|
||
|
ধারাবাহিক উপন্যাসঃ হৃদয়ের এপিঠ-ওপিঠ (পর্ব-২১)
- শাশ্বত স্বপন -
রুমে ঢুকল একজন দর্জি, হাতে ফিতা। ফেলে দেওয়া প্যান্ট হাতে নিয়ে বুয়া
দর্জির পেছনে দাঁড়াল। দর্জি লোকটি তার সাথে শিশু সুলভ কথাবার্তা বলতে শুরু
করল। সুস্থ্য অবস্থায় তার দোকানেই সে সব কিছু বানাত। এ পরিবারে সে একজন
প্রাইভেট টেইলার। তার কাছ থেকে ফিতা নিয়ে খেলতে লাগল। আমি ওকে আদর করে ফিতা
হাতে নিলাম। দর্জি আমার জামা-কাপড়ের মাপ নিয়ে চলে গেল। আমি অবাক হলাম। এই
বোধহয়, তাদের দেওয়া শুরু হলো। আমি ওকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে ঘুমের ট্যাবলেট
খাওয়ালাম। ও আমাকেও খাওয়াতে চাইল। আমি মিছিমিছি খেলাম। ও খুশি হলো। দু’জনে
ছাদে গেলাম। সাবধান করে দেওয়া হলো যেন, সে লাফ না দেয়। আমি ওর হাত ধরেই
রইলাম। ও দৌঁড়াতে চাইল। আমি নিষেধ করলাম। ছাদে অসংখ্য ফুলের বাগান। ফুল
গাছের পাশে ফুলের নেম-প্লেট দেওয়া আছে। এতসব ফুলের নাম জীবনেও শুনিনি। সব
বিদেশি ফুল। একজন মালীও আছে। পাশে তার জন্য ছোট্ট একটা রুমও আছে। উনি
বোধহয়, ওখানে থাকেন। অদূরে সুন্দর একটা বাথরুমও আছে। বিরাট বড় ছাদ। দুই
দালান সংযুক্ত করে প্রসারিত। মালী আমাদের ফুল দিল। ন্যান্সি খুশিতে নেচে
নেচে প্রজাপতি ধরতে লাগল। আল্পনার সাথে ঘটে যাওয়া কোন এক ঘটনার পর থেকে আমি
ফুলকে ঘৃণা করতে শুরু করি। আজ পর্যন্তও ফুলকে ভালোবাসতে পারিনি। ফুলের
মূল্য আমি দিতে পারি না। ফুলকে কেন জানি ভয় পাই--ভালো লাগে না। আমি জানি, এ
আমার এক অসুস্থতা। ইচ্ছে করলে হয়তো এ ব্যাপার সুস্থ্য হতে পারি কিন্তু
ইচ্ছা করে না। ফুল আহা মরি তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হিসেবে কখনও আমার
কাছে মনে হয়নি। পেটে ক্ষুধা নিয়ে সৌন্দর্য চর্চা বিড়ম্বনা ছাড়া আর কিছুই
নয়। কখনও কোনভাবে ফুল হাতে আসলে তা হাতের আঙুলের চাপে পিষে যায় নতুবা
পকেটস্থ হয়ে যা হবার তা হয়। মালীর দেওয়া বিদেশি ফুল প্যান্টের পকেটে
রাখলাম। সে আমাকে কি যেন আকার-ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি
না। এই ছাদ থেকে সে ফ্রান্সিকে দেখত--তাই বোঝাতে চাইছে কিনা--বুঝতে পারছি
না। এক ফ্রান্সিস ছাড়া আর সবাইকে সে ভুলে গেছে। আমার বিশ্বাস হতে চায় না।
ন্যান্সি কি অভিনয় করছে? না, না সে কি সম্ভব! পাগল তত্ত্ব বোঝা এত সহজ নয়।
কিন্তু লিখতে তো বেশ পারে। যেহেতু সে ফ্রান্সিস বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান
হারিয়েছে সেহেতু ঐ শব্দটা স্মৃতি কক্ষে জমে আছে। আর বাকি সব...কোথায় গেছে?
হ্যাঁ, সেটাও প্রশ্ন। মস্তিস্কের কোন কক্ষে তালাবদ্ধ হয়ে আছে; নাকি শূন্যে
হারিয়ে গেছে, কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এইটুকু
বুঝি, সে ঐদিন থেকে পৃথিবীতে দ্বিতীয় জন্ম নিয়েছে। সত্যিকারের শিশুর মতো
নয়--বেশ বৈচিত্র্য নিয়ে।
ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. |
লেখকের আগের লেখাঃ
|