প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

রায় নিয়ে বিএনপির নীরবতা ও লাভ-ক্ষতির পর্যালোচনা

 

 

মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম

এই কথা সত্য, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখী করাতে সক্ষম হয়েছেন । একমাত্র শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারনেই তা সম্ভব হয়েছে, অন্য কারো পক্ষে এই বিচার কার্যে হাত দেয়া ছিল কল্পনাতীত বিষয় । হয়তঃ যুদ্ধাপরাধীরাও ভাবেনি সুদীর্ঘ ৪৩ বছর পর এভাবে ফাঁসির রশিতে ঝুলে ইতিহাসের দায় মোচন করতে হবে । যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ইতিহাসের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছেন- বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিলো আর তারই কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ইতিহাসের আরেকটি মাইলফলক তৈরীর এই মাহেন্দ্রক্ষণটিতে বিএনপির ভবিষ্যৎ কান্ডারী তারেক রহমান মত্ত আছেন ৭১ গবেষণায় উদ্ভট সব তথ্য আবিস্কারে । এমন সব আজগুবি তথ্য আবিস্কার করছেন, এযেন কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কার- যা ইতিপূর্বে কেউ দেখেনি-শুনেনি । এই প্রথম উনি এক এক করে ইতিহাসের ঝোলা থেকে বের করছেন এবং জাতিকে চমকে দিচ্ছেন । এই বিস্ময়কর (অর্বাচীন !) গবেষকের চমকে দেয়া ইতিহাসের সারবস্তু হচ্ছেঃ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে মহিমান্বিত করা এবং পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা । এইদিকে যে ৭১ এর ধারাবাহিকতার আরেকটা পর্ব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেকে বিএনপি বঞ্চিত হচ্ছে, সেদিকটায় খেয়াল দিবার অবকাশ গবেষক তারেক রহমানের নেই । এরই মাঝে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে খালেদা জিয়া দলের বয়োজ্যেষ্ট নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তারেক জিয়ার সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলতে, এই সুর মিলানোটা যে কতটা বেসুরে ঠেকবে, তা খালেদা জিয়া না বুঝলেও দলের শিক্ষিত সচেতন সিনিয়র নেতারা ঠিকই জানেন-বুঝেন । গবেষক ছেলের আবদার রক্ষার্থে মা খালেদা জিয়া এই নির্দেশ দিয়ে থাকলে ভিন্ন কথা । বাঙ্গালী মা-রা সন্তানদের বায়না রক্ষার্থে কত কথাই না বলে থাকেন । যাহোক, খালেদা জিয়া বাঙ্গালী জাতির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসকে ছেলের হাতের মোয়া জ্ঞান করলে ভুল করবেন । ইতিহাস গবেষনার দায়িত্ব ঐতিহাসিকদের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত ।
যা বলছিলাম, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভবিষ্যত আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে । যা দিয়ে আওয়ামীলীগ ভবিষ্যত প্রজন্মকে বলবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে যে বিচারকে রহিত করা হয়েছিল । শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘ ৪৩ বছর পর সেই বিচারকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করেন । পক্ষান্তরে বিএনপি স্বচ্ছ নিরপেক্ষ এবং আন্তর্জাতিক মানের ধূয়ো তুলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে বানচালের অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল, যা বিএনপিকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষকের দোসর হিসেবেই চিহ্নিত করাবে । বিএনপি একদিকে বিচারকে স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের কথা বলছে অন্যদিকে এই যুদ্ধাপরাধীদের দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে বিচার কার্যকরের দায়িত্বে থাকা সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে । বিএনপি মুখে বলছে আমরাও রাজাকারদের বিচার চাই অথচ রাজাকারদের রায়ের পর নীরব থাকছে । বিএনপির এই বিচার চাওয়া কথার কথায় পরিণত হয়েছে, জনগন বিশ্বাসে নিতে পারছেনা । তাই দাবী উঠেছে রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তনে যুদ্ধাপরাধীরা যেন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পায়, সে জন্য সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে । এই দাবী বিএনপির প্রতি অবিশ্বাসের কারনেই উঠেছে ।
সাঈদীর রায়ে শীথিলতা এবং জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে দন্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের জানাযা নিয়ে জামাতের সাথে সরকারের আঁতাতের অভিযোগ উঠেছিল, কিন্তু ট্রাইব্যুনাল এবং আপীল বিভাগ থেকে একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় প্রদান এবং রায় বাস্তবায়নে সরকারের দৃঢ় সংকল্প, জাতিকে আঁতাতের আশংকা মুক্ত করেছে ।
অন্যদিকে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের রায়ের প্রতিক্রীয়ায় নীরব থেকে হয়তঃ ভাবছে আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারগুলো শেষ করলে এবং জামাতকে নিষিদ্ধ করলে বিএনপির ভোট ব্যাংক বাড়বে । বাস্তবতা কী তা বলে, নিশ্চয় না । জামাত নিষিদ্ধ হলে আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনীতিতে না গিয়ে অন্য নামে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসবে । আর ঐ ক্ষেত্রে জামাত বিএনপি জোটে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ, আর থাকলেও আগের মত যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে মাঠে থাকবেনা । প্রতিনিয়ত লাভ-ক্ষতির অংক কষবে, তাই এখন থেকে জোটের রাজনীতি কঠিন দরকষাকষির ফরম্যাটে এগুবে । কারন ইতিমধ্যে জামাত-শিবিরের জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে । তাছাড়া জামাত ভাববে বিপর্যয়ের সময় বিএনপি যেহেতু ভূমিকা রাখেনি, তাই বিএনপির ক্ষমতায়নের সিঁড়ি জামাত হতে চাইবেনা । তাছাড়া জামাত-শিবির কর্মীদের বদ্ধমূল ধারনা বিএনপি জোটে থাকার কারনেই আওয়ামীলীগের নির্যাতনের খড়গ তাদের উপর নেমে এসেছে । তাই কিছুটা সময়ের জন্য হলেও একলা চলার রাজনীতির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয়ে চেষ্টা করবে এবং ট্যাকনিক্যালি আওয়ামীলীগের বিএনপি বিনাশের রাজনীতিতে পরোক্ষ সহায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে । কারন বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে দূর্বল হলে তাদের উপর বিএনপির নির্ভরশীলতা আরো বৃদ্ধি পাবে আর বিএনপি বিলুপ্তির পথে ধাবিত হলে এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্র তাদের জন্য প্রসারিত হবে । তাই বলা যায় বিএনপি জামাতের মধ্যে কোন সংগঠনটি আগামীতে এ্যান্টি আওয়ামী ভোটারদের প্রতিনিধিত্ব করবে ? ধীরে-ধীরে রাজনীতি সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে ।
যুদ্ধাপরাধীদের রায় নিয়ে বিএনপির নীরবতা বিএনপিকে উপকৃত করছে নাকী ক্ষতিগ্রস্ত করছে । তা যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমনি গোলাম আযমের চতুর্থপুত্র আমান আযমীর প্রতিক্রীয়ায় স্পষ্ট হয়েছে, আমান আযমী বিএনপি অকৃতজ্ঞ বলেই ক্ষান্ত হননি, উপরন্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন-বিএনপি জামাতের সহযোগীতা ছাড়া কখনই সরকার গঠন করতে পারবেনা । তাই বলা যায় এহেন নীরবতায় বিএনপি একদিকে জোটমিত্র জামাতের আস্থা হারাচ্ছে অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশীদারিত্বের রাজনৈতিক ক্ষেত্র তাদের জন্য ক্রমশঃ সংকুচিত হচ্ছে ।
এটা ঠিক বড় রাজনৈতিক দলও অনেক সময় সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে ব্যর্থ হলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে । বাস্তবিক অর্থেই বিএনপি সে পর্যায়েই অবস্থান করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে দলের দোদুল্যমান নীরবতার রাজনীতি ও রাজপথে কর্মসূচীহীনতা বিএনপিকে নিস্তেজ করছে এবং ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে । তাছাড়াও খালেদা জিয়ার বড় ভুল ছিল ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে অংশগ্রহন না করা । আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি ঐ নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির জয়ের সম্ভাবনাই বেশী ছিলো, আর সরকার জোরজবরদস্তির নির্বাচন করলে বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে সক্রীয় থাকতে পারতো, আজকের ন্যায় মুখথুবরে পরতো না । অন্যদিকে শেখ হাসিনা দ্বিধাদ্বন্ধে না ভুগে এরশাদকে ধরে বেঁধে সিএমএইচ ভর্তি করিয়ে নির্বাচন করিয়ে নিয়েছেন । ঐ সময়ে এরশাদের হুটকরে পিছুটানেও শেখ হাসিনা দ্বিধাদ্বন্ধে ভোগেননি, সিদ্ধান্ত নিয়ে একের পর এক বিপর্যয়ের আশংকা গুলো কাটিয়ে সরকারকে একটা স্ট্যাবল পজিশনে নিয়ে এসেছেন ।
খালেদা জিয়াকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থানকে পরিহার করে স্বচ্ছ অবস্থানে আসতে হবে । হয় জামাতকে সাথে নিয়ে পুরোপুরি দক্ষিন পন্থার রাজনীতিতে মনোনিবেশ করতে হবে, না জামাতকে পরিহার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে প্রগতিশীল ইতিবাচক রাজনীতিকে ধারন করতে হবে । মাঝা-মাঝি থেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতির ভবিষ্যত অন্ধকার । কারন জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা প্রযুক্তি ও মিডিয়ার গতিশীলতা ও সহজলভ্যতার কারনে নাগরিকরা অনেক বেশী সচেতন ।
তাছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ আন্তর্জাতিক পরিসরের নিরংকূশ সমর্থনের জন্য বিএনপিকে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করাই শ্রেয় । বিশেষতঃ ভারত চাইবেনা জামাত সমর্থিত কোন সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হোক । কারন দশ ট্রাক অস্রের বিষয়টাতে ভারত এখনও উৎকন্ঠিত । তাই নাগরিকদের সমস্যাকে প্রাধান্য দেয়ার পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিকে বিবেচনায় রেখেই বিএনপিকে রাজনীতি করতে হবে । সেই জন্য বিএনপির উচিত নাগরিক জীবনের সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে সক্রীয় হওয়া এবং নতুন প্রজন্মের ভোটারদের আকৃষ্ট করার মত ভবিষ্যত বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল স্ববিস্তারে তুলে ধরা । তাছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নীরবতা পরিহার করে সক্রীয় ও স্বচ্ছ অবস্থান গ্রহন করা । এতে বিএনপি জামাতকে হারাবে সত্য, পক্ষান্তরে অর্জন করবে নতুন প্রজন্ম ও প্রগতিশীল গনমানুষের আস্থা । তাছাড়া এতে আওয়ামীলীগের রাজনীতির ক্ষেত্রও সংকুচীত হবে । আওয়ামীলীগের একতরফা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেন্দ্রিক রাজনীতির বিপরীতে বিএনপিও সমঅংশীদারিত্বের ক্ষেত্র তৈরীতে সক্ষম হবে । মোটকথা বিএনপিকে নীরবতা বলয় ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতে হবে এবং জনগনকে দিতে আস্থা অর্জনমূলক কমিটমেন্ট ।

 

লেখকঃ জাপান প্রবাসী।
 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ