প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে জাপানে আদম পাচার

 


কাজী ইনসানুল হক

কন্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, মমতাজ আর কোম্পানির প্রধান শাকিবরা কী অধরাই থেকে যাবেন? আগামী ১১ ও ১২ই এপ্রিল ২০১৫ টোকিওর শিবাশিমিন হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিশেষ কনসার্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শিল্পী পরিচয়ে প্রায় ১৭০ জন আদম পাচার এখন প্রায় চুড়ান্ত। শিল্পী হিসেবে কুমার বিশ্বজিৎ ও মমতাজ সহ তাদের ব্যন্ডের ক'জন সহ কিছু উদীয়মান পারফরমার জাপানে আসছেন। জাপানে বাংলাদেশকে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান একজন প্রতিমন্ত্রী সহ ৫ জন সাংসদ সেখানে উপস্থিত থাকবেন অথচ বাংলাদেশের দূতাবাস তা অবগত নয়।
 


মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন স্পষ্টই জানিয়েছেন যে তিনি এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ভিডিও লিঙ্ক (http://youtu.be/lx9osJejAog)
 

 

 

পান প্রবাসী দু'জন নেওয়াজ শরীফ ও আবুল খায়ের সহ চিওদা পলিটিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান জাপানি নিনুমিয়া জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে এই দুষ্ট চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন, মানব পাচারের এই ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের আড়ালে নয় প্রকাশ্যে ফিয়েস্তা নামের একটি কোম্পানি মানব পাচারের বাংলাদেশের অংশ সামলাচ্ছেন। এই কোম্পানির নির্বাহী নকিব চৌধুরি। আরো চমকৃত হওয়ার বিষয় এই কোম্পানির চেয়ারম্যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে সাকিব আল হাসানের বিশাল পোট্রেট চোখে পড়ে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
 


এই দুষ্ট চক্রটি গত ডিসেম্বর মাসে একই ভাবে কনসার্টের নামে জাপানে বেশ কিছু আদম পাচার করেন। সে সময়ে শিল্পী হিসেবে এসেছিলেন আপেল মাহমুদ, মিলা ও হাসান সহ বেশ ক'জন মডেল ও ড্যান্সার। কোনো অনুষ্ঠান হয়নি, শিল্পীরা সাইতামা'র ওয়াশিংটন হোটেলে ৫/৬ দিন অলস কাটান এবং এক সময় আদাম রেখে নিজেরা দেশে ফিরে যান।

প্রশ্ন হচ্ছে আদম ব্যাপারীদের সহায়তাকারী শিল্পীরা প্রায়ই বলেন আদম বিষয়ে তারা জানেন না। এটা হাস্যকর যুক্তি। কে হ্যান্ডস কে আদম এটাতো তাদের না জানার কথা নয়। বরং অস্বাভাবিক টাকার একটি অঙ্কই তাদের বিবেককে বিকিয়ে ফেলে। ফিয়েস্তার চেয়ারম্যান হিসেবে জাপানে আদম পাচারের দায় সাকিব যুক্তিতে অস্বীকার করবেন? অতীতে কনসার্টের নামে আদম পাচারের কারণে হানিফ সংকেতের মত প্রতিথযশা ব্যক্তিও জাপান অভিবাসন বিভাগের নজরদারিতে ছিলেন, নারিতা বিমানবন্দর থেকে ফেরৎ পাঠানো হয়েছে বেশ ক'জন শিল্পীকেও।

প্রবাসী কমিউনিটিতে গত ডিসেম্বরে মিসিয়ে কনসার্টের নামে আদম পাচারের বিষয়টি জানা যায়। প্রবাসীরা চায় সরকারি প্রচেষ্টায় এবং অলিম্পিক ২০২০ আয়োজনের কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর শ্রমিক আসুক কিন্তু হাতে গোনা ২/৩ জন লোকের কারণে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ১৪/১৫ লক্ষ টাকা খুইয়ে মানবেতর জীবন যাপন করবে তা কারোই কাম্য নয়। হিউম্যান ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত প্রবাসী এবং জাপানিদের বিষয়েও জাপান সরকারকে অবহিত করা জরুরি।

এ সম্পর্কে কয়েক জন প্রবাসীর মন্তব্যঃ

জাপান শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছালেহ মোঃ আরিফ বলেন, জাপানে বাংলাদেশের প্রচুর সংখ্যক নাগরিক আসুক এটাই আমরা চাই। ২০২০ সালের অলিম্পিক উপলক্ষ্যে কয়েক লক্ষ বাংলাদেশের শ্রমিক জাপানে আসতে পারে সেটা দেশের জন্যে সম্ভাবনাময়। এ ধরণের আদম পাচারের মাধ্যমে লোক আসলে জাপানের অভিবাসন বিভাগ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া কঠিনতর হবে। এমনিতেই এখন যারা আসছে তারা রিফিউজি হিসেবে এসে সরকারের নামে দুর্নাম ও মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে এতে দু'দেশের মধ্যেকার ইতিবাচক সম্পর্কে প্রভাব পড়ছে। এ ধরনের কার্যক্রম শক্তহাতে দমনের জন্যে জাপান প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়া জরুরি।

বিএনপি জাপান শাখার সাধারণ সম্পাদক মীর রেজাউল করিম রেজাঃ এই লজ্জাজনক ও অবমাননাকর। এতে বাংলাদেশ জাপান সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভয়াবহ অবিশ্বাস জন্ম নেবে। বৈধ ভাবে যারা জাপানে থাকেন তারা তাদের আত্মীয় স্বজনদের জাপানে আনতে সমস্যায় পড়বেন। দেশের সাথে সুসম্পর্ক থাকলে এমনই বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ জাপানে আসার সুযোগ পেতে পারেন। সেই সুযোগটা যেন নষ্ট না হয়। আর প্রবাসী সমাজে যারা এই ন্যাক্কারজনক কাজ করছেন তাদের চিহ্নিত করে সামাজিক ভাবে তাদের মোকাবেলা করা জরুরি। এদের প্রতি ঘৃণা।

জাতীয় পার্টি জাপান শাখার সভাপতি নাবী উল্লাহ আসিফ কমিউনিটি নিউজকে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ ভাবে অবৈধ আদম ব্যবসার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সব পক্ষই। অবৈধ ভাবে এসে জাপানে কিছু করার সুযোগ একেবারেই নেই, তাদেরকে এতো টাকা খরচা করে শেষ পর্যন্ত হয়তো ফিরে যেতে হবে। প্রতারণার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের সত্যিকার ভিসা তুলতে সমস্যায় পড়বেন। একই ভাবে বাংলাদেশ থেকে আগত ব্যবসায়ী বা প্রবাসীদের আত্মীয়-স্বজনরাও ভবিষ্যতে ভিসা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন। স্বার্থপর লোভী এসব মানুষদের জন্যে দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কাজী মাহফুজুল হক লালঃ জাপান-বাংলাদেশের মধ্যে এখন চমৎকার সম্পর্ক বিরাজমান। এদেশে প্রচুর বিদেশীর প্রয়োজন। আমরা চাই শ্রমিক থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্যে এ দেশের দরজা উন্মুক্ত হোক। ছাত্রদের জন্যে পড়াশোনার সুযোগ এখানে আছে, টেকনিক্যাল শিক্ষার সুযোগ জাপানে অনেক বেশি, এই সুযোগ গুলোই কাজে লাগানো উচিত। বৈধ পথেই জাপানে অভিবাসন সম্ভব। আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে ১৪/১৫ লাখ টাকা খরচ করে জাপানে এসে মানবেতর জীবন-যাপনের এই প্রক্রিয়ায় কেবল আদম ব্যাপারীরাই বিত্তবান হয় -ভুক্তভুগীরা তাদের টাকা ওঠাতেই এক যুগ পার করে ফেলেন। আর এদেশে কনসার্ট হলে মন্ত্রী-এমপিরা দূতাবাসে খবর নিতে পারেন। অবৈধ ভাবে যারা আসবেন তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

জাপান শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আসলাম হীরা কমিউনিটিকে বলেন, এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে যারাই এ ধরনের কাজে সহায়তা করছে তাদের চিহ্নিত করা উচিত। গত ডিসেম্বরেও এই চক্র কনসার্টের নামে আদম পাচার করেছে। জাপানে অনুষ্ঠান হবে জাপানের দূতাবাস জানবেনা, -এ হতে পারেনা। দেশকে বেচে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার হীন উদ্যোগকে দমন করতে হবে।

বিএনপি জাপান শাখার সহ সভাপতি আলমগীর হোসেন মিঠুঃ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে আদম পাচারের খবরটি জেনে মর্মাহত হয়েছি। আমি এই কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এর সাথে সম্পৃক্ত দ্রুত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। প্রবাসীদের উচিত সামাজিক ভাবে এই আদম ব্যাবসায়ীদের বয়কট করা। এ ধরনের কার্যক্রমে বৈধ ভাবে জাপানে আসার পথ রুদ্ধ হবে।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

লেখকের আগের লেখাঃ