[প্রথমপাতা]

 

 

 

দ্রোহ ও তারুণ্যের কবি
 

 

ফরিদুল ইসলাম নির্জন

দ্রোহ ও তারুণ্যের কবি হেলাল হাফিজ। দেশের শীর্ষ পাঁচ তারুণ্যে কবির মধ্যে তিনি একজন। সত্যিই তিনি চির তরুণ । তার কবিতা গেঁথে আছে সবার মনে, হৃদয়ে ও মগজে। কবির কাজ কি শুধু কবিতা লেখা? না পাঠকের হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করা। তা বুঝিয়ে দিয়েছেন হেলাল হাফিজ। তার একমাত্র প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। নামকরণের স্বার্থকতায় কবি রাতারাতি খ্যাতি অর্জন করেন। তারপর কবিতা প্রেমী মানুষেরা এক ভিন্ন সত্তা খুঁজে পায়। তাদের মনে ব্যাপক ঝড় তোলে। হৃদয়ের গভীরে নাড়া দেয়। ব্যাপক আলোড়িত হয়, পাঠক নন্দিত হয়। অল্প লিখেই তিনি বিভিন্ন মানুষের নিকট গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে যুক্ত হয় নতুন কবিতা, ভিন্ন আঙিকে। এই তারুণ্যের কবির জন্ম ১৯৪৮ সালে ৭ ই অক্টোবর। ছোটবেলায় মা মারা যায়। তারপর কবি অনেকটাই অগোছালো হয়ে পড়েন। তার বাবা চার বছর পর ২য় বিয়ে করেন। কবির জীবন আরো পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের সংসারে অনেকটাই বিশৃঙখলা সৃষ্টি হয়। শিক্ষা জীবনকাল নেত্রকোনা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়,নেত্রকোনা কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবস্থায় তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘ পূর্বদেশ’ এ সার্বক্ষণিক সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন।
৬৯ এর গণ অভ্যুথান ও ৭১ এর মুক্তিযুদ্ব তাকে তুমুলভাবে নাড়া দেয়। ৬৯ এ গণ অভ্যুথনায়ে রচিত হয় তার ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি। এই কবিতা তাকে দ্রুত খ্যাতি করে তোলে। যৌবনের মুলমন্ত্র তিনি এই কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এই কবিতার দু’টি চরণ হলো-
‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’
কবিতার এই দুটি চরণ দেশের তরুণদের মুখে এখন প্রিন্টিং হয়ে গেছে। সবার ঠোঁটে যেনো প্রিন্ট হয়ে আছে। কেউ বলেন হেলাল হাফিজ তারুণ্যের কবি। কেউ কেউ ক্ষুদা ও দহনের কবি, কষ্টের কবি, দুঃখের কবি, নিঃসঙতার কবি, বিরহ-ব্যথার কবি। যে যত কথা বলুক না কেনো হেলাল হাফিজ একজন তারুণ্যেও মন জয় করার কবি। দুঃখকে তিনি কবিতার মাধ্যমে এতো নিখঁতভাবে একেছেন। যা হয়ত অন্য আর কেউ পারেননি। সহজ ভাষায় মানুষের মনের গভীরে কবিতা ঢুকিয়েছেন। কষ্ট সর্ম্পকে বলতে গিয়ে তার ‘ফেরিওয়ালা’ নামক কবিতায় লিখেছেন,
কষ্ট নেবে কষ্ট/ হরেক রকম কষ্ট আছে/ কষ্ট নেবে কষ্ট।/ লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট/ পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট/ আলোর মাঝে কালোর কষ্ট/ ‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে/ কষ্ট নেবে কষ্ট।
অসাধারণ বিরহগাথা কথাগুলো নিঁখুত ভাবে তুলে ধরেছেন। কষ্ট যে ফেরি করে বেড়ানো যায় তা তিনি কবিতার মাঝে উপস্থাপন করেছেন। মায়ের প্রতি ছিল কবির অগাদ ভালবাসা। মাকে হারিয়ে কবি শৈশব ও কৈশরে অনেকটা এলোমেলো ভাবে জীবন পার করছেন। তাইতো মায়ের স্মৃতি তিনি কখনো ভুলতে পারেননি। মাকে নিয়ে তার কবিতা পড়লে মাহারা সন্তানদের মনে ব্যাপক আবেগ সৃষ্টি করে। মা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে ‘বেদনা বোনওে মত’ কবিতায় লিখেছেন-
‘ জননীর জৈবসারে বর্ধিত বৃক্ষের নিচে/ কাদঁদতাম যখন দাঁড়িয়ে/ সজল শৈশবে, বড়ো সাধ হতো/ আমিও কবর হয়ে যাই/ বহুদিন হলো আমি সেরকম কবর দেখি না/ কবরে র্স্পধিত সেই একই বৃক্ষে আমাকে দেখে না।
মানুষের অনেক ইচ্ছে থাকে। সেই ইচ্ছে পূরুণও হয়ে যায়। তারপরও অনেক কিছুই থেকে যায়। রয়ে যায় অনেক অপূর্ণতা। মনে হয় জীবনে অনেক কিছু হারিয়েছি। এসর্ম্পকে বলতে গিয়ে কবির ‘ইচ্ছে ছিল’ কবিতার শেষ চরণ গুলো এভাবেই বর্ণনা করেছেন-
ইচ্ছে ছিল রাজা হবো/তোমাকে সমজ্ঞী করে সামজ্যে বাড়াবো/আজ দেখি রাজ্য আছে/ইচ্ছে আছে/শুধু তুমি অন্য ঘরে।
কবির এখানেও যেনো বিরহ, এখানেও যেনো নিঃসঙতা। মার্তৃভুমির প্রতি ছিল তার গভীর মায়া। জন্মস্থানকে সে ভুলে থাকতে চাইলেও সে পারেনি। বারবার জন্মভুমি তাকে পিছু ডেকেছে। তার শৈশব, কৈশর এর সব স্মৃতি যেনো সেখানে পড়ে আছে। এসর্ম্পকে তিনি তার জন্মভুমি নেত্রকোনাকে নিয়ে লিখেছেন-
আমাকে কি চিনতে পেরেছো? আমি/ ছিলাম এক আদরের নাগরিক নিকট আত্বীয়/ আমাদের বড় বেশ মাখামাখি ছিলো,/ তারপর কি থেকে কি হলো/ অভাইগ্যা কপাল শুধু বিচ্ছেদের বিষে নীল হলো।
তরুণদের মনে থাকে অনেক ভালবাসা। থাকে পাবার আকুলতা, ব্যকুলতা। প্রিয়জনের জন্য থাকে মনের অস্থিরতা। তার তুমি ডাক দিলে কাবিতায় মাধ্যমে হয়ত তাই প্রকাশ করেছেন।
তুমি ডাক দিলে/নষ্ট কষ্ট সব নিমেষেই ঝেড়ে মুছে/শব্দের অধিক দ্রুত গতিতে পৌঁছুবো/পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব/ পথে এতোটুকু দেরিও করবো না।
এছাড়াও তার অনেক জনপ্রিয় কবিতা রয়েছে। দীর্ঘ ২৫ বছর নীরবতা ভেঙে গত বই মেলায় ‘কবিতা একাত্তর’ নামে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এই কাব্য গ্রন্থে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যর ৫৬ টি এবং নতুন ১৫ টি কবিতা যুক্ত হয়েছে। তাছাড়া সব কবিতাগুলো ইংরেজী অনুবাদ করা হয়েছে। হেলাল হাফিজ বেঁচে থাকুক সবার মনে। চির তরুণ হয়ে রয়ে যাক তার কবিতাগুলো।
সুহৃদ,ঢাকা।


 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের অন্যান্য লেখাঃ

 

>>বৃষ্টির বর্নণা