৩৩০ মিলিয়ন ডলার।



বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, উভয় দেশই বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ, ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র ধ্বংস, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার প্রতি উভয় দেশই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে।

উভয় দেশই এনপিটি এবং সিটিবিটি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী, এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, বোঝাপড়া এবং পরস্পর নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে একটি কৌশলগত জোট তৈরি হতে পারে যা বিশ্বব্যাপী শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে সহায়ক হবে।

জাতিসংঘের সম্প্রসারিত নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পেতে জাপানের দাবি আরো জোরালো হবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাপানের এ ন্যায্য দাবির প্রতি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের ভূমিকা ও চূড়ান্ত বিজয়ের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই বন্ধুত্ব কালের পরিক্রমায় আরো গভীর ও সুদৃঢ় হয়েছে।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তাঁর দল সরকার গঠন করেছে। সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর জনগণের কল্যাণে ও নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। স্থিতিশীল অর্থনীতি, পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং একটি চমৎকার ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে যে চমৎকার সম্পর্ক তা একই ধরনের মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। জাপানী জনগণ, সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের প্রতি অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।


জাপানী জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফর করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার সেই স্মরণীয় সফরের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, জাপানের বর্তমান রাজা ও রানী, তৎকালীন যুবরাজ ও যুবরানী ১৯৭৫ সালের ফেব্র“য়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন।

তাঁর নিজের এটি জাপানে তৃতীয় সফর এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিরায়ত সংস্কৃতি এবং আধুনিক উৎকর্ষের এক অনন্য নিদর্শন জাপান।

তাঁর সফরকালে জাপান সরকারের পক্ষ থেকে যে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা প্রদান করা হয়েছে এ জন্য তিনি ধন্যবাদ প্রদান করেন। তিনি বলেন, আসলে এর মাধ্যমে দুই দেশের এবং জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের গভীরতা এবং আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
 

[প্রথমপাতা]