[প্রথমপাতা]

 

 

 

টোকিওতে 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য এক দেশ বাংলাদেশ' শীর্ষক সময়োপযোগি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

 

New Page 2

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। অক্টোবর ২৭, ২০১২ ।।

"হিংসা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সব খানে সব সময় মানবতার জয় হোক" এই চিরন্তন শুভবার্তা কে সামনে রেখে, কক্সবাজারের রামু, উখিয়া, টেকনাফ সহ চট্টগ্রামের অনেক বৌদ্ধ মন্দির ও বৌদ্ধ পল্লীতে সম্প্রতি ঘৃণ্যতম ও নারকীয় ভয়ঙ্কর হামলার প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম -জাপান 'সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য এক দেশ বাংলাদেশ' শীর্ষক টোকিওতে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো। গেলো ২০ অক্টোবর '১২, সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টায়, আকাবানে বিভিও হলে অনুষ্ঠিত উল্লেখিত জরুরী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাপানে নব নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।

বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম -জাপান'র সভাপতি সজল বড়ুয়া'র সঞ্চালনায় সেদিন সর্বস্তরের প্রবাসীরা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ন্যাক্কারজনক বর্বরোচিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাপান শাখার সভাপতি কাজী মাহফুজুল হক লাল তাঁর বক্তব্যে সেদিন বলেন, আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশে 'সংখ্যালঘু' বলে কোনো শব্দ থাকতে পারেনা। আজকে এই ঘটনায় রোহিংগাদের কথা বলা হচ্ছে, চরমপন্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সন্ত্রাসীর কাজে আমাদের দেশের মাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আজ দুর্গতদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেই সাথে বলেছেন- দোষী প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা সবাই সেই আশায় রয়েছি, নিরাশ হইনি এখনও।

বিএনপি জাপান শাখার সাধারণ সম্পাদক মীর রেজাউল করিম রেজা লজ্জাজনক সেই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন- নানা কারণে অনেকেই চায় না বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকুক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘ্টনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের অনতিবিলম্বে খুঁজে বের করার জোরালো দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি জাপান শাখার সাধারণ সম্পাদক নাবী উল্লাহ আসিফ কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে সংঘটিত সেই হামলার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সকল দোষীকে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্যে সরকারের কাছে বিশেষ আবেদন জানান।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাপান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছালেহ মোঃ আরিফ তাঁর বক্তব্যের একাংশে বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী সব মন্দির গুলো পুনঃর্নিমাণ করে দেবে কিন্তু শতাধিক বছরের পুরোনো মন্দির গুলো কী আবার সেই আগের রূপ ফিরে পাবে? সেই সাথে তিনি বলেন এ'সব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এটাও সেই 'জজ মিয়া'র কাহিনীতেই রূপ নিতে পারে। আমরা চাই আগামী ১২ সপ্তাহের মধ্যেই যেন এই দুঃখজনক নির্মম ঘটনার বিচার হোক।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের পলিটিক্যাল কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান আশংকা জানিয়ে বলেন, আজকে দেশের এমন বিপর্যয়ে বাংলাদেশ সাংবাদিক লেখক ফোরাম জাপান'র এই অনুষ্ঠানটা কিছু বলার সুযোগ করে দিয়েছে। আমি উৎকন্ঠায় আজ ভাবি- আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন কী শিখছে??? আজকাল পাশের হার বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তারা কী শিক্ষা পাচ্ছে? আমার মনে হয়- আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষাটি আরো আলোকিত হওয়া দরকার ছিলো। শিক্ষার নানান দিক নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। বাস্তবমুখী আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সঠিক গবেষণা করে, আমাদের সন্তানদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমি সাংবাদিক লেখক ফোরাম কে এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্যে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে ২৯-৩০ সেপ্টেম্বরের সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।

সেদিনের প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অভিজ্ঞ কুটনীতিক রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বিষাদ-ভরা কন্ঠে বলেন, এই ঘটনায় আমি এতই লজ্জিত যে, তা প্রকাশের কোনো ভাষা এই মুহূর্তে খুঁজে পাচ্ছিনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন- এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের আটক করে এদেরকে বিচারের আওতায় অচিরেই আনা উচিত। সরকার ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

জনাব মোমেন আরো বলেন- আমাদের সবাই কে একতাবদ্ধ হয়ে হাজার বছরের সমস্ত ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। নিজেদেরকে 'আত্মজিজ্ঞাসা'র মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। 'প্রযুক্তির দেশ জাপান' -এখানে বসে প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। তা না হলে আবারও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। পত্রিকায় দেখলাম, ক'দিন আগেও এরকম একটা ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিলো। সেই সাথে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথায় অসম্পূর্ণতা আছে তা'ও খতিয়ে দেখা খুব দরকার।

একই সাথে রাষ্ট্রদূত আশ্বাস দিয়ে বলেন- অতি সম্প্রতি জাপান সফরকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা গওহর রিজভি আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে নিশ্চিত করেছেন যে- সরকার অপরাধীদের খুঁজে বের করতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথোপযুক্ত কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যের শেষের দিকে সাংবাদিক লেখক ফোরাম কে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন "সাংবাদিক ও লেখকরা জাতির বিবেক হিসেবে দেশের দুঃসময়ে ঠিকই জেগে ওঠে। টোকিওতেও স্বদেশের এমন ক্রান্তি কালে এ ধরনের অনুষ্ঠান করে, তাঁরা আবারও তা প্রমাণ করলো।"

উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে ফোরামের পক্ষ থেকে সদ্য প্রয়াত ভাষা-সৈনিক অলি আহাদ'র মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি, বক্তারা ঝটিকা হামলায় অগণিত আহত ব্যক্তিদের যথাযথ চিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্ত গৃহহীনদের দ্রুত পুনর্বাসন এবং যাবতীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান সহ ধ্বংস করে দেয়া শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধমন্দির গুলো অবিলম্বে পরিপূর্ণ পুনঃস্থাপন ও নির্মাণের সম্পূর্ণ ব্যয় ভার সরকারকে বহন করার জন্যে বলিষ্ঠ দাবি জানান। আবার, কয়েকজন বক্তা এমনতরো নজিরবিহীন লজ্জাজনক ধ্বংস-যজ্ঞের জন্যে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।

সেদিনের সেই আলোকিত বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলদের সাংবাদিক লেখক ফোরাম- জাপান'র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ, বাংলাদেশ-জাপান খ্রীষ্টান সোসাইটির আহ্বায়ক যেরোম গোমেজ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সোসাইটি জাপান'র উপদেষ্টা ড. রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক, আওয়ামী লীগ জাপান শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আসলাম হীরা, বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট এসোসিয়েশন জাপান'র প্রাক্তন সভাপতি অজিত কুমার বড়ুয়া, নবগঠিত বাংলাদেশ ক্লাবের আহ্বায়ক কাজী আজগর আহমেদ সানি, সংস্কৃতি কর্মী মোঃ নাজিম উদ্দিন, নৌ প্রকৌশলী তাপস বড়ুয়া, উত্তরণ কালচারাল গ্রুপের সক্রিয় সদস্য এম এ এন শাহীন,জাতীয় পার্টি জাপান শাখার সহ-সভাপতি বিরুপাক্ষ বড়ুয়া, সাপ্তাহিকের টোকিও প্রতিনিধি রাহমান মনি, প্রতিবাদী কবি মঈনুল ইসলাম মিল্টন, বৌদ্ধ সংগঠক দেবাশীষ বড়ুয়া ও সাংবাদিক-সংগঠক বেলায়েত হোসেন তুহিন।

 
 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]