[প্রথমপাতা]

 

 

 

অন্তবর্তী সরকার-ই যদি হয়; নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি কেন নয়?

 


মোমিন মেহেদী

আওয়ামী লীগের অন্তবর্তী সরকারের রূপরেখায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যা রেখেছে তা হলো- শেখ হাসিনাকে প্রধান করে ১১ সদস্যের সরকারে আওয়ামী লীগের ৫, বিএনপির ৩, জাতীয় পার্টির ১ ও বামদের ১ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১১ সদস্যের একটি অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণ করেলো, আওয়ামী লীগ কেবল নিতেই জানে; দিতে জানে না। যদিও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের ধারনা, এ ধরনের সরকারের অধীনে একটি অবাধ গ্রহণযোগ্য এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব হবে। এই সরকারে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা অনুযায়ী- বিএনপির তিনজন, এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির একজন, বাম দলগুলোসহ মহাজোটের অন্তর্গত অন্য দলগুলো থেকে একজন এবং আওয়ামী লীগের ৫ জন নির্বাচিত এমপি নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের একটি উপদেষ্টামন্ডলি গঠিত হবে। আর এই সরকারকে নেতৃত্ব দেবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু আগে এমপিরা পদত্যাগ করবেন এবং তারা রাষ্ট্রপতিকে জামায়াত ছাড়া অন্য দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে একটি উপদেষ্টা মন্ডলি গঠনের জন্য অনুরোধ জানাবেন। রূপরেখার খসড়ায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য সব দলের নির্বাচিত এমপিদের একটি তালিকা দেয়া হবে। এ তালিকা পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে একটি নিরপেক্ষ অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করবেন এবং এর সদস্যদের শপথ পাঠ করাবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি অন্তবর্তীকালীন সরকারের সদস্যরা সরকারের দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজও পরিচালনা করবেন। অন্তবর্তীকালীন সরকারের সদস্যরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি-না, তা সব দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে বলে যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে, সে ঘোষণার পর আমার কেবলই মনে হচ্ছে যে, এখানে নতুন প্রজন্মের রাজনীতি সচেতন একজন প্রতিনিধিকে বিশেষভাবে রাখা প্রয়োজন। কারন হিসেবে বলতে গেলে বলতে হবে- ৩৮ শতাংশ ভোট এখন নতুন প্রজন্মের। সেই নতুন প্রজন্মের পক্ষের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী একজন প্রকৃত তরুণ এই রুপরেখায় যোগ করলে স্বাধীনতার স্বপক্ষের তরুণ প্রজন্ম প্রত্যয়ে পথ হাঁটবে। তারা অন্তত এতটুকু বুঝবে যে, তাদের কথা বলার জন্যও একজন প্রতিনিধি অন্তবর্তীকালিন সরকারের মধ্যে রয়েছে। অতএব, ভোট দিতে গিয়ে কোন কুন্ঠা বা সংশয় নয়; নিবিঘেœ-নির্দ্ধিধায় রায় দিয়ে আসবে বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধুদেরকে। যাদের কাছে টেন্ডারবাজী-দলবাজী-সন্ত্রাসী মূখ্য নয়। মূখ্য হলো- দেশ এবং দেশের মানুষ।

অন্তবর্তীকালিন সরকারের একটি বিষয় খুব ভালো লেগেছে, আর তা হলো- এই সরকারের কোন প্রতিনধি যদি নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে তারা রাষ্ট্রের পতাকাবাহী গাড়িসহ কোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় সুবিধা নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন না। আর এ ধরনের একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠন করতে সংবিধানে কোনো রকমের সংশোধনী আনারও দরকার হবে না।
আওয়ামী লীগ সূত্রের দাবি, মহাজোটের বেশিরভাগ সদস্যই চাইছেন বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার সময় ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে দূরে রাখতে। বিরোধী দলের সঙ্গে অন্তবর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে আওয়ামী লীগ কথা বলতে চায়। কিন্তু অতীতের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সংবিধান মেনে আলাপ আলোচনা করে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে। সংলাপে প্রস্তাবিত অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাজ, ক্ষমতার বণ্টন এবং কীভাবে এই সরকার নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করবে তা নিয়ে আলাপ হতে পারে।

আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যদি অন্তবর্তীকালিন সরকারের সহায়তায় আবারো ক্ষমতায় আসে, আমরা কি ফিরে পাবো এমন বাংলাদেশ; যেখানে বিশ্বজিতের মত কোন তরুণকে আর রাজপথে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হবে না; যেখানে নিরাপদ থাকবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ? প্রশ্নের পর প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে বলেই বলছি, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি নিয়ে এই অন্তবর্তীকালিন সরকার গঠন করুন। তা না হলে দেশের রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্ম আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক অপতৎপরতা রুখে দেবে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে গত নির্বাচনে নির্বাচনী ইশতেহারে যে স্বপ্ন শেখ হাসিনা দেখিয়েছিলেন; সেই স্বপ্নের এক আনিও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং নতুন প্রজন্মের উপর নেমে এসেছে নির্যাতনের স্টিম রোলার। বিশ্বজিতের মত অসংখ্য তরুণকে কুপিয়ে আহত করেছে-নিহত করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, নতুন প্রজন্মের বুদ্ধিজীবি হিসেবে ব্যাপক ভূমিকা প্রদানকারী ব্লগারদেরকে প্রেফতার করা হয়েছে-করা হয়ে নির্যাতন-খুন, নতুন প্রজন্মের আন্দোলন শাহবাগ আন্দোলনকে গলা টিপে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছে, বেকারত্বের অভিশাপে জরজরিত তরুণদেরকে হতাশাগ্রস্থ করে তুলেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় করণ করে শিক্ষার মান নিন্মগামি করেছে। অসংখ্য অন্যায়ের দোসর এই আওয়ামী লীগকে যদি ক্ষমতায় আসতে হয়; নতুন প্রজন্মের রায়েই আসতে হবে। অতএব, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি নিছেন অন্তবর্তীকালিন এই সরকার গঠিত হোক, তা আমার মত শত শত লক্ষ তরুণের প্রত্যাশা।
এক্ষেত্রে একটি কথা বলে রাখি। কথাটি হলো-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান সম্প্রতি একুশের রাত নামক এক টক শোতে বলেছিলেন, এই অন্তবর্তীকালিন সরকার জনগন মানবে না। তারা আশায় আছে তত্বাবধায়ক সরকারের। আমি বিষয়টির সাথে পুরোপুরি একমত না হলেও এতটুকু বলতে পারি যে, যদি অন্তবর্তীকালিন সরকারে নতুন প্রজন্মের রাজনীতিক হিসেবে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী যদি কোন যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিনিধি হিসেবে জায়গা না পায়, তখন নতুন প্রজন্মও সেই তত্বাবধায়কের দিকেই দৃষ্টি ফেলবে। কেননা, তত্বাবধায়ক সরকার আর যাই হোক কখনোই নতুন প্রজন্মকে নিরাশ করবে না।
নিরাশা নয়, হতাশা নয়, জ্বলুক আশার আলো। আর সেই আলো যেন হয় আগামী গড়ার জন্য নিবেদিত। আমরা রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য নতুন যে কোন যুদ্ধে যেতে যেমন প্রস্তুত; তেমন প্রস্তুত নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্যও। আর তার প্রমাণ শাহবাগ থেকে সারা দেশে সাহসের সাথে গণজাগরণ মঞ্চ এবং যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীর পাশাপাশি শিবির-জামায়াতি-ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বয়কটের আন্দোলন। যদিও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি আজ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বাস্তবায়নের জন্য নিবেদিত। কিন্তু জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, ইসলামী ব্যাংকসহ সকল ধর্ম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে নিরব। কেননা, এরা ইসলামী ব্যাংকের টাকাতেই আবার ক্ষমতায় আসার নকশা করে বসে আছে। যে কারনে যত যা কিছুই বলছি, এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে।

এরা আসলে স্বাধীনতার ধোয়া তুলে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। পার্থক্যটা হলো বিএনপি সরাসরি ইসলামী ব্যাংক, জামায়াত-শিবিরের সহায়তা নেয়; আর আওয়ামী লীগ গোপনে। এমতবস্থায় আমরা রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্ম নিবেদিত থাকবো বাংলাদেশের জন্য। সেই কাজটি করতে গিয়ে আমাদেরকে সুক্ষ্মভাবে অংক করতে হবে। সেই অংকের ফলাফল অনুযায়ী রায়ও দেবো আমরা। তবে বলা বাহুল্য অন্তবর্তীকালিন সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নতুন প্রজন্মের পক্ষ থেকে একজনকে না নিলে, সেই শুরুটা হবে অন্তবর্তীকালিন সরকার হওয়ার সাথে সাথেই। আমরা দেশের পক্ষে। দলের বা গোষ্ঠ্রিতো নয়-ই; কোন দূর্নীতিবাজ-সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদেরও পক্ষে নই...

মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.  

[প্রথমপাতা]