ধারাবাহিক
উপন্যাসঃ
কাক-জ্যোৎস্নায় কাক-ভোর(পর্ব-৩)
শাশ্বত স্বপন
বেশ কিছুদিন আগে কালী, মিলন, কল্যাণ, দীপা, নাসরিন,
শিখা--এরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুতুলের বিয়ে দেবে। এই উপলক্ষে আজ তারা
সকাল আর দুপুরের মাঝামাঝি সময়ে একত্র হয়েছে নাসরিনদের বাড়ী। সবাই, যে যাকে
দেখেছে তাকেই বিয়ের দাওয়াত দিয়েছে। তবে অতিথিরা সকলেই ওদের মতই ছোট। সবাই,
সবার বাড়ী থেকে গ্লাস, জগ, বাটি, চট, পিঁড়ি ইত্যাদি এনেছে। অনুষ্ঠানের
আকর্ষণীয় খাবার হল স্পেশাল খিঁচুড়ি। খিচুরীতে দেওয়ার জন্য কেউ কেউ ঝুমকা
ফুল, ডাটাপাতা, পিঁয়াজ, রসুনের ফেলে দেওয়া খোসা, আরো কত কি এনেছে। তাদের
অনুষ্ঠানের এই অখাদ্য অথচ মূল্যবান খাবার এর কারণ হল প্রত্যেকের অভিভাবক
প্রত্যেককে কান মলে দিয়েছে যেন, চাউল, ডাউল না নেওয়া হয়, আগুন নিয়ে যেন,
কোন খেলা না হয়। তবে এই মুহূর্তে এরা নিজেদের শিশু বা বালক-বালিকা হিসাবে
মনে করছেন না। যেন প্রত্যেকেই অভিভাবক। তবে একবারে যারা শিশু তাদের ব্যাপার
ভিন্ন। অনুষ্ঠানের রান্না শেষ। মিলন সবাইকে ডেকে বলতে লাগল, ঐ তোরা সবাই
খেতে বস, আগে খাওয়া, পরে বিয়া--। কথা শেষ না হতেই কল্যাণ বলল, ঐ তোরা
চিৎকার করবি না, চুপ করে বস--
ওদের মোট সংখ্যা ১৮ জন। সবাই কলা পাতায় খিচুড়ী নিয়ে মুখের কাছে এনে অয় অয়
শুরু করেছে অর্থাৎ ওরা খাচ্ছে। কিন্তু কালীর ছোট ভাই জয় সত্যি সত্যি খেতে
শুরু করেছে। কালী তাড়াতাড়ি জয়ের মুখ থেকে অখাদ্য বের করে মুখ পানি দিয়ে ধুয়ে
দিল।
এবার বিয়ের পর্ব। নাসরিন ঘর থেকে একটা পুতুল নিয়ে এলো, পুতুলটি খুব সুন্দর।
কিন্তু ঐ স্ত্রী পুতুলকে বিয়ে করার মত এত বড় বর পুতুল কারো কাছেই ছিল না।
কি আর করা যায়, এই নিয়ে সবাই চিন্তায় মশগুল। হঠাৎ শিশুদের মাঝে চিৎকার শুনা
গেল। চোর ও দুষ্টু বলে পরিচিত সাত্তারকে কেউ দাওয়াত দেয়নি বলে সে বাঘের
মুখোস পড়ে সব খাবার চুরি করে নিয়ে গেছে।
মিলন বলল, থাক, আমাদের সবাইতো খেয়েছে। পরে সাত্তারকে ধরব। তোরা এক কাজ কর
জয়কে বর বানাই।
শিখা বলল, বলিস কি তাহলে জয় যে পুতুলের চেয়ে অনেক বড় হয়ে গেল।
কালী বলল, তাতে কি হয়েছে, কুদ্দুস কাকার বউকে দেখিসনি। অপরিচিত মানুষরা বউকে
কুদ্দুস কাকার পুত্রবধূ নয়তো মেয়ে মনে করে।
হঠাৎ করে নাসরিনের তিন বছরের বোন চুমকী বলে উঠল, “আঁপাঁ, আঁমিঁ বিঁয়াঁ
কঁরুঁমঁ। ”
সবাই হাসতে লাগল ওর কথা শুনে। শিখা আদর করে বলল, “চুমকী তুমিতো বিয়া করবা
না--বিয়া বইবা। ”
কালী আর মিলন বরপক্ষ এবং নাসরিন আর কল্যাণ কন্যাপক্ষ। মিলন আর কালী জয়কে
নিয়ে নাসরিনদের আলুর গুদাম ঘরে গেল। কল্যাণ আর নাসরিন পুতুল নিয়ে নাসরিনদের
বারান্দায়ই রয়ে গেল। এর মাঝে কে কন্যাপক্ষে যাবে, কে বরপক্ষে যাবে--তা নিয়ে
তুমুল হৈচৈ হয়ে গেল । নাসরিনদের বাড়ীতে মা-বাবা, বড় ভাই-বোন কেউ ছিল না
বলেই এত আনন্দ বয়ে গেল। মা, বাবা অথবা বড় ভাই-বোন থাকলে এত আনন্দ করা যেত
না।
বিকাল বেলা। কলেজের ছাত্র শংকর কালী ও জয়কে পড়াচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে শংকর
ওদের বাড়ীতে টিউশনি করছে। আজ পড়াতে এসে শংকর প্রচন্ড রেগে গেল। সংকরের কাছে
আজ কালীর অংক পরীক্ষা ছিল। কালী বলছে সারাদিন সে অংক করতে পারেনি। শংকর ওর
কান ধরে দুইগালে দুইবার চড় দিল। গলার স্বর সপ্তমে উঠায়ে বলল, কি কাজ করেছিলে
সারাদিন? বল কি কাজ করেছিলে? বল-
কালী কোন কথা বলছে না। জয় ভয়ে ভয়ে গলার কম্পন বাড়িয়ে পড়তে লাগল। সে আজ ভাল
করে পড়া শিখেনি।
-- জয়, কবিতা শিখেছ?
--জ্বী, স্যার।
--বল, না থাক লিখ।
--স্যার?
-- কি?
-- কিছু না, থাক।
কালীর বয়স এগার/বার বছর। যতই সে বড় হচ্ছে, ততই সে মোটা হচ্ছে। দেখতে হচ্ছে
অনাকর্ষণীয়। নারীত্বের বিশেষ অঙ্গ বেশ সজাগ হয়ে উঠেছে। শংকর আদর করলেও তার
কেমন যেন লাগে? আবার থাপ্পর দিলেও কেমন যেন শরীর শিহরিয়ে উঠে। শংকর ওর
অনিচ্ছা সত্ত্বেও অংক পরীক্ষা নিয়েছে। একশতে চৌত্রিশ নাম্বার পেয়েছে। অতএব,
তাকে দশ মিনিট কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। জয় কাজী নজরুল ইসলাম এর কবিতার
দশ লাইন লিখেছে। তবে কাজী নজরুল ইসলাম লিখতে গিয়ে কাজী নজরুল হসলাম লিখেছে।
শংকর ওকে একটা ধমক দিলেও খাতায় গুড লিখেছে। জয় খুশীতে আটখানা হয়ে কালীর
নিষেধ করা কথা বলে ফেলল।
-- স্যার, দিদি ‘পুতুল বিয়ে’ খেলেছে। দিদি শ্বাশুরী হয়েছে।
--তুমি শ্বাশুরী হয়েছ! এই জন্য এই অবস্থা!
কালী রাগত চাহনীতে জয়ের দিকে তাকায়। ঠিক সেই মূহুর্তে শেফালী ঘরে ঢুকে
শংকরকে বলল,
-- ওকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কান ধরে দাঁড়া করিয়ে রাখবে। সারাটা দিন নাসরিনদের
বাড়িতে পুতুলের বিয়ে খেলেছে। কাজের সময় একশ বার ডেকেও পাই না। সারাদিন
পড়তেও বসেনি।
-- এই যে দেখেন অংক পরীক্ষায় একশতে চৌত্রিশ পেয়েছে। কেমন লাগে মেজাজটা--
শেফালী রাগে ক্ষোভে রান্না ঘরে গিয়ে তুলসীকে বলছে, কালীকে আর এ বাড়ীতে রাখা
যাবে না। ওর বাবার সাথে আলাপ করে ওর বিয়ের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করতে হবে।
শ্বশুর বাড়ী গিয়ে বুজুক কাজের কি ঠেলা!
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |