[প্রথমপাতা]

 

[দিল্লিতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণীটি শনিবার মারা যাবার পর রোববার সকালেই বাংলাদেশ থেকে ২৪ বছরের এক তরুণী প্রচন্ড ক্ষোভ ও তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই লেখাটি আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। ভারত এবং বহির্বিশ্বে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা নিহত তরুণী দামিনির প্রতি আমাদের আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছি এবং বাংলাদেশের প্রতিবাদী সেই  তরুণীর এই লেখাটি সবিনয়ে তাঁকে উৎসর্গ করছি।]

 

আপনাদের যা ইচ্ছে করুন- আমরা পুতুল


- তনুজা বড়ুয়া -

 

সাম্প্রতিককালের দুটো তোলপাড় করা ঘটনাঃ
১। দেশে ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া এক বর্বরের ২০১০ সালের ভিডিও
২। দেশের বাইরে মেডিকেল ছাত্রীর গন ধর্ষণ এবং মৃত্যুর কাছে আত্ম- সমর্পণ।
আপনারা আমাদেরকে কোনদিন মানুষ ভাবেন নি। শুধুই ভেবেছেন মেয়ে মানুষ। দুর্বল মানুষ, জরায়ু বহন করা নিরুপায় প্রাণী ... যাদের শরীরের ভাজে মায়ের গন্ধ, আবার যাদের আপাদমস্তকে লজ্জা পতিতা হওয়ার । প্রতি মুহূর্তে আমাদেরকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে আপনারা যতরকম বুদ্ধি করেছেন, অতোটা মাথা অন্য জায়গায় খাটালে সমাজের চেহারা এরকম নোংরা আর ভয়ঙ্কর হতো না ।
গত কয়েকদিন তোলপাড় করা এক ভিডিও ( আমার দেখার রুচি হয়নি) যেখানে এক মেয়েকে অযথা এক ছেলে চড় মেরেছে । আর এই দৃশ্যে হাত তালি দিয়েছে ফেসবুকের হাজার হাজার পুরুষ ! ফেসবুকে সামাজিকতা করতে এসে এরকম জঘন্য অপরাধকে কিভাবে তারা সমর্থন করে? মেয়েরা ভাব নিলে চড় মারতে হয় ? এরপরও কি মেয়েদের পেছনে ছেলেরা ঘোরে না? কই ছেলেরা তো মেয়েদের ইভ – টিজিং করে চড় খেলে উল্টো এসিডে ঝলসে দিতে চায় মেয়েদের মুখ! তখন তো কেউ ছেলেকে বখাটে বলে না? মেয়ের ড্রেস আপ , গেট আপ কিংবা চরিত্র হয়ে যায় তাদের আলোচনার বিষয় ... কোন কিছুতে যখন কাজ হয় না রেডিমেট নথি তো আছেই, যার নাম ধর্ম !
ভিডিওর মেয়েটি কোন এঙ্গেলে অশালীন ছিলো ? আর ছেলেটি শালীন কাপড় পরেও যে বর্বরতা দেখালো তাতে কি তার অপরাধ কোন অংশে কমে যায় ? গুটি কয়েক সচেতন মানুষ ছাড়া বাকি সব ছেলে মানুষ এটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেছে ! কই ছ্যাবলার মতন প্রেম নিবেদন করলে একটা মেয়ে বড়জোর দুষ্টু হাসি হেসে মস্করা করে, চড় মারতে যায় না! কোন মেয়ে এসিডে ঝলসে দেয়না তার প্রিয় মানুষের মুখ! উল্টো প্রিয় মানুষের হাতে লাথি – জুতো খেয়েও মুখ বুজে টানে এক একটা সংসার !

তাহলে আমরাও কি থাপ্পড় দেবো - আপনারা সমর্থন করবেন তো ?
এসিডে ঝলসে গেলে এসিড ঢেলে দেবো - ফুলন দেবী বলবেন নাতো?
জুতো খেলে নিজেরাও জুতো হাতে নেবো – মানবেন তো ?
সম্প্রতি ভারতে মেডিকেলের এক ছাত্রী গণ – ধর্ষণের শিকার হয়ে জীবন দিলো । আমি আগেও লিখেছি , এখনো লিখছি – কবে আপনারা আমাদের মানুষ ভাববেন ? মেয়ে মানুষ ভেবে আর কতো নির্যাতন করবেন ঘরে – বাইরে- কোচিং সেন্টারে কিংবা বাস ট্রেনের মত পাবলিক পরিবহনেও ! আপনাদের লজ্জা নেই ? একটুকু মনুষ্যত্ববোধ নেই ? তাহলে কেন আপনারা মানুষ আর আমরা মেয়ে মানুষ ?
আপনাদের জন্ম দিই- তাই আমরা মেয়ে?
আপনাদের জন্য স্নেহের – ভালবাসার- প্রেমের হাত বাড়াই – তাই আমরা মেয়ে?
আপনাদেরকে সারা জীবন সঙ্গ দিই- তাই আমরা মেয়ে?
আপানদের জন্য বেশ্যা হই , নিজেকে বিলিয়ে দিই কয়েকটা টাকার বিনিময়ে – তাই আমরা সস্তা মেয়ে?
আপনাদের জন্য সামাজিকভাবে গায়ের কাপড় খুলতে বধূ সাজি , নতুন সংসারের স্বপ্ন দেখি – তাই আমরা মেয়ে?
মেয়েরা যখন ভাব মারে তখন তাকাবনে না তাদের দিকে। তারা বোরকা পরুক বা বিকিনি এতে আপনার দুই মাথার কি ! কথা হচ্ছে, দোষ সব আমাদের গায়ে ... আমাদের শরীরে । আপনাদের মতন পাপ পৃথিবীতে জন্ম দিয়ে আমরা যুগে যুগে ভাগীদার হয়েছি অনেক নোংরামির, অনেক বর্বরতার, অনেক হিংস্রতার ...

মেয়েদের বলি , বোরকা পরুন আর যতোই হন সতী , পতি ব্রতা নারী সাজুন , স্নেহের ভাণ্ডার হন না কেনও , আপনি মেয়ে মানুষই থাকবেন... আপনার ঘরও আপনাকে খাবে, পরও আপনাকে খাবে... আপনি, আপনারা এবং আমি পুতুল।

আমাকে নিয়ে কবিতা লেখো , গানের কথা সাজাও , দুটো ফুল দিও ভালবাসায় কিংবা ভালবেসে হাত ধরো ... এরপরেও কথা থাকে ... থেকে যায় ... তুমি আমার গালে ঢেলে দিও এসিড , ফুল দিতে এসে চড় মেরো , ভালবেসে আমাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ফেলে দিও , নাহয় ভিডিও বানিয়ে বিলিয়ে দিও হাজার জনে ... খুব প্রয়োজনে আমার দেহ কিনে নিও বাজার থেকে ... প্রতিদিন পুতুল খেলো ... প্রতিদিন ... আমি তোমার স্ত্রীর পেটে আসলে অ‌্যাবোরশন করে ফেলে দিও ... কিংবা নালাতে ফেলে দিও । আমার পৃথিবী বড়ো হবে যত নালার আকার –আকৃতি বাড়বে সময়ের সাথে সাথে। এর আগেই আমাকে মেরে ফেলো... সেও ভালো ...!

তুমি মেয়ে মানুষ ... একটা কথা বলা পুতুল ... সমাজে এর বাইরে কি তোমার পরিচয়?

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]