প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

করোনা আতংকের মধ্যেও দেশে চলছে মতলববাজদের তুঘলকি কান্ড

 

 


বৈশ্বিক মহা-দুর্যোগে অদৃশ্য যমদূত করোনার ভয়াল আক্রমনে সারা বিশ্বের মানব সমাজ আজ হতবিহব্বল । ধর্ম-বর্ণ, ধনী-গরীব, শ্রেনী ভেদাভেদ নির্বিশেষে সবার মাঝে ভর করেছে অদৃশ্য করোনা ভাইরাসে মৃত্যু আতংক । ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রীসহ ১৮৫টি দেশের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছিলেন । করোনা ভাইরাসটি কমিউনিজম মেন্টালিটির কিনা জানিনা, এই ভাইরাসটির আক্রমনের ধরনটা শতভাগ কমিউনিজম মেন্টালিটির অর্থাৎ শ্রেনিহীন, এর সংক্রামনে নেই কোন উঁচু-নিচু, ধর্ম-বর্ণ শ্রেনী ভেদাভেদ । যদিও আমাদের হুজুর সম্প্রদায় অর্থাৎ মুফতি, মাওলানা এবং শায়খুল হাদিসরা তাদের ওয়াজে দরাজ গলায় বলছিলেন করোনা আল্লাহর সৈনিক, ওরা মুশরিক কাফেরদের আক্রমন করবে, মুসলমানরা নিরাপদে থাকবে, বাংলাদেশে যেহেতু কুরআনের তাফসির মাহফিল হয়, সেহেতু আল্লার সৈনিক করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আক্রমন করবেনা (মাওলানা কাজী ইব্রাহিম) । আরেক জনপ্রিয় ওয়াজিন মাওলানা আমীর হামজা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আক্রমন করলে কুরআন মিথ্যা হয়ে যাবে । যাহোক, করোনা আতংকে সৌদি আরবসহ সারা ইসলামী বিশ্ব মসজিদকে লকডাউনের আওতাধীন করলেও আমাদের দেশের বহুধা বিভক্ত হুজুররা করোনা প্রসঙ্গে মসজিদ খোলা রাখার ব্যাপারে একমত । আমাদের আলেম সমাজের একঘুঁয়েমী এবং সরকারের নতজানু নীতির কারনে দীর্ঘদিন মসজিদগুলো খোলা ছিল, জানিনা এরই মধ্যে কতজন আক্রান্ত হয়েছেন । তবে করোনার আক্রমনে ঢাকায় একজন মুসল্লীসহ একই মসজিদের মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এবং ইন্ডিয়ায় নিজামুদ্দীনে তাবলীগ জামাতে অনেক করোনা রোগী ধরা পরায় হুজুরদের কিছুটা টনক নড়ে, অবশেষে হুজুরদের সম্মতিতে সরকার মসজিদকে পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও নামাজির সংখ্যা সীমিতকরনে সক্ষম হয়েছেন । তবে তা যথাযথ ভাবে পালিত হচ্ছে না, এমনকি ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়ায় আনসারী হুজুরের নামাজের জানাযায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে । যা আইনের বরক্ষেলাপ এবং করোনা সংক্রমনে সহায়ক । সরকার এবং জনসাধারন সচেতন এবং কঠোর না হলে দেশ-জাতিকে ভয়ংকর ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে হবে ।
বিশেষজ্ঞদের ধারনা ইটালীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের কোয়ারেন্টেইন নিশ্চিতকরনে সরকারী ব্যর্থতা, দিকনির্দেশনাহীন সরকারী ছুটি-যার কারনে জনগন এক ধরনের পিকনিক আমেজ মেতে উঠেছিল । তাছাড়া গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং সরকারের অসচেতন সিদ্ধান্তের কারনে গার্মেন্টস কর্মীদের সামাজিক দূরত্ব না রেখে কর্মে যোগ দান সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস । মোটকথা সরকারের করোনা নিয়ন্ত্রনে সিদ্ধান্ত গ্রহনে ঢিলেমি, হুজুরদের অবিবেচক আস্ফালনের কাছে সরকারের নতি স্বীকার, বিদেশ ফেরত প্রবাসী এবং জনগনের অসচেতনার ফলে ইতিমধ্যে ১৫২ জন মারা গেছে এবং যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জ্যামিতিক হারে ।
উন্নত বিশ্ব যখন এই মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে । আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্যে কীভাবে রুখবো করোনা ভাইরাস, কীভাবে বাঁচবো এবং বাঁচাবো দেশ-জাতিকে ? এই আতংকে দেশ-জাতি নিমর্জিত থাকলেও এরই মাঝে সিলেটের ৩১৩ জন মুফতি মাওলানাসহ আলেম সমাজের নেতৃবৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে মসজিদগুলো রোজার তারাবির নামাজের জন্য পুরোপুরি উন্মূক্ত করার দাবী জানিয়েছিলেন । আমার সাথে অনেকেই একমত হবেন না জানি, তারপরও বলছি- সৌদি আরবসহ সামর্থ্যবান ইসলামী বিশ্বের আলেম সমাজ কোরান-হাদিসের আলোকে ফতোয়া জারি করেছেন বাড়ীতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত, জুম্মা, তারাবি এবং ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য । অথচ ভারত, পাকিস্থানসহ বাংলাদেশের আলেম সমাজ মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ আদায়ে একঘুঁয়েমী আচরন করছেন । বিষয়টা আমার কাছে কিছুটা ধর্মাশ্রয়ী কিছুটা স্বার্থান্বেষী মনে হচ্ছে । একই কোরান-হাদিস অথচ দেশের আর্থিক সামর্থ্য ভেদে ফতোয়া ভিন্নতর কেন । অন্যভাবে নিবেন না, করোনা মহামারীতে মারা গেলে হুজুররা শহীদী মর্যাদায় বেহেস্তে যাবেন, তাই এমন মরণঘাতি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, আমি এমনটা বলছি না । মূলতঃ হুজুররা করোনায় মরলেও ক্ষুধায় মরতে রাজি নয় । ইমাম সাহেবরা জীবিকা নির্বাহ করেন মূলতঃ মসজিদে আসা নামাজীদের দান-খয়রাতে, ইতিমধ্যে মসজিদ প্রায় বন্ধ এবং আসন্ন রোজাতে তারাবি, মিলাদ-মাহফিলসহ বাসা-বাড়ীর দোয়ার অনুষ্ঠানগুলোও অনিশ্চয়তার মুখে । একজন হুজুর সারা বৎসর যা কামাই-রোজগার করেন, এক রোজার মাসেই অনেকটা তার সমান বা কাছাকাছি পরিমান রোজগার করেন । আমরা ঘুনাক্ষরেও ভাবছিনা মসজিদ বন্ধাবস্থায় এই হুজুররা কীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন ধারন করবেন । বিষয়টা একটু সংবেদনশীল ভাবে চিন্তা করুন, সরকার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার জন্য প্রণোদনামূলক সহযোগিতা এবং ত্রাণের ব্যবস্থা করলেও লক্ষ-লক্ষ মসজিদের হুজুরদের কথা কী ভেবেছেন ? নিশ্চয় না । আর সচ্ছল আলেম নেতারাও কী সরকারের কাছে এই সহযোগিতা বা প্রণোদনা দাবী করেছেন ? নিশ্চয় না । কারন সরকার সরাসরি তৃণমূলের হুজুর অর্থাৎ ইমাম সাহেবদের সহযোগিতা করলে আলেম নেতাদের ইমামদের উপর নিয়ন্ত্রনটা কিছুটা খর্ব হওয়ার সম্ভাবনা আছে । তাই আলেম নেতারা সরকারী সহযোগিতা দাবি না করে ইমামদের উস্কানীমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে জেহাদী জোঁশ তৈরীর মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রন অক্ষুন্ন রেখেছেন । যাহোক, সরকারের উচিত লক্ষ-লক্ষ মসজিদের ইমাম এবং হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের পুরোহিতদের মাঝে ত্রান বা প্রণোদনারমূলক সহযোগিতা নিশ্চিত করা ।
অন্যদিকে, এই অদৃশ্য মৃত্যুদূত ভয়াল করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা ঠেকাতে সরকার সকল ধরনের অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে জনগনকে ঘরে থাকার আহব্বান জানিয়েছেন, এতে দিনমজুর এবং স্বল্প আয়ের মানুষরা পড়েছে মহাসংকটে । কর্মক্ষম মানুষটি উপার্জনে অক্ষম হওয়ায় ঘরে থাকা শিশু এবং বৃদ্ধ মা-বাবার খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনতে পারছেন না । বিভিন্ন এলাকার তরুণ সমাজ, সচ্চল জনগন এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানসহ সরকার নিরীহ জনগনের পাশে দাঁড়ালেও গুটিকয়েক চেয়ারম্যান মেম্বার ব্যস্ত সরকারী ত্রাণের চাল, ঢাল এবং তেল আর্তসাতে । আমরা খালি চোখে এই যমদূত করোনা ভাইরাসকে দেখতে বা চিনতে না পারলেও ঐ রক্তচোষা চোরদের ঠিকই দেখতে এবং চিনতে পারছি, ওরা বুভুক্ষু-ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে থেকে কেঁড়ে নিচ্ছে খাবারের থালা । ক্ষুধার তাড়নায় শিশুর হাউমাউ কান্না, অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার অবিরত চোখের পানি, খাদ্য এবং ঔষধ যোগানে অক্ষম মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম মধ্যবিত্ত অভিভাবকদের বুকের মধ্যকার বোবা কান্না ওদের স্পর্শ করেনা । এই চোরদের কারনে অসহায় সাধারন মানুষগুলো করোনায় না মরলেও মরবে খাবারের অভাবে ।
৯১ এর ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের একটি দৃশ্য কমবেশী অনেকের মনে আছে, ঐ জলোচ্ছ্বাসে জীবন বাঁচাতে মানুষ এবং বিষধর সাপ একই গাছে ঠাঁই নিলেও কেউ কারো ক্ষতি করেনি, এই দৃশ্য আমরা পত্রিকায় দেখেছিলাম । এখনো বিভিন্ন জিওগ্রাফি চ্যানেল এবং ইউটিউবে দেখা যায় হিংস্র ব্যঘ্র বা জন্তু-জানোয়াররা অন্য প্রানীর বাচ্চাকে সযত্নে দুধ খাইয়ে লালন পালন করছে, অথচ আজকের এই প্রাকৃতিক মহামারীতে চেয়ারম্যান-মেম্বার এবং ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষরা করোনার কাছে সমানভাবে বিপদগ্রস্ত হলেও চাল চোর চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অসহায় মানুষকে না খেয়ে মারার ব্যবস্থা করছে । এই চাল চোরদের কোন বিশেষনে বিশেষায়িত করব, তা জানি না । তবে আমরা সাধারনতঃ মানুষের হিংস্রতা, নির্মমতা এবং বিভৎস্যতার তুলনা করতে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের সাথে তুলনা করি । দোহায় লাগে ত্রাণের চাল চোরদের কোন ধরনের হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের সাথে তুলনা করে জন্তু-জানোয়ারকে অপমানিত করবেন না । এই ত্রাণের চাল চোররা হোক সবার কাছে ঘৃণা, ধিক্কার এবং অভিসম্পাতে অতুলনীয়, ওদের তুলনা ওরাই । ওরা মনুষ্যরূপী রক্ত চোষা কুলাঙ্গার শয়তানের দল ।
সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্রাণ ঘোষনার সময় ত্রাণ আত্মসাতের বিষয়ে কড়া সতর্কতা মূলক বক্তব্য দিলেও ত্রাণ চোরদের ঠেকানো যায়নি । কারন এই চোররা জানে ধরা পড়লে পত্র-পত্রিকা, টেলি ও সোস্যাল মিডিয়া কিছুদিন উত্তেজনা ছড়াবে আর এই উত্তেজনা কমে গেলে ঠিকই এমপি-মন্ত্রীরা তাদের ছাড়িয়ে আনবে, দোষ পড়বে আইন-আদালত এবং পুলিশের কেইস ফাইলের দূর্বলতার উপর । তাছাড়া বর্তমান সরকারের নেতা-মন্ত্রীসহ যারা এই ত্রাণ চোরদের অপরাধকে হালকা করতে ত্রাণ চোরদের শতাংশ এবং অতীতের ভীন্ন সরকারের আমলের দূর্ণীতিকে তুলে ধরেন, ধিক্-শতধিক্ ঐসব চৌর্ষ্যবৃত্তি রক্ষক অভিভাবকদের । তাই আমাদের উচিত এই ত্রাণ চোর এবং রক্ষক অভিভাবকদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঘৃণার আন্দোলন গড়ে তোলা । এক্ষেত্রে তরুণ সমাজ, যাঁরা ইতিমধ্যে ত্রাণ এবং সমাজ সচেতনতা মূলক ভূমিকা রাখছেন, তাঁরা যদি তাঁদের কাজের বাড়তি অংশ হিসেবে ঐসব চিহ্নিত এবং ধৃত চাল চোরদের এলাকাস্থ রিকসা টেম্পুসহ সকল সাধারন পরিবহনে এই স্লোগানটি লেমিনেট করে সাঁটিয়ে দেন-ত্রানের চাল চোররা যাত্রী হিসেবে উঠা নিষিদ্ধ । তাছাড়া প্রমানিত ত্রাণ চোরদের বাড়ী-ঘর এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে দৈনিক, মাসিক এবং বাৎসরিক চুক্তিতে কর্মরত শ্রমিকদের কাজ পরিহারে উদ্ভূদ্ধ করুন, এক্ষেত্রে ঐসব কাজ হারা শ্রমিকদের জন্য সামাজিক উদ্যোগে বিকল্প কর্মের ব্যবস্থা করুন । আমরা সবাই সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ ভাবে এই মহামারীর সংকট উত্তরনে ঐসব চিহ্নিত ত্রাণ চোরদের ঘৃণাকে অক্ষুন্ন রেখে সামাজিক উদ্যোগে ত্রাণ এবং গনসচেতনতামূলক ভূমিকা অব্যাহত রাখলে দেশ-জাতি এগিয়ে যাবে নতুন গৌরবে ।
 


মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
ওয়ারাবি,সাইতামা,জাপান।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ