প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

বন্যায় রোগবালাই আমাদের করণীয়
 

 

 

ডা. স্বপন কুমার মন্ডল
সহকারী অধ্যাপক, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ


বাংলাদেশের ঋতুকাল এখন আর পন্চিকা মেনে চলে না।বর্ষা শেষ, শরতের আশ্মিন মাস চলছে। কখন ঝুম বৃষ্টি, কখন সারাদিন রোদ-বৃষ্টি-ঘাম, সেই সাথে ভাটি বাংলার কোথাও পানি বাড়ছে, কোথাও কমতে শুরু করেছে। কাদাপানি মাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে রোগবালাই নিয়ে গ্রাম বাংলার মানুষের বাড়ি ফিরতে হয়। যেভাবেই হোক না কেন, এই বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের ময়লা পানির কারণে জ্বর, হাঁচি, কাশি, সর্দি, মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া, খোস-পাঁচড়া, ত্বকের নানারকম অসুখ-বিসুখ শরীরে এসে ভিড় করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, বিশেষ করে শিশু, বয়স্করা এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা রোগে ভুগছেনÑ ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগী, সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। দীঘায়িত বর্ষা ও পানি বাহিত নানান রোগ নিয়ে এবারের আয়োজনÑ

জ্বর, সর্দি, কাশি
জ্বর, সর্দি, কাশি সাধারণত বৃষ্টির পানি এবং চারদিকে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে বর্ষাকালে খুব বেশি হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম (বয়স্ক এবং শিশুরা), তারা খুব বেশি আক্রান্ত হন। ভাইরাসজনিত হওয়ার কারণে পরিবারের একজনের এই রোগ হলে অন্যরাও ধীরে ধীরে আক্রান্ত হন। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা শরীর ম্যাজম্যাজ ও ব্যথা করে, বারবার হাঁচি হয়, বমি বমি ভাব হয়, চোখ লাল হয়ে যায়, মাথাব্যথা করে, জ্বর ৩-৫ দিন স্থায়ী হতে পারে। খুব বেশি সর্দি বা ঠা-া লাগলে এবং বেশিদিন স্থায়ী হলে ট্রাকিও ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক রোগ দেখা দিতে পারে। তবে জ্বর খুব বেশি হলে এবং ৫-৬ দিনের বেশি ¯’ায়ী হলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ত্বকের রোগ
বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ও ভেজা আবহাওয়ার কারণে ত্বক বা স্কিনের খোসপাঁচড়া, ফাঙ্গাস ইনফেকশন, প্যারনাইকিয়া, স্ক্যাবিজ-জাতীয় কিছু ছত্রাক অসুখ হয়ে থাকে। ভিজে শরীর ভালোভাবে না মুছে, ভিজা কাপড় ভালোভাবে না শুকিয়ে গায়ে দেওয়া, রোদ না থাকায় স্যাঁতসেঁতে ঘর ইত্যাদি কারণে বর্ষাকালে ত্বকের বেশ কিছু অসুখ হয়। তাই বর্ষার এই অসুখ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হলে সব সময় তোয়ালে, ব্রাশ, চিরুনি সবকিছু পরিষ্কার-পরিচছন্ন ও শুকনো রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি শরীর এবং মাথা থেকে ভালোভাবে মুছতে হবে, বিশেষ করে হাত ও পায়ের আঙুল ভালোভাবে ধুয়ে মুছতে হবে। প্রতিদিন অন্তত দুবার জীবাণুনাশক সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করতে হবে, রাস্তার নোংরা ও বন্যার পানি এড়িয়ে চলতে হবে। একান্তই যদি চলাচল করতে হয়, তবে বাড়িতে ফিরে অবশ্যই ডেটল-মিশ্রিত পানি দিয়ে পা ও স্যান্ডেল ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপরও যদি এ রোগগুলো দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

ডায়রিয়া, আমাশয়
বর্ষাকালে অন্য অসুখের মতো নানা ধরনের পেটের অসুখ যেমনÑ ডায়রিয়া, আমাশয় দেখা দেয়। পানির দ্বারা এই রোগ হয় বলে এটাকে পানিবাহিত রোগও বলা যায়। শিশু ও বয়স্কসহ সব বয়সের মানুষের এই অসুখ হতে পারে। এই রোগ থেকে রেহাই পেতে হলে বিশুদ্ধ পানি পানসহ খাওয়ার বাসনপত্র, কাপড়চোপড় পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হবে, অনেক বেশি পানি পান করতে হবে এবং রাস্তার খোলা খাবার পরিহার করতে হবে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন এবং স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। মূলত শিশুরাই এই রোগে আক্রান্ত হয় বেশি। ডায়রিয়ার হাত থেকে বাঁচতে স্বা¯’্যবিধি মেনে চলতে হবে। খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানিতে হাত ধোয়া ও ফোটানো পানি পান নিশ্চিত করলে ডায়রিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব। আর ডায়রিয়া সারাতে ঘনঘন স্যালাইন ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে।

কলেরা
ভয়ানক এই পানিবাহিত রোগটি হওয়ার অন্যতম কারণ দূষিত পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা। ওষুধ আবিষ্কার হওয়ার আগে এই রোগে যে গ্রাম আক্রান্ত হত সেখানকার প্রায় সব মানুষই মারা যেত। কলেরার লক্ষণ হচেছ তীব্র ডায়রিয়া, বমি এবং অত্যধিক দুর্বলতা।

ম্যালেরিয়া
বর্ষাকালের সাধারণ রোগ। স্ত্রী এনোফিলিস মশাই ম্যালেরিয়া জীবাণুর বাহক। এরা জলাবদ্ধ জায়গায় বংশবিস্তার করে। সুতরাং বাড়ির আশপাশের জলাধার, ফুলের টব, পানি জমার মতো জায়গাগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। জ্বর, মাংসপেশি ব্যথা, দুর্বলতা প্রভৃতি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। ৪-৫ দিনের বেশি জ্বর থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

ডেঙ্গু
এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এডিস মশাই এ রোগের বাহক। ডেঙ্গুর লক্ষণ হলÑ জ্বর, সর্বাঙ্গে ও গিটগুলোয় ব্যথা, চামড়ায় র‌্যাশ বা ছোট লাল স্পট। মশার বংশবিস্তার রোধে বাড়ির জলাবদ্ধ জায়গাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি জমতে না পারে।

টাইফয়েড
পানিবাহিত রোগের মধ্যে একটি হল টাইফয়েড। ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পানি বা খাবার এই রোগের জন্য দায়ী। হাত ধুয়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে। যথাসম্ভব রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

ভাইরাস জ্বর
সারা বছর লেগে থাকলেও বর্ষায় এই জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। তিন থেকে সাতদিন পর্যন্ত ¯’ায়ী হয় এই জ্বর, সেই সঙ্গে সর্দি-কাশি, হাত-পা ম্যাজম্যাজ করা, দুর্বলতা, খাবার অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

জন্ডিস
এই রোগের প্রধান উৎস দূষিত পানি। হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের ফলে রোগীর প্রস্রাব হলুদ হয়ে যায়। রোগী দুর্বলতা, বমিভাব, খাবারের প্রতি অনীহাবোধ করে। লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্রম কমতে থাকে।
কৃমি - কৃমির আক্রমন একটি প্রধান পানি বাহিত রোগ।কৃমি হলো এক ধরণের পরজীবি যা অন্ত্রে বাস করে। কিছু কৃমি ডিম্বাণু হিসেবে মানুষের মুখের মাধ্যমে প্রবেশ করে। আবার কিছু লাভা হিসেবে ত্বকের মাধ্যমে প্রবেশ করে। কৃমি অনেক সময় মানুষের যকৃত এবং অন্য অঙ্গতেও আক্রমণ করতে পারে।


কৃমির জীবাণু কিভাবে ছড়ায়-
দূষিত খাবার এবং পানি গ্রহণের ফলে, কৃমিতে আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে,মাটি থেকে শরীরের চামড়ার মাধ্যমে।


কি ধরণের চিকিৎসা আছে-
প্রতি ছয়মাসে বা বছরে শিশুদের কৃমি নাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।শিশুকে খাওয়ানেরা পাশাপাশি বাড়ীর সবাইকে কৃমি নাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে।
কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়-
খাবার ও পানি সবসময় নিরাপদ ও পরিষ্কার হতে হবে।খাবার খাওয়া ও তৈরি করার আগে, খাবার পরিবেশনের সময়, খেলাধূলা করার পর এবং পায়খানা ব্যবহারের পর হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুতে হবে।রান্নার সময় ভালোভাবে শাক সবজি, মাছ, মাংস ধুয়ে রান্না করতে হবে।রান্না করা খাবার ভালোমত ঢেকে রাখতে হবে।পায়খানা (ঞড়রষবঃ) সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।হাতের নখ সব সময় ছোট এবং পরিষ্কার রাখতে হবে।বাইরে বের হওয়ার সময় জুতা বা স্যান্ডেল পড়তে হবে।

পাঁচড়া
লক্ষণ-
দুই আঙ্গুলের মাঝখানে ছোট্ট দানার মত হয়।যৌনাঙ্গে ছোট্ট দানার মত দেখা যায়। শরীরের অন্যান্য অংশে বিশেষ করে চামড়ার ভাঁজে একইভাবে দেখা যায় । দানা চাপ দিলে পানি বের হয়।ভীষণ চুলকালে আক্রান্ত জায়গায় প্রদাহ হয় ও পুঁজ জমে। এ রোগ প্রতিরোধ পরিষ্কার কাপড়-চোপড় পরতে হবে।ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। পাঁচড়া ও খুঁজলির ক্ষেত্রে রোগীকে আলাদা রাখা।পরিস্কার পরিচছন্নতা বজায় রাখতে হবে।দূষিত পুকুরে গোসল না করা।দৈনন্দিন পরিধেয় কাপড় পরিস্কার রাখা।নখ কেটে ছোট রাখা।গামছা, বিছানা ও বালিশ পরিস্কার রাখা।পাঁচড়া ও খুঁজলি সেরে গেলে রোগীর ব্যবহার্য কাপড়-চোপড় বিছানাপত্র ধুয়ে দিতে হবে।
 

 
 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]


 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ