[প্রথমপাতা]

 

 

 

জাপানে মৈমনসিংহ গীতিকা'র মহুয়া পালা মঞ্চস্থ

 

New Page 2

 

 

কাজী ইনসানুল হক ।। নভেম্বর ২৫, ২০১৩ ।।

গত ২৩ নভেম্বর শনিবার টোকিওর মেগুরোস্থ পারসিমন হলে মঞ্চস্থ হলো মৈমনসিংহ গীতিকা'র গীতিনাট্য মহুয়ার পালা। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ময়মনসিংহ থেকে আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ৫ সদস্যের শিল্পী দল।

বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে টোকিওর এই বৃহৎ হলে প্রায় ৪ শতাধিক দর্শক মন্ত্রমুগ্ধের মত শিল্পীদের পরিবেশনা দেখেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সহ প্রচুর জাপানি ও জাপানে বসবাসরত বিদেশিরা বাংলাদেশের আদি গ্রামীন চিরায়ত লোকগাঁধা আমন্ত্রিত শিল্পীদের সাবলীল পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে উপভোগ করেন। ময়ময়নসিংহ অঞ্চলের প্রচলিত পালা গান গুলোকে একত্রে মৈমনসিংহ গীতিকা বলা হয়। এই গান গুলো প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে আসছে। তবে ১৯২৩ থেকে ১৯৩২ সাল সময়ের মধ্যে ড. দীনেশ চন্দ্র প্রথম এই গান গুলো গীতিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।

 

মৈমনসিংহ গীতিকা সংকলিত হলে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উচ্ছসিত হয়ে ড. দীনেশ চন্দ্রকে সাধুবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লেখেন। তিনি বলেন, বাংলা প্রাচীন সাহিত্যের মঙ্গল কাব্য, প্রকৃতি কাব্য গুলো ধনীদের ফরমাসে ও খরচে খনন করা পুষ্করিণী কিন্তু মৈমনসিংহ গীতিকা বাংলা পল্লী হৃদয়ের গভীর স্থল থেকে স্বত উৎসারিত, উৎস, অকৃত্তিম বেদনার স্তব্ধ ধারা। বাংলা সাহিত্যে এমন আত্মবিস্তৃত রস সৃষ্টি আর কখনো হয়নি।


'মহুয়া'র রচয়িতা দ্বিজ কানাই। সাপুড়ে সম্প্রদায়ের এক কন্যার প্রেম এবং ভালোবাসার কারণে আত্মহননের এই উপাখ্যান মানুষকে যুগ যুগ ধরে কাঁদিয়ে আসছে।

টোকিওতে এই পালা দেখতে আসা দর্শককূল বেশ উপভোগ করেছেন তা বোঝা যায় অনুষ্ঠান শেষের পরও শিল্পীদের সাথে ছবি তোলা ও গেটে জটলা পাকা সবার আড্ডা দেখে। শেষ পর্যন্ত হল কর্তৃপক্ষ ঘন্টা বাজিয়ে এবং অনুরোধ করলে সকলে হল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।

রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তার বক্তব্যে এই আয়োজনে প্রবাসীদের ঐকান্তিক সহযোগিতা ও দূতাবাসের সকলের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

 

জাপান প্রবাসী ক'জন ব্যবসায়ী শিল্পীদের হাতে সৌজন্য হিসেবে কিছু অর্থ তুলে দেন। জাপানে নিযুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত মিস মোহাউ এন ফেকো স্বপরিবারে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন এবং বলেন, আমি এই গান, এই নাচে আফ্রিকাকেও খুঁজে পাই। নাচ-গান এগুলো সার্বজনীন, দেশ-কালের কোনো প্রভেদ নেই। তিনি দ্বিতীয়বার মঞ্চে উঠে সবার সাথে ছবি তোলেন।


জাপান ফাউন্ডেশনের জনাব আনদো যিনি ইতালিতে জাপানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং সেই সুবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনকে ইতালি থেকেই পরিচিত ছিলেন তিনিও বাংলাদেশের লোকগাঁথা উপভোগ করতে পেরে কৃতজ্ঞতা জানান।

জাপান পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের বাংলাদেশ ডেস্কের প্রধান আকেমি সুতো দর্শকদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। সুতো বাংলাদেশে জাপানি দূতাবাসে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। তিনিও মঞ্চে তার অনুভূতির কথা জানান।

প্রবাসী শিল্পী কামরুল হাসান লিপুর বাংলাদেশের গ্রামীন অবয়ব ফুটিয়ে তোলা মঞ্চের অংকনটি ছিলো বিশেষ ভাবে দৃষ্টিনন্দন।

কামরুল আহসান জুয়েলের উপস্থাপনায় "মহুয়া" গীতিকাব্যটি ইংরেজি ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ করে শোনানো হয়। এতে উপস্থিত বিদেশিদের পক্ষেও পালাটির মর্মার্থ বোঝা সহজ সাধ্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ থেকে আগত আমন্ত্রিত শিল্পীরা হলেন- মোঃ শহীদুল ইসলাম লস্কর, বেলায়েত হোসেন খান, মোঃ নাজমুল হক, প্রতিমা বর্মন ও রাজিয়া আখতার। তারা সবাই পুরো সময়টাই মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন। শিল্পীরাও তাদের জাপান সফরের জন্যে রাষ্ট্রদূত সহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

জাপানে আমরা সব সময়ে নামি-দামি শিল্পীদের অনুষ্ঠান দেখি। এই প্রথম বাংলাদেশের একটি জেলা শহর থেকে লোকশিল্পী এনে একটি জমকালো বর্ণময় আয়োজন করার জন্যে রাষ্টদূত মাসুদ বিন মোমেনকে সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ থেকে একেবারে সাদামাটা চিরায়ত ঘরানার লোক সাংকৃতির শিল্পীদের এনে অনুষ্ঠান আয়োজন করলে দেশের প্রতি আমাদের যে দায়বদ্ধতা তার কিছুটা হ্রাস হবে।


 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

 

[প্রথমপাতা]