[প্রথমপাতা]
|
সেদিনও কুয়াশা ছিল
- মেহেরুন নেছা রুমা
-
কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়েছে সন্ধ্যা সারে ছ’টায়। রাজধানী ছাড়িয়ে
ট্রেন ছুটে চলল মাঠ-ঘাট ,খাল-বিল,নদী পেরিয়ে।যখন নদীর উপর দিয়ে ট্রেনটি
ছুটে চলে তার ঝকঝক শব্দটি আরো বেড়ে যায়। রাত্রি বেলা ট্রেনের গতি মনে হয়
অন্য সময় থেকে একটু বেশীই থাকে। নদীর উপর যখন লোহার পাতের উপর দিয়ে ট্রেনটি
বিকট শব্দে ছুটে চলে অহনা ঘুমের মধ্যে তখন চমকে ওঠে। যদিও এখন তার সেরকম
গভীর ঘুমও হচ্ছেনা। কিছুক্ষণ চোখ বুজে থাকে আবার চোখ খুলে চারিদিকে তাকিয়ে
দেখে।
পৌষের শুরুতেই হাড় কাঁপানো শীত।সারাদিনেও সূর্যের মুখ দেখা যায়না।
মানুষগুলো শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে এমন ভাবে চলাফেরা করছে যেন এক একটি
মানুষ এক একটি প্যাকেট। কোনরকম চোখদুটি ছাড়া আর সবকিছুই তাদের ঢাকা । রেল
লাইনের পাশেই গড়ে উঠেছে ছোট্ট একটি বাজার।দু’একটা চায়ের দোকানে কেতলি থেকে
ধোঁয়া উঠছে। পিপাসিত মানুষগুলো কাঠের বেঞ্চের উপর জবুথবু হয়ে বসে আছে।কারো
হাতে গরম চায়ের কাপ। কেউবা আবার অপক্ষো করছে।পাশ দিয়েই মাঠের মধ্য দিয়ে
নেমে গেছে সরু একটি রাস্তা।
অহনাকে নিয়ে রাজিব সেই রাস্তার মাথায় রিক্সা থেকে নামলো। সামনে আর রিক্সা
যাবেনা। রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে মাথাটা নিচু করে সরু পথ ধরে এগিয়ে
যাচ্ছে।যাদের হাতে চায়ের পেয়ালা ছিল মুখে দিতে ভুলে গেলেন কিছু সময়ের
জন্য,কেউবা আবার অন্যমনস্ক হয়ে গরম চা ঠোঁটে লাগাতেই মুখ পুড়ে গেল।
প্রথম মন্তব্য-জালাল মিঞার পোলা রাজিব্যা না এইডা ?
দ্বিতীয়-হ। কিন্তু লগে ওইডা কেডা?
ৃতৃতীয় ব্যাক্তি-এমন মাইয়া লোক তো এই গ্রামে আর দেহিনাই। মনে অইতাছে কোন
শহরের ম্যামসাব বিয়া কইর্যা লইয়্যাইছে।
চতুর্থ মন্তব্য-জালাল মিঞার পোলা এই কাম করল ? ওর মায়ে যে দরজাল মইলা!
পঞ্চম জন-কেমন সুন্দর একখান বৌ আনছে রাজিব্যা। মনে অয় লেহাপড়া জানা অইবো।
মাইয়্যাডা অর লগে বিয়া বইলো কি দেইখ্যা ?
প্রথম জন-কি আর দেইখবো,জালাল মিয়ার না এক বোইন আছে ,যে ঢাকা শহরের বিরাট
বড়লোক,তার নাকি ম্যালা টেকা পয়সা। মনে অয় হ্যায় ই বখাইট্যা ভাইর পোলার লগে
এই মাইয়্যার বিয়া দিছে।
রাজিব পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাচ্ছে ,আর যতদূর সামনে এগোচ্ছে
লোকগুলোর কথা কানে আসতেছে। কথাগুলো অহনাও শুনতেছিল। ‘ এত গ্রাম্য ভাষা
অহনার বোধগম্য না হওয়ায় সে কিছুই বুঝতে পারলনা। কিন্তু লোকগুলো যে ওদেরকে
নিয়েই কিছু বলতেছিল তা ঠিকই বুঝতে পারলো।
রাজিব হাঁটছে আনমনে। আর সাথে সাথে অহনা। এক স্বর্গসুখ ছেড়ে আর এক
র্স্ব্গসুখের আশায় সবাইকে ছেড়ে একজন রাজিবের হাত ধরে মেঠোপথ ধরে হেঁটে চলল
অহনা। এক পা এক পা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,আর এক পা এক পা করে পিছনে
ফেলে আসছে জীবনের হাসি আনন্দ,মায়ের øেহ,বোনদের ভালবাসা,বাবার স্বপ্ন।
উঠানের তিনদিকে তিনটি ঘর। জীর্ণ শীর্ণ ঘর তিনটির সাথেই লাগোয়া গোয়াল ঘর।
তাতে গরু,বাছুর,গোবর,খড়-কুটো আবর্জনায় একেবারে বিতিশ্রী অবস্থা।দুর্গন্ধে
টেকা যাচ্ছেনা। পাশেই একটা ছোট্ট খুপড়ির মধ্যে হাস মুরগি চেচামেচি করছে।
বাইরে বের হয়ে আসার জন্য তাদের সমস্বরে দাবী। অহনা যা ই দেখছে তাতেই অবাক
হচ্ছে। আর ভিতরে ভিতরে ঘৃনাও লাগছে। এত নোংরা চারিদিক।কি করে এখানে মানুষ
বসবাস করে ! এমন পল্লী গ্রামের ছবি সে নাটক সিনেমাতেই দেখেছে। কিন্তু তাতো
এমন নোংরা পরিবেশ নয়।
ঘরের পাশেই পুকুর। কিন্তু তাতে কোন ঘাটের চিহ্ণটি নেই। যে যেখান দিয়ে পারে
নেমে পরে,থালা বাসন পরিস্কার করে। আবার একই পুকুরে গরু বাছুর গোসল করায়। এক
টুকরো কাঠের উপর ভর করে চলে কাপড় কাচার কাজ। অহনা এসব বাইরে থেকে দেখেই মনে
মনে শিউরে উঠলো। এই পরিবেশে সে থাকবে কী করে!
একটি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে রাজিব দরজায় টোকা দিতেই বেরিয়ে আসলো এক মহিলা।
রাজিব ঘরে ঢুকেই সেই মহিলার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলল,আম্মা আমার
অন্যায় হয়েছে,মাফ করেন। আমি আপনাকে না জানিয়েই অহনাকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছি
।
দন্ডায়মান নারীমূর্তিটি রাগে ফোস ফোস করছেন। চোখের চাহনিতে অহনার পেটের
মধ্যের সবকিছু যেন গিলে খাচ্ছেন। এমনি তার অভিব্যক্তি।
যে নারীরূপী অগ্নিমূর্তির সামনে রাজিব ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে অহনা তাকে
নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এই কি তাহলে রাজিবের মা ! অহনার বিষ্ময়ের অন্ত
নেই। পেটের মধ্যে গোলযোগ শুরু হয়ে গেছে। অকস্মাৎ অহনার কানে প্রবেশ করল তার
মায়ের মত শাশুড়ির বধু বরনের প্রথম সংলাপ।
-এই মাইয়্যারে তুই বিয়া করছিস ? তাও আমারে না জানাইয়া। এই আছিলো আমার কপালে
?
এই বলে অহনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কর্কশ দৃষ্টিতে একবার চেয়ে নিল। তারপর
আবার বলল,কি আর করমু,বিয়া যকন কইরছোস তকনতো আর বৌরে লাথি মাইর্যা ঘর থিকা
বাইর কইর্যা দিতে পারুমনা। তয় আমার কিছু কতা আচে। তা কিন্তু তারে হুইনতে
অইবো। তাইলেই আমি তারে বেটার বৌ বইল্যা মনে ধরুম।
অহনার দিকে তাকিয়ে বলল,হ্যা গো বৌ,মাইয়্যারে ক্যামনে পরের বাড়ি পাডাইতে অয়
তাকি তোমার মায়ে জানেনা ? খালি চার হাত-পা লইয়্যা আমার ওমন সোনার টুকরা
পোলাডারে একলা পাইয়া হাতে ধরাইয়া দিয়াই খালাস ? মাইয়্যা বিয়া দিলে যে
সোনা-দানা,টেকা পইসা দেওন লাগে,ঘরের মাল সামান দেওন লাগে,তোমার মায় কি হেই
কতা জানেনা ? বলি আমার পোলাডা কি নদীত ভাইস্যা আইছে ? তারে বড় করতে আমগো
খরচা অয় নাই ? খালি আতে মাইয়্যা বিয়া!এই জন্মে আর দেখিনাই বাপু।
অহনার মাথার উপর বজ্রপাতের পর বজ্রপাত পড়িল। একি কথা শুনছে সে ! এমন
শাশুড়িকে কিভাবে মানিয়ে চলবে অহনা ! এ কেমন ভাষা,কেমন তার ব্যবহার!সবাইকে
ছেড়ে যে সুখের আশায় ঘর ছেড়ে বাইরে পা বাড়ালো সেখানে এ কেমন সমাদর ! অহনার
হ্্রদয় ভেঙ্ েকান্নার ঢেউ উছলে পড়লো। মনে হচ্ছে এই দুনিয়াতে তার কেউ নাই।
রাজিবও কেমন নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে।মায়ের এমন কথার কি কোন জবাব ছিলনা তার
কাছে ?
শাশুড়ি আবার বজ্রপাত ঝাড়িল।
-বলি গুরুজনরে যে পা ধইর্যা সেলাম দেওন লাগে তাও তোমার মায়ে শিখায় নাই ?
(কথায় কথায় মায়ের অপমান কেমন করে অহনা সহ্য করবে)
বজ্রপাতে চমকিত হয়ে অহনার হ্্রদয় দগ্ধ হয়ে,দু’চোখ প্লাবিত হয়ে নিরবে গিয়ে
সেই অগ্নিমূর্তির পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। কিন্তু কোন আশির্বাদের হাত
অহনার মাথা ছুঁয়ে দিলনা। মাথা তুলে অহনা সামনের নারী মূর্তিটিকে চেনার
চেষ্টা করছে। এতকাল অহনা যে মায়ের রূপ দেখেছে,মায়ের যে মমতা দেখেছে,যে
নির্মল শান্ত বিবেচনা দেখেছে,যেই মাকে দেখা মাত্রই যে কারো ভক্তিতে আপনা
আপনি মস্তক অবনত হয়ে আসতো। যে মায়ের মন থেকে সর্বদা সন্তান সমতুল্য সবার
জন্য আশির্বাদের বানী নির্গত হত। সেই মহামান্বিত মায়ের মাথে সামনে
দন্ডায়মান এই রমনীর কোন সাদৃশ্য খুঁজে পেলনা। বাস্তবিক পক্ষে এই মহিলাকে
প্রথম দেখে অহনার কিছুতেই মনে হয়নি এ যে রাজিবের মা হতে পারে। রূপের কথা
বলবেনা অহনা। কেননা সকল মানুষকেইতো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। হোকনা রাজিবের মা
একটু কদাকার। কিন্তু তাই বলেকি মনটাও এমন কুৎসিত হবে ? কি তার কথার ভাষা,কি
তার বাচনভঙ্গি । কেমনই তার চলার গতি। হাটাঁতো নয় যেন কোন বুনো হাতির জঙ্গল
মাড়িয়ে চলা। এটাকি কোন মহিলার গঠন হওয়া সম্ভব !
বিষ্ময়ে,হতবাকে,ভয়ে,আতংকে অহনা একেবারে চুপসে গেল।মনে মনে আশংকা,কোথায় এসে
পড়লাম,এ যাত্রায় টিকে থাকতে পারেবা তো ?
মনে যখন এই ভাবনা শাশুড়ির তখন অকস্মাৎ হুকুম জারি হল।
-এই মাইয়্যা শোনো। আমার ঘরের বৌ যকন অইছো ,তকন আমার আদেশ তোমাকে মাইনতে
অইবো। তুমি শহরে থাকছো কি গ্রামে,আদরে কি অনাদরে হেইডা আমার জানার বিষয়না।
এখানে থাকতে অইলে আমার হুকুম মত চইলতে অইবো।আমার কোন কতার কোন কৈফৎ চাওয়ার
তোমার অধিকার নাই। তুমি অইলা ঘরের বৌ। তাই হাত পা গুটাইয়া পটের পুতলা অইয়া
থাকন তোমার কামনা। ঘরের সব কাম নিজের হাতে করতে অইবো। আমি কোন মানুষ দিয়া
কাম করাইনা।আমার লগে তুমিও করবা। না পারলে আমারে জিগাইবা। বাড়ির বাইরে একদম
পা দিবানা। আর এইসব পোষাক আষাক এহানে চইলবোনা। কাপড় পিনদন লাগবো।গ্রামের
বৌরা এসব পিনদেনা। বুঝা গেল?
অহনা একদিকে মাথা নাড়ে।
এরই মধ্যে গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ছে রাজিব বিয়ে করে বৌ নিয়ে এসেছে। তাই
পিঁপড়ার মত পিল পিল করে এই সাঝ-সকালেই যে যেভাবে ছিল সেভাবে এসে উপস্থিত।
মুহুর্তের মধ্যে ঘর,বাড়ি উঠান ভরে গেল মানুষে। অহনার ভীষণ অসস্তি
লাগছে।মানুষগুলিকে দেখে অহনার যা মনে হল তা হল, একবাক্যে এটা একটা ছন্নছাড়া
পরিবেশ। আর এই পরিবেশে সে নিজেকে কিভাবে খাপ খাওয়াবে!
সারাদিন এভাবে কেটে গেল। এখানে বিদ্যুৎ নাই। তাই সন্ধার সাথে সাথে সারা
গ্রাম অন্ধকারে ঢেকে গেল। ঘরে কেরোসিনের বাতি জ্বলল। এই আলোতে অহনা যেন
কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা।একটা ঘরে চুপচাপ বসে আছে অহনা। শাশুড়ি একটা হারিকেন
হাতে এসে ধপাস করে সেটা রাখল একটা টেবিলের উপর। অহনা ভয়ে ধরফড়িয়ে বিছানা
থেকে উঠে দাঁড়ালো। অমনি বজ্রপাত শুরু হল।
এমন হাত পা গুটাইয়া থাকলে অইবোনা কইলাম। আইজ না হয় কিছু কইলামনা। কাইল ভোরে
ফজরের ওয়াক্তে জাইগা আমার লগে কামে হাত লাগাইতে অইবো। রাজিব বাইর থিকা ঘরে
আইলে অরে লইয়া খাওনের ঘরে আইসো। বলে দমদম করে চলে গেলেন।
রাজিব ঘরে এসেই অহনাকে বলল চলো আগে খেয়ে আসি। নইলে মা রাগ করবেন।
অহনা বলল,এত তাড়াতাড়ি রাতের খাবার?সবেতো সন্ধ্যা হল। সন্ধ্যাবেলা আমার
খাবার অভ্যাস নাই। আর এখন খেয়ে কি করব?
খেয়ে ঘুমাবে। আর অভ্যাসের কথা না বলোতো ভাল। তোমাকে মা বলে দেননি যে এখানে
তোমার আগের অভ্যাস চলবেনা ? সন্ধ্যাতেই ঘুমাবে আর ফজরের সময় উঠবে।
-কিন্তু আমারতো এখন ঘুম আসবেনা। আর ফজরের সময় আমি উঠবো কিভাবে ? আমারতো
তখনি ভাল করে ঘুম আসে?
রাজিবের কণ্ঠে বিরক্তি। বলে,অহনা তোমাকে ভালকরে বলা হয়েছেনা যে তোমার ঐসব
ন্যাকামি এখানে চলবেনা ? চলো এখন।
রাজিবের এই কথাটি অহনাকে হঠাৎ করেই যেন মারাত্মক ভাবে আঘাত করল। ন্যাকামী ?
রাজিব জানেনা অহনা কোন পরিবেশে বড় হয়েছে ? সবকিছু জেনে শুনেইতো অহনাকে
আশ্বস্ত করে নিয়ে এসেছে ,আর নিজের সম্পর্কে সব রেখেছে অপ্রকাশিত।রাজিবের
পরিবারের এই অবস্থার কথা সে কখনোই বলেনি অহনাকে। সেই কথাতো অহনা রাজিবকে
বলতেই পারছেনা। রাজিব সেই সুযোগই দেয়না। রাজিব তার ফুপুর কাছে পড়ে থাকতো।
ফুপুর অবস্থা আর এদের অবস্থা রাত দিন পার্থক্য। আর রাজিব কোনদিনই নিজেদের
এই অবস্থার কথা বলেনি। এমনকি সে যে বেকার সেই কথাও গোপন রেখেছিল অতি যতনে।
রাতের বেলা অহনা বলল,সবকিছু না হয় মেনে নিলাম,কিন্তু আমি যে পড়াশোনাটা
চালিয়ে যেতে চাই সেটা কিন্তু তুমি মনে রেখ।তোমার সাথে বিয়ের আগেই এই কথা
ছিল।
অহনা রাজিবের কাছে আগে যা শুনেছিল আর এখন যা দেখছে ,তাতে তার মনে এটাই এখন
আশংকা যে এই পরিবারে থেকে পড়াশোনা করাটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা। শাশুড়ি যেভাবে
তার উপর অর্ডিন্যান্স জারি করেছেন,তাতে ঘরের বৌ কলেজে পড়বে সেই অনুমতি দেয়া
তার স্বভাবে যায়না। রাজিব বলল,আমি ফুপুকে বলে মাকে রাজি করাবো। তবে তোমাকে
ঘরের সবকিছু আগে ঠিক রেখে তারপর লেখাপড়া করতে হবে।
অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে অহনা বিএ. পড়ার অনুমতি পেল।সারাদিন ঘরের কাজকর্ম করে
রাতের বেলা একঘণ্টা পড়াশোনা করে।সাতদিনে একদিন ক্ল্াস করে।বাড়ির ছোট ছোট
বাচ্চাগুলোকে সন্ধ্যার পর পড়াতে বসে।এটা অহনা নিজে থেকেই করে।কারন এখানে
কোন কিছুই তার মন মত হচ্ছেনা।তাই নিজের মনটা একটু ভাল রাখতে এই বাচ্চা
পড়ানোর কাজটিকে বেছে নেয়।
রাজিব কোনকিছইু করেনা।বিয়ের আগে অহনাকে বলেছিল এখানে তার ব্যবসা আছে।
কিন্তু আসার পর থেকে কিছুই দেখছেনা। ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়ায় আর অহনাকে শুধু
মায়ের সাথে মিলে থাকার উপদেশ দেয়।
রাজিবদের পরিবারের আর্থিক এই শোচনীয় অবস্থা অহনাকে খুবই বিষ্মিত করেছে।
খুবই টানাটানির সংসার।রাজিবের বাবা অসুস্থ্য হয়ে বিছানা নিয়েছে আরো অনেক
আগেই। রাজিবের বড় ভাই আলাদা ঘর সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। এদের সাথে সে তেমন
বন্ধন রাখেনা। এমন অবস্থায় রাজিব বিয়ে করে বৌ নিয়ে বাড়ি এলো,অথচ কোন
কাজকর্ম করার কথা মুখেও আনছেনা।
এদিকে শাশুড়ি নিজেদের দুর্দশাকে ঢাকতে অহনাকে কুলটা বলে গালি দেয়। বৌ এর
আগমনে কোন্ কোন্ বাড়ির অবস্থা ফিরেছে,কোন্ বাড়ির বৌ বাপের বাড়ি থেকে ভুরি
ভুরি সোনাদানা এনেছে,কার ছেলেকে শ্বশুর বাড়ি থেকে নগদ কত টাকা যৌতুক
দিয়েছে-এসব কথা যেন শাশুড়ির নিত্যদিনের পুঁথিপাঠ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অহনার
জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে উঠতে লাগলো।কোথাও সুখের কোন কুল কিনারা নজরে আসলোনা।
কিভাবে লেখাপড়া চলবে,কে খরচ জোগাবে!অভাব অনটন,সংসারের কাজকর্ম,স্বামীর
ভবঘুরে জীবন,সবকিছু মিলিয়ে অহনার চেহারার উপর এক কালো আবরণ লেপে গেল।
বিবর্ণ হয়ে গেল অহনা।
বাড়ির এবং বাড়ির পাশের বাচ্চাগুলোকে অহনা যখন পড়াশোনা করানোর দায়িত্বটা
নিল,মনে মনে ভেবেছিল ঐসব শিশুদের পরিবার থেকে তারা অহনাকে পারিশ্রমিক
হিসেবে নিশ্চয়ই সামান্য কিছু হলেও দিবে। অহনার যদি স্বচ্ছল অবস্থা থাকতো
তাহলে এই বিনিময়ের কথাটি সে কখনোই ভাবতোনা। কিন্তু ওদের থেকে অহনার অবস্থা
এখন আরো খারাপ।
বাচ্চাগুলো বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়তে আসে।কিছুদিন যেতেই অহনা তার
ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবারের দুর্গতি দেখতে পেল। অহনা যেটুকু আশা করেছিল দেখলো
তার উল্টো।মাঝে মাঝে তারা হাতে করে এক গ্লাস গাভীর দুধ,কেউ আবার গাছের কচি
লাউ,,কেউ একটা মুরগির বাচ্চা,কেউ আবার দুটো ডিম এনে অহনার হাতে দেয়।বলে
আপা,আমাদেরতো টাকা পয়সা নেই,তাই মা আপনাকে এইটা দিতে বলছেন। এগুলো দিয়ে
অহনা কি করবে ? ফিরিয়ে দিলে কচি মুখগুলো কষ্ট পায়,তাই অনিচ্ছা সত্তেও রেখে
দেয় নিজের কাছে।
গ্রামের বাড়ি। ঘরে বাইরে কাজের শেষ নেই। অহনা ভীষণ হাপিয়ে উঠেছে। এসব
গ্রাম্য কাজের অভ্যাস তার কোনকালে ছিলনা। তাও রাজিবের মন রক্ষার্তে মুখ
বুজে সব করে যায়। অহনার যদি কখনো শরীর খারাপ থাকে,যদি ঘুম থেকে উঠতে একটু
দেরী করে তাহলে শাশুড়ি বলে,ুতমিতো এক্কেবারে কচি খুকি নও গো বৌ,যে এই
সামান্য কাম কইর্যাই তোমার শরীলে জুত নাই। বলি,আমি কেমন কইরা করি ? ওইসব
বাহানা আমার কাছে কইরোনা। বারো বছর বয়স থিকা ঘর করতাচি,তিনটা পোলাপান একলা
মানুষ করচি,ধান বানছি,পাটায় হলুদ মরিচ পিষা পাক করচি,গরু ছাগল পালছি। আর
তোমারে বিয়া কইর্যা পোলা আমার একেবারে লাট হইছে। বাজার থিকা গুড়া মসলা
কিনা আনে। দুই পইসা কামাই করার মুরদ নাই,বৌরে বিবির হালতে চালায়।
একদিন ভাতের মাড় গালতে যেয়ে অহনার হাত পুড়ে গেল। অমনি শাশুড়ি শোনালো-
তিনবেলা হাসের মত গিলছো,তো হাতে কি তোমার জোর নাই নাকি ? হাত থিকা ভাতের
পাইলা পরে ক্যামনে ? প্যাকনা কইর্যা থাকলে কাম ওইবোনা। বলেই এক গাদা কাপড়
এনে সেসব কাচার জন্য দিয়ে গেল।
সেদিন অহনা পুকুর ঘাটে বসে কতক্ষণ যে কেঁদেছিল আর মাকে মনে করেছিল। তার
নিজের মা হলে কোনদিন কি পারতেন এমন ব্যবহার করতে ? এমন হাত পুড়ে গেলে আবার
কাপড় কাচতে দিতেন?কিন্তু সেই কথা এখন মনে করে আর কি লাভ ? একেতো পোড়া
হাত,তার উপর সাবানের ক্ষারে হাতের ফোসকা গুলো ফেটে গিয়ে দগদঘে ঘা হয়ে গেল।
হাতের জ্বালাপোড়ায় সারারাত অহনার চোখে ঘুম নেই।সেই রাতেই প্রচন্ড জ্বর এলো।
অহনাকে কখনো এমন করে শুয়ে থাকতে দেখেনি রাজিব। অনেক ডাকাডাকির পরেও অহনার
কোন সারা না পেয়ে রাজিব মায়ের কাছে গেল। আর অমনি মা শুনালেন অন্যভাবে-
ওইসব কিচ্ছুনা। একফোডা ভাতের ফ্যান পড়ছে তাতেই মহারানীর আল্লাদের শেষ নাই।
একন বাহানা কইর্যা আছে,যাতে ঘরের বেবাক কাম আমারি করন লাগে। আমার লগে
ত্যাজ দ্যাকায়। ত্যাজ দেকাইয়্যা যাইবো কই ? আমার ঘরেই থাকন লাইগবো। কোন্
বড়লোকের বেটিরে উনি,এটুক কাম করতে পারবোনা। মায় কি কোন কামই শিকায়নাই?আমার
এমন ভাল পোলাডার মাতা খাইছে শয়তানী।
এমন করে যা মুখে আসে তাই বলল। রাজিব একটি কথার জবাব আজ পর্যন্ত করেনাই।
এসবই কি মায়ের ন্যায্য কথা ? মাকে মান্য করবে তো ঠিক আছে। কিন্তু যে মেয়েকে
স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সুখে-দ:ুখে পাশে থাকার কথা বলে,ভাল রাখার ওয়াদা দিয়ে
নিয়ে আসলো ,সেই মেয়ের সাথে যে কত কি অন্যায় হচ্ছে সেটা দেখার দায়িত্ব কি
স্মামী হিসেবে রাজিবের নেই ? একথা বললেই অহনা ভালনা।
আরো কত বিলাপ করে যাচ্ছেন মা। কথার ট্রেন একবার চলা শুরু করলে যেন আর থামতে
জানেনা।
বলেন-পাশের বাড়ির সেকান্দর খলিফার বড় পোলা বিয়া করচে। শশুর বাড়ি থিকা নগদ
পঞ্চাশ হাজার টেকা,এক ঘরের সব মাল-–সামান দিয়া দিছে মাইয়ারে। আর আমি আমার
পোলা বিয়া করাইয়া ঘরে আনলাম ননীর পুতুল। কাম কাইজ কিছুইি জানেনা।আবার
পাডাইছেও খালি হাতে। একটা পানের বাটাও আমার কপালে আছিলোনা ? এখনো যদি আমার
পোলারে আবার বিয়া দেই,নগদ টেকা,সোনা-দানা সহ ঢহিলা মাইয়া ঘরে আনবার পারি।
আমার পোলারে মটর সাইকেলও দিতে চাইছে এই গ্রামের কতজনে। পোলায় আমার এইসব না
দেইখ্যা চেহারা দেইখ্যা একটা পুতলা লইয়াইছে। ম্যামসাব আনছে।একন যাও
ম্যামসাবের স্যাবা করোগে। গ্যারামের মাইয়া বিয়া করলে আইজ এই দশা অইতোনা।
গতরে গোস্ত থাইকতো,কাম করার শক্তি থাইকতো। এই হগল আল্লাইদ্দা শরীল
থাকতোনা।আমার ঘরের বৌ, হ্যায় কিনা আবার পড়ালেহা করবো,বাইরে যাইয়া চাকরী
করবো। আরো কত কি দেহার আছে আমার ! বলি মাইয়া মাইনসের এত লেহাপড়া দিয়া কি
অইবো ? শেষেতো বৌ কারো কতাই শুনবোনা। আমার চৌদ্দ গুষ্ঠিতো এমন বেজাত
মাইয়ালোক দেখিনাই । পোলায় আমার দেখাইলো। বিয়া অইছে স্বামীর ঘর করবি,লেহাপড়া
দিয়া কি অইবো ?
একের পর এক শাশুড়ির এমন বজ্রপাতে অহনার চেতনা ফিরে আসলো। কষ্টে কলিজা ছিড়ে
যাচ্ছে এসব কথা শুনে। চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে আবার শরীরের তাপে তা
গালেই শুকিয়ে যাচ্ছে।
এই সংসারে থেকে যে অহনার কোন সুখ হবেনা একথা এখন তার কাছে পরিস্কার।
পড়াশোনার কোন গ্যারাণ্টি নাই। কেউ পছন্দ করেনা যে সে পড়াশুনা করুক। একা
কিভাবে সবার মনের বিরূদ্ধে গিয়ে তা চালিয়ে যাবে ? আর রাজিবও মায়ের কোন কথার
কোন প্রতিবাদ করেনা। তার বলা কোন কথাই এখন ঠিক নেই। এই দু:খ অহনা কোথায়
রাখে,কার কাছে বলে ! এরই মধ্যে শাশুড়িকে আর একটা প্রত্যাশাার কথা অহনা
শুনতে পেয়েছে। এইতো সেদিন অহনা রান্নাঘরে কাজ করছিল আর শাশুড়ি পাশেই একটা
আম গাছের গুড়ির উপর বসে পান চিবাচ্ছেন আর বলছেন,বয়সতো কম অইলোনা,কবে যে চোখ
বুজি ঠিকনাই। ঘরডা এক্কেবারে খালি খালি লাগে।বুড়া বয়সে নায়-নাতকুর নিয়া সময়
পার করুম এইডাই মনের আশা ।কিন্তু বৌ আমার পড়ালেহা করে।আমি বাপু এতকিছু
বুঝিনা। আমার ঘরে নাতিপুতি দেখতে চাই খুব শিগগিরই। অহনা মুখ বুজে কাজ করে
যায়।মনে মনে ভাবে এখন পর্যন্ত তারই ভরনপোষন চলেনা ঠিকমত,ছেলে মেয়ে হলে
কিভাবে চলবে?তার উপর পড়াশোনা শেষ না হতে কিছুতেই না।
ক’দিন ধরেই অহনার শরীরটা ভাল যাচ্ছিলনা।শুকিয়ে একেবারে হাড্ডি মাংস এক হয়ে
গেছে। তার উপর আজ ভীষণ জ্বর। মাথার ব্যাথায় কপালের শিরাগুলো যেন ছিড়ে
যাচ্ছে। এমনি দুর্ভাগা অহনা,কপালে হাত রাখারো কেউ নেই।
এরই মধ্যে অহনা শুনতে পেল শাশুড়ি সেই নাতিপুতি দেখার বাসনা ব্যক্ত করছেন
ছেলের কাছে। রাজিব অতি নিচু স্বরে শুধু এইটুকু বলল,মা অহনা চায় বিএ টা পাস
করে......
অমনি মুখ থেকে কথাটি ছেচড়ে টেনে নিলেন মা।বললেন,দরকার নাই বিএ পাাসের। পাস
দিয়া আমি কি করুম ? বউ অইছে,ছেলেপুলে জন্ম দিবো,মানুষ কইরবো,শশুর শাশুড়িগো
দেহাশুনা কইরবো। এইডাই মাইয়া মাইনসের কাম। পড়ালেহা দিয়া কি অইবো ? অর
পড়ালেহা আমি চুলায় দিমু। বলেই চৌকি থেকে নেমে বুড়ো সোজা চলে এলেন অহনার
ঘরে। দরজাটা এক ধাক্কায় ঠেলা মেরে খুলে ফেলে গিয়ে দাঁড়ালেন চৌকির পাশে রাখা
টেবিলটার কাছে। রাজিব এসে চুপচাপ মায়ের পিছনে দাঁড়ালো। একবার সেদিকে
তাকালেন,অত:পর মুহুর্তেই মুখখানি ফিরিয়ে এনে গারদ থেকে ছুটে আসা পাগলের মত
টেবিলের উপর সাজানো বই-খাতাগুলো দু’হাতে টেনে ছিড়ে ফেলতে লাগলেন। সারা ঘরময়
ছড়িয়ে পড়লো অহনার বইয়ের ছেড়া ছেড়া টুকরা। তারপর হাত উঁচিয়ে বলে গেলেন,আর
জানি কোনদিন এসব ধরতে না দেখি। রাজিব কাঠের পুতুরের মত দাঁড়িয়ে আছে।মনে মনে
সেওকি এটাই চেয়েছিল ? অহনা পড়াশোনা করলে স্ত্রী তার চেয়ে অধিক শিক্ষিত হয়ে
যাবে এই ভয়তো তার মনে বরাবরই ছিল। সে যে স্কুলের গন্ডিও পার করতে পারেনি
সেই গোপন কথা অহনা বিয়ের পরেই জেনেছিল।
অহনার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেল। চোখের সামনে আজ যা তান্ডবতা দেখলো এর সাথে
জগতের কোনকিছুকেই সে মিলাতে পারছেনা। কিসের স্বপ্ন দেখে অহনা ভালবাসার উপর
ভরসা করে একজন রাজিবের সাথে ঘর থেকে পা রেখেছিল। আজ তার সবকিছু সেই
ভালবাসার মানুষের সামনে এমন ধুলায় লুটিয়ে যাচ্ছে দেখেও রাজিব কেন
নির্বাক,কেন তার কোন প্রতিক্রিয়া নেই ! অহনা ভেবে নিরাশ।অতি দ:ুখে অজ্ঞান
হয়ে পড়ল অহনা।
অনেক রাতে জ্ঞান ফিরে বিছানায় উঠে বসলো। শরীরে কোন শক্তি নেই। জ্বরে সারা
শরীর কাঁপছে। ভীষণ খিদেও লেগেছে,কিন্তু জ্বরের কারনে বমি বমি লাগছে।
পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। পানি খাবার জন্য বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে
দাঁড়ালো। আর তখনি অন্ধকার ঘরময় ছড়িয়ে থাকা নিজের বই খাতার ছেড়া পাতাগুলো
পরে থাকতে দেখে অহনার কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসলো। অন্ধকারের মধ্যে দু’হাতে
সেসব কুড়িয়ে নিল বুকের মধ্যে। সন্তান হারানোর মত ব্যাথা অনুভব করলো অন্তরে।
সারারাত সেগুলো বুকের সাথে চেপে রেখে পার করে দিল।কেঁদে কেঁদে ভাসিয়ে দিল
একটি রাত। টের পেলনা রাজিব,টের পেলনা মায়ের মত শাশুড়ি।
অহনা ভেবেই পায়না একজন নারী হয়ে তার শাশুড়ি আর এক নারীকে কিভাবে এত কষ্ট
দেয়। সেওতো একসময় বৌ ছিলেন। সেও অন্য এক ঘর থেকে পরের বাড়িতে এসেছেন।
অহনাতো তাকে কোন অশ্রদ্ধা করেনি। মায়ের আসেন বসিয়ে তার সকল ন্যায় অন্যায়
মেনে নিয়েছিল নিরবে। কিন্তু তার বিনিময়ে কি পেল ? এমনি নিষ্ঠুর মন তার, বৌ
এর ভক্তি শ্রদ্ধার কোন মূল্যই সে দিলনা। তার হ্্রদয়ে কি অহনার জন্য
সামান্যতমও øেহ মায়া নেই ? শাশুড়ির ভাষায় বৌ হল তার অধীন। হুকুম পালন করাই
বৌ এর ধর্ম কোনকিছুর জন্য কোন কৈফিযং করার অধিকার নেই।আর তাইতো তার অমতে
লেখাপড়া করতে চেয়েছিল বলেই সেদিন রাতে এমন গুলডোজার চাপালো অহনার স্বপ্নের
উপর দিয়ে ।
পূর্ব আকাশে তখনো সূর্যের আভা ভেসে ওঠেনি। টিনের চালার উপর টপটপ করে শিশির
পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। একটু পরেই চারিদিক আলো করে জেগে উঠবে সূর্য। পৃথিবী
হবে আলোকিত। মানুষের দ্বারে দ্বারে আলো পৌঁছে যাবে। ঘরের পাশের বাগানে
বাদুরের পাখা ঝাপটানি।আবার নিরবতা। মসজিদ থেকে ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি।
অহনা ধীরে ধীরে নেমে পরলো ঘর থেকে।কুয়াশা ঢাকা ভোরের আবছা অন্ধকারে এই
প্রথম নিজের ইচ্ছায় বাড়ির বাইরে পা বাড়ালো। বের হবার আগে লিখে রেখেছিল
রাজিবের জন্য দুটো কথা।“অনেক চেষ্টা করেছিলাম তোমাকে নিয়ে সুখে থাকার।
তোমার মুখের দিকে চেয়ে শত অন্যায় মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ মনে হল তোমাকে
বিয়ে করা আমার জীবনে ছিল একটা মস্তবড় ভুল। যে স্বামী তার স্ত্রীর উপর
অন্যায় হচ্ছে দেখেও চেয়ে চেয়ে দেখে, সেই স্বামীর স্বামী হবার কোন যোগ্যতা
নেই।আমি যে ভুল করেছিলাম তা প্রথম যেদিন তোমার বাড়িতে পা রেখেছিলাম সেদিনই
টের পেয়েছিলাম। তবুও ভুলটাকে নিয়তি মনে করে জীবনটাকে সামনের দিকে এগিয়ে
নিয়ে যাবার বাসনা ছিল।কিন্তু এখন দেখলাম যেই তোমাকে নিয়ে জীবন সাজাতে
চেয়েছি সেই তুমিই আমার আশে পাশে কোথাও নেই।আমার চারিদিক ফাঁকা।বিপদে
অনেকবার হাত বাড়িয়েও কাউকে পাইনি আমি। তাই আর নয় ভুলে ভরা জীবনটাকে বয়ে
বেড়ানো।
কুয়াশা ঢাকা সকাল বেলা।বাজারের দু’একটা চায়ের দোকানে কেতলি থেকে ধোয়া
উঠছে।সামনে বেঞ্চের উপর বসা লোকগুলোর কারো কারো হাতে গরম চায়ের কাপ।পাশের
সরু রাস্তাটি থেকে বের হল অহনা।
প্রথম মন্তব্য-এইডা জালাল মিঞার পোলা ওই রাজিব্যার বৌ না?
দ্বিতীয় জন-মনেতো অয় তাই।
তৃতীয় ব্যক্তি-এই সকাইল্যা একলা একলা কৈ যায়?
চতুর্থ মন্তব্য-মনে অইতাছে কোন গন্ডগোল আছে।হুনছি রাজিব্যার মা নাকি
ভালনা।বেটার বৌরে অনেক জ্বালায়।আহারে ক্যামন সোন্দর মাইয়াডা।কোন দু:খে যে
রাজিব্যারে বিয়া করলো!
শেষ মন্তব্য-মনে অয় বাড়ি থিকা বাইর কইর্যা দিছে শাশুড়ি।
ARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|