প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

প্রবাসীর সাফল্য

 

 

কাজী ইনসানুল হক
টোকিও থেকে

 


জাপানী ভাষায় প্রবাসী মাহমুদ জাকেরের

আত্নজীবনী প্রকাশ,জাপানী পাঠকদের

কাছে বাংলাদেশের মর্যাদাময় ইমেজ।
————————————————-

প্রবাসী বাংলাদেশী মাহমুদ জাকের তার আত্মজীবনী নিয়ে একটি বই নানান প্রতিকূলতারমাঝে বেশ পরিশ্রম করে জাপানী ভাষায় লিখেছেন। জাপানের মর্যাদাবান প্রকাশনী "গোমাসোভো শিনসা" থেকে প্রকাশিত বইটির নাম "পানৎসু ও ণুইধা আনো হি কারা" বাংলায়রূপান্তর করলে "নগ্ন হওয়ার দিন থেকে,জাপানি সমাজের একজন হওয়া পর্যন্ত " ।ভিন্নসংস্কৃতির ভিন্নধর্মী এক সংগ্রামী জীবনের গল্প নিয়ে লেখা বইটির প্রতি জাপানিজদের অনেকআগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে যার উদহারন, প্রকাশের প্রথম তিনদিনেই ২২৫০ কপি অর্ডার হয়ে গেছে।প্রথম মূদ্রন শেষে দ্বিতীয় মুদ্রন চলছে।

বইটির নামকরণের ঘটনা এবং কারন গুলো বেশ কৌতূহলোদ্বীপক ; ফেনী জেলার দাগনভূইয়া উপজেলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে১৯৯৪ সালের ২২শে এপ্রিল মাহমুদ জাকেরজাপানের সাইতামা শহরের একটি ইউনিভার্সিটিতে ১ বছরের ভাষা শিক্ষা কোর্সে জাপানআসেন।জাপানে প্রবেশের প্রথম দিন তার বড়ভাইয়ের বাসায় (টোকিওর ইতাবাশিকুতে) উঠেন। উল্লেখ্য জাপানে তখন বাংলাদেশী সহ বিভিন্ন দেশের প্রচুর undocumented শ্রমিকঅর্থ সাশ্রয়ের জন্য জাপানে কঠিন মানবেতর জীবনযাপন করতেন যার কারন, সেইসময় তারবড় ভাইয়ের বাসায় গোসলখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা ছিলনা।ক্লান্ত জাকের গোসল করতেচাইলে তার বড়ভাই তাকে পাশের জাপানের আদি সংস্কৃতির পাবলিক কোয়েন গোসলখানায়নিয়ে যান। জাপানিজ দের পাবলিক বাথে প্রবেশ করে বিবস্ত্র হয়ে গোসলের সংস্কৃতি হাজারবছরের পুরনো।প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা জাকের জীবনে প্রথম এটা দেখে হতবাক হয়েমানসিক ভাবে শকট পেয়ে থাকেন।

নগ্ন না হলে গোসলখানায় প্রবেশ করতে পারবেনা।আর গোসল না করে এভাবে থাকার কোনোউপায় ছিলোনা।কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে জাকের নিজের দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কৃতি এবং আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে গাইতে থাকে ( দড়ি ছিঁড়া পরাণ কাইড়া কইরা সর্বনাশ আমার পাগলাঘোড়ারে কই থেইকা কই লইয়া যাস) এই বলে কাঁদতে কাঁদতে গোসলখানায় প্রবেশ করে।গোসলখানার পানির সাথে জাকেরের দুই চোখের অস্রু একাকার হয়ে মিশে যায়..!!জাকেরনিজেকে নিজে বলে নাচতে নেমে ঘোমটা দিয়ে কি লাভ..?? শিখার জন্য এসেছি জীবনেসবকিছুতেই শিখতে হবে।এই বলে জাকের তার গোসল শেষ করে।

ডায়েরী লেখা জাকেরের নিয়মিত অভ্যাস ছিল। জাপানের কঠিন সংগ্রামী দৈনন্দিন জীবনেসেটা আরো প্রবল হয়ে উঠে।জাকের আঘাতে আঘাতে অনেক শক্ত হয়ে উঠে। মানিয়ে নেয়নিজের ভাগ্য এবং কঠিন বাস্তবতারে। পরবর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পার্টটাইম জব সহ জাকেরসফলতার সাথে এগিয়ে যেতে থাকে।জাপানের সরকারি গণমাধ্যম NHK টেলিভিশনআয়োজিত জাপানি ভাষায় বিদেশী ছাএদের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জাকের ১৫০ টা দেশেরছাত্রদের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে। সে সাথে সফলভাবে চার বৎসর স্কলারশিপ পেয়েইউনিভার্সিটি জীবন শেষ করে।

শিক্ষা জীবন শেষে জাপান ইমিগ্রেশনের দোভাষী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কর্মজীবনেতার প্রতিটি দিন ছিলো প্রবাসী বাঙালী কোরিয়া থেকে জাহাজে অবৈধভাবে জাপানে প্রবেশকরা বাঙালিদের নিদারুন কষ্টের কাহিনি নিয়ে..

জাকেরের লেখা বইয়ে সে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে নানান ভাবে তুলে ধরেছেন, বাংলাদেশের গ্রামীন পারিবারিক জীবন, স্বাধীনতা যুদ্ধ,আনন্দময় ও দুঃখ কষ্টের কথা,দুই দেশের সংস্কৃতির তূলনামূলক বিশ্লেষন সহ বাংলাদেশের জাকেরের জন্মবৃত্তান্ত , জাকেরের শৈশব এবং জাপানেজন্মগ্রহণ করা এবং জাপানে জন্ম গ্রহন করা তার সন্তানদের শৈশবের পার্থক্য তুলে ধরেন।

ওসাকা এলাকার সুইতা শহরের মেয়র বইটির সফট কপি পড়ে বিমোহিত হয়ে তাকে পরিবারসহআমন্ত্রন করে মেয়র অফিসে এবং তার বইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং বইয়ের শেষেলিখিত ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যাহা বইয়ের শেষের কলামে সংযুক্ত রয়েছে। জাপানেরমিডিয়াতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই বইটির লেখক মাহমুদ জাকের এখন জাপানের বিভিন্নঅনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছেন।

বইটির প্রকাশনী উৎসব আগামী মে মাসের ২১ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে , ওসাকার সুইতা শহরেরমেয়রের উপস্থিতিতে জাকেরের প্রিয় তিনজন প্রবাসী বাংলাদেশী উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকরতে পারবেন।এমন গৌরবময় অনুষ্ঠানে আমাদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত থাকবেন কিনা এমনপ্রশ্ন করলে জাকের মাহমুদ হাসতে হাসতে বললেন,এই সামান্য কাজে উনি কি শরিক হবেন,তবেউনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে....!!পৃথিবীর অন্যান্য দেশ হলে রাষ্ট্রদূত স্বপ্রনোদিত হয়ে এমনপ্রবাসীকে অনুপ্রাণিত করতেন এমনটা বললে জাকের সেই হাসি দিয়েই নিরুত্তর থাকেন।

জাকেরের বড়ভাই বাকের মাহমুদ আমার জাপানের পুরো তিরিশ বছরের প্রবাস জীবনের

বন্ধু। আমরা একসাথে পত্রিকা প্রকাশ থেকে নানা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডেপাশাপাশি আছি। জাকেরকে আমি প্রথম থেকে চিনি এবং বড়ভাইয়ের বন্ধূ হিসেবে চিরকালশ্রোদ্ধা ও ভালবাসা পেয়েছি।ওর এই বই প্রকাশের সংবাদটি আমাকে প্রচুর আনন্দ দিয়েছে ।প্রকাশনা অনুস্ঠানে উপস্হিত থাকবো বলে আশা রাখি।

মাহমুদ জাকের তার দিনলিপিতে তার জয় পরাজয়ের গাঁথা কথা লিখেছেন, জাপানি পাঠকদেরকাছে প্রবাসে কর্মজীবী বাংলাদেশীদের ইমেজ তার লেখায় সংরক্ষিত হয়েছে।

বইটি হাতে নিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে জাপানের শ্রেষ্ঠ প্রবাসী লেখকের বইটা আমার হাতে, সত্যি আমি সৌভাগ্যবান।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]