প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

রসায়নের রসের হাড়ি
 

 

 

- ড. এস, এম, আবে কাউছার

 

 

রসায়নের রসের সুমিষ্ট সুধাসম রসধারা বহুকাল পূর্ব থেকে আজও অবধি বহমান। তাইতো মানুষ ‘রসগ্রাহী’, ‘রসানুরাগী’, ‘রসপ্রেমী’, ‘রসভক্ত’, ‘রসসিক্ত’ এসব টার্ম সামাজিক কথপোকথন এ অহরহ ব্যাবহার করে আসছে। আসলে রসায়নের ‘রসিক’ না হলে রস আহরন করা যায় না। রসায়ন এমন একটা শাখা যা প্রয়োগের মাধ্যমে নতুন বস্তু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এবং এর প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা যায়। রসায়নের অণু পরমাণুর খেলায় মুহুর্তেই যাদুর কাঠিতে রঙ বদলিয়ে যায় এবং তৈরী হয়ে যায় হরেকরকমের নতুন নতুন যৌগ যা থেকে আমরা উপকার-অপকার দুই’ই পেতে পারি।

দেখুন রসায়ন কিভাবে হাসায়!
আপনার কি কখনও হাসি আসে না? না আসলেও সমস্যা নেই। কারণ খুব ভাবগাম্ভীর্য্য কঠিন রস-কস হীন মানুষকেও হাসাতে পারে রাসায়ন। রসায়নের এ বিশেষ রসের নাম ‘হাসি বায়ু’ বা ‘লাফিং গ্যাস’। কথা শুনে হাসবেন না। সত্যি ‘হাসি বায়ু’র প্রভাবে সবাই হাসতে বাধ্য। যদিও এ বায়ুর কোন রং নেই, তবে মৃদু মিষ্টি গন্ধ আছে। এর রাসায়নিক নাম নাইট্রাস অক্সাইড বা সংক্ষেপে
N2O  যা নাইট্রজেনের একটি অক্সাইড।
এ বায়ু নিঃশ্বাসের সাথে নাক দিয়ে অল্প পরিমাণ গ্রহন করলেই হাসির উদ্রেক ঘটে। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যখন এ লাফিং গ্যাস গ্রহণ করা হয় তখন তা রক্তের মাধ্যমে দ্রুত আমাদের মস্তিষ্কে চলে যায় এবং ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায় তবে হিমোগ্লোবিনের সাথে কোনোরকম বন্ধনে জড়ায়না। আর তাই দেহে এর স্থায়িত্ব অল্প সময়ের জন্য হয়। এই নাইট্রাস অক্সাইড মস্তিষ্কে গিয়ে N-methyl-D-aspartate receptor (NMDA রিসেপটর) এ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং একই সাথে Parasympathetic GABA (gamma-aminobutyric acid) রিসেপটরকে উত্তেজিত করে তোলে। এই উত্তেজিত Parasympathetic GABA রিসেপটর কিছু নিউরোট্রন্সমিটার নি:স্বরণ করে যার ফলে মানুষের হাসির উদ্রেক ঘটে।
ক্লোরোর্ফম আবিষ্কারের পূর্বে একে মৃদু চেতনানাশক হিসাবে ব্যবহার করা হতো। এ লাফিং গ্যাস এর কাজ মূলত ব্যাথা কমানো হলেও এটি মানুষের মনে চনমনে ভাব তৈরী করে বলে একে আদর করে নাম দেওয়া হয়েছে ‘লাফিং গ্যাস’। ১৭৭৫ সালে জোসেফ প্রিস্টলী প্রথম এই গ্যাসটি আবিষ্কার করেন এবং স্যার হামফ্রে ডেভীই প্রথম এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সাথে গ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে নাইট্রাস অক্সাইডের সাথে অল্প পরিমাণ অক্সিজেন যুক্ত করে একে নেশাদ্রব্য হিসাবেও ব্যবহার করা হয়। মনে রাখা প্রয়োজন যে এ বায়ু নিঃশ্বাসের সাথে বেশি নিলে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এমনকি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে মৃত্যুও হতে পারে। তবে জানা যায়, ১৭৯৯ সালে ব্রিটেনে লাফিং গ্যাস পার্টির আয়োজন করা হতো। একটা রুমে গ্যাস ভরে তখন উচ্চমধ্যবিত্তরা আনন্দের জন্য হাসহাসি করত, মূলত: মানসিক প্রশান্তির জন্যই। এমনকি বিখ্যাত অভিনেতা চার্লি চাপলিন অভিনিত ‘লাফিং গ্যাস’ নামে সিনেমাও তৈরী হয়েছে।

এবার দেখুন রসায়ন কিভাবে কাঁদায়!
নামই কাঁদানে গ্যাস বা টিয়ার গ্যাস (Tear gas), এতে থাকে কয়েক ধরনের রাসায়নিক যৌগের সংমিশ্রণ। যদিও প্রকৃতপক্ষে এটি কোন গ্যাস নয়। মিহি গুড়ো পাউডার আর তরলের অতি ক্ষুদ্রকণার সমষ্টি নিয়ে এ গ্যাস গঠিত। সিএস (2-chlorobenzalmalononitrile), সিআর (dibenzoxazepine), সিএন (Phenacyl chloride), ওসি (pepper spray-তে ব্যবহৃত হয়), ননিভ্যামাইড, ব্রোমোয়াসিটন, জাইলিল ব্রোমিড, সাইন-প্রোপ্যানেথিয়াল-এস-অক্সাইড (পেঁয়াজ থেকে সংগৃহীত) এসব যৌগের সম্বন্বয়ে টিয়ার গ্যাস তৈরী করা হয়। এটি সাধারণত অ্যারোসল ক্যান-এর রুপে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে ভেতরে থাকা তরল পদার্থটি বের হওয়া মাত্রই স্প্রে-এর মতো করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ স্প্রে-এর প্রভাবে মনুষ্য চক্ষুর কর্নিয়ার স্নায়ুগুলো আক্রান্ত হয় যাতে চোখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। এ কাঁদানে গ্যাস চোখ, নাক, মুখ আর ফুসফুসের মিউকাস মেমব্রেনে গিয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে। ফলে চোখ দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি দেয়া বা কাশির মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। আর মানুষ কাঁদলে ক্লোরোপিকরিন (
Cl3CNO2) নামক এক রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যেতে পারে। বিশ্বজুড়ে পুলিশ মশাই ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারে অত্যধিক পটু যদিও আন্তর্জাতিকভাবে অন্যান্য রাসায়নিক অস্ত্রের ন্যায় কাঁদানে গ্যাসের ব্যবহারও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আরো দেখুন নর-নারীর প্রেম-ভালবাসায়ও রসায়ন!
নর-নারীর প্রেম বা ভালবাসা হলো মস্তিষ্কের থ্যালামাসের একধরনের রাসায়নিক অবস্থার পরিবর্তন। প্রেমের প্রথমদিকে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, গাল-কান লাল হয়ে যাওয়া, হাতের তালু ঘেমে যাওয়া এসব উপসর্গগুলো দেখা যাওয়ার পিছনে দায়ী হলো ডোপামিন (3,4-dihydroxyphenethylamine), নরেপিনেফ্রিন (4-[2-amino-1-hydroxyethyl]benzene-1,2-diol) এই রাসায়নিক পদার্থ নামক হরমোন নিঃসরন।
যাদের মস্তিষ্ক হতে ডোপামিন বেশি নিঃসরন হয় সাধারণত তারা বেশি প্রেম-ভালবাসায় আবেগ আপ্লত হয়। আর এই হরমোন কম নিঃসরন হলে প্রেমে আবেগ কম হয়। তবে কোকেইন, নিকোটিন ইত্যাদি সেবন করেও এই ডোপামিন বেশি নিঃসরন করা যায়। প্রেম-ভালবাসার এই রসায়নে কেবল ডোপামিনই নয় সেই সাথে জড়িত থাকে অক্সিটাইসিন, ভেসোপ্রেসিনসহ আরো নানা হরমোন।

রসায়নের কামড়ে যন্ত্রনাও আছে!
নিশ্চয় কখনো আপনাকে পিপড়ায় কামড় দিয়েছে আর তাতে ব্যাথা অনুভূত হয়েছে। রসায়নই দায়ী। পিপড়ার কামড়ের সময় পিপড়ার লালার সাথে মিথানয়িক এসিড নিঃসৃত হয়। তাই পিপড়ার কামড়ে প্রচণ্ড যন্ত্রনা হয়। আর এ মিথানয়িক এসিডের অপর নাম হচ্ছে ফরমিক এসিড (HCOOH)। ফরমিক এসিডডের কিন্তু নামকরণ করা হয়েছে পিপড়ার ল্যাটিন নাম ফরমিকা থেকেই।

সবই রসায়নের রসের খেলা। চাপাচাপি করলে তা থেকে শ্রাবণের প্রচুর রস বের করা যায়। যা অত্যন্ত স্বাদের। রসায়নের রসের হাড়ি থেকে কেবল একটু রসই নি:সৃত হলো।
 

____________________________________
লেখক: পোস্টডক্টরাল গবেষক, ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান এবং অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । সেপ্টম্বর ২৬, ২০১৫ ।

 
 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]