[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে প্রভাবিত বিমান, আবহাওয়া, সূর্যাস্ত

 

 

কমিউনিটি ডেস্ক ।।

১৯৮৯ সালে একটি চার ইঞ্জিনের ৭৪৭ আলাস্কার উপর মাঝ আকাশে অচল হয়ে গেল। তবে সৌভাগ্যক্রমে পাইলট বিমানটির ইঞ্জিনগুলো পুনরায় চালু করতে পেরেছিলেন। কিন্তু কখনো কখনো বিষয়টি অনেক ভয়ঙ্করও হয়ে উঠতে পারে। আরেকবার, বৃটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমান ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া যাবার পথে তারও চারটি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বৃটিশ এয়ারওয়েজের ঐ বিমানটি সাগরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে সাগরে পতিত হবার অল্প আগেই ইঞ্জিনগুলো সব চালু হওয়ায় প্রানে বেঁচে যান যাত্রী ও ক্রুরা। আর এর সবগুলোর পেছনে হাত রয়েছে আগ্নেয়গিরির।

একটি আগ্নেয়গিরি বিপুল পরিমান বস্তু উর্ধ্বাকাশে নিক্ষেপ করে যা আবহাওয়াকে করে দেয় ঠান্ডা এবং তার ফলে তৈরি করে লাল-কমলা রঙের মনমুগ্ধকর সূর্যাস্ত। তবে আইসল্যান্ডের সাম্প্রতিক অগ্নুৎপাত বিমান চলাচলকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

তবে বিপুল পরিমানে বিমান চলাচলের সময়সীমাকে ব্যহত করার ঘটনা বিরল কারন যদিও আগ্নেয়গিরির ধোঁয়া বহু উঁচুতে উঠতে সক্ষম কিন্তু ব্যস্ত বিমানবন্দর বা বিমানপথ সেগুলো থেকে দুরেই থাকে। এ সপ্তাহে আইসল্যান্ডের অগ্নুৎপাত অবশ্য বিপুল পরিমান বস্তু উত্তর ইয়োরোপে ছড়িয়ে দিয়েছে, যা পূর্বে ইয়োরোপের উপকূলের বেশির ভাগ রুটগুলোকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

আগ্নেয়গিরির ছাই উর্ধ্বাকাশে থাকতে পারে অনেকদিন। শুধুমাত্র ফিলিপিনের মাউন্ট পিনাটুবোর অগ্নুৎপাতে ১৯৯১ সাল থেকে অন্ততঃ ২০ বিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, এদের বেশির ভাগই আগ্নেয়গিরি থেকে ৯৫০ কিলোমিটার দুর দিয়ে অতিক্রম করছিল।

আরেকটি মুশকিল হলো আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের কনা এতই ছোট যে রাডারে তাদের অস্তিত্ব ধরা পড়েনা। ফলে আগ্নেয়গিরির ধোঁয়ার স্থান সনাক্তকরা কঠিন, আর যদি ফ্লাইটটি রাতের বেলায় হয় তাহলেতো কথাই নেই।

আমেরিকার জিওলজিক্যাল সার্ভে'স ভলকেনো সায়েন্স সেন্টারের টম মুরেই বল্লেন "একবার যদি আমরা অগ্নুৎপাত সনাক্ত করতে পারি সাথে সাথে আমরা তা এফএএ (ফেডারাল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন) কে জানাই।" ইউএসজিএস এর বিজ্ঞানিরা এফএএ ও ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের সাথে সারাক্ষন যোগাযোগ রেখে চলেন কোথায় আগ্নেয়গিরির ছাই উঠছে তা জানার জন্য।

মসৃন এই ছাইগুলো বিমানের উইন্ডশীল্ড ঘোলা করে দিতে পারে, ফুয়েল নজেল বন্ধ করে দিতে পারে, জ্বালানি সিস্টেমকে দুষিত করে তুলতে পারে, ইলেক্ট্রনিক্স ও প্লাগ দ্যা টিউব যা দিয়ে বিমানের গতি মাপা হয় তা বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু এটা সবচাইতে বড় বিপদ সৃষ্টি করে বিমানের ইঞ্জিনের জন্য।

মুরেই বল্লেন "জেট ইঞ্জিন হলো অনেকটা বিশাল ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মত। যদি সে আগ্নেয়গিরির ধোঁয়ার মধ্যে পড়ে তবে সে সবকিছু শুশে নেয় যা ইঞ্জিনকে অচল করে দিতে পারে।"

এমব্রে রিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির মিচেল ফ্যাবিয়ানের মতে সবচাইতে বড় ঝুঁকি হলো যখন আগ্নেয় ছাইগুলো বিমানের ইঞ্জিনের কম্বাশ্‌ন চেম্বারে গিয়ে গলে যায় অথবা বাষ্প হয়ে যায়।

ছাইগুলো গলে গিয়ে ইঞ্জিন টারবাইনের ব্লেডে জমে যায় স্প্রে পেইন্টের মত। এই জমে যাওয়া ছাইগুলো ইঞ্জিনের স্বাভাবিক বায়ূপ্রবাহকে ব্যহত করে ফলে ইঞ্জিনের থ্রাস্ট কমে যায় অথবা ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।

একই সাথে ছাইগুলো ফুয়েল সিস্টেমের টেম্পারেচার সেন্সরের উপর প্রলেপ ফেলে দিতে পারে যা সেন্সরগুলোকে বোকা বানিয়ে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা ঠান্ডা আছে -এমন একটি রিডিং দিতে পারে। এর ফলে যা হতে পারে তা হলো পুরো সিস্টেমটি ইঞ্জিনকে আরো গরম করার উদ্যেশ্যে সেখানে তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে টারবাইনকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে আর একই সাথে ইঞ্জিন বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

এর পরিনতি ভয়াবহ হতে পারে। ১৯৮৯ সালের ঘটনায় ৭৪৭ মাত্র পাঁচ মিনিটে দু'মাইলের মত পড়ে গিয়েছিল। পরে ক্রুরা ইঞ্জিন চালু করতে সক্ষম হন। ২৩১ জন যাত্রী আগ্নেয়গিরির সালফারের গন্ধ পেয়েছিলেন যা ১৫০ মাইল দুরের রেডাউট ভলকেনো থেকে আসছিল। পরে সবকটি ইঞ্জিনই চালু করা সম্ভব হয়েছিল আর বিমানটি নিরাপদেই ফিরতে পেরেছিল। তবে বিমানটির চারটি ইঞ্জিনই শেষ পর্যন্ত বদলে ফেলতে হয়েছিল।

ফিলিপিনের মাউন্ট পিনাটুবোর উদ্‌গীরন ভেসে গিয়েছিল ৫০০০ মাইল দুরে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে। আগ্নেয়গিরির ছাই ১৯মাইল উঁচু হয়ে উঠেছিল, যা বিংশ শতাব্দীর বৃহত্তম উদ্গীরন হবার যোগ্যতা রাখে। এই অগ্নুৎপাতে ১ লাখ লোক গৃহহীন হন, হাজার হাজার লোককে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হয়।

উল্লেখিত উদ্‌গীরনের প্রভাব ছিল বিশাল। ঐ উদ্গীরনটি দু'বছর বিশ্বের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কমিয়ে দিয়েছিল। যা বিশ্বউষ্ণায়নের বিরোধী অবস্থান তৈরি করে একটি ভারসাম্যমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল বলে অনেকে মনে করেন।

তবে ১৮১৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার তাম্বোরা উদ্‌গীরনের প্রভাব ছিল এগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এটাকে বলা হয়ে থাকে রেকর্ডকৃত ইতিহাসের সবচাইতে বড় উদ্‌গীরন। ঐ বছরের পরের বছরটিকে অর্থাৎ ১৮১৬ কে বলা হয় "দ্যা ইয়ার উইদাউট সামার" বা "গ্রীষ্মকালবিহীন বছর।" সে বছর জুন থেকে অগাষ্ট পর্যন্ত নিউ ইংল্যান্ড ও ইয়োরোপে ভয়াবহ রকমের তুষারপাত হয়। বছর জুড়ে কোন ফসল ফলেনি, সুপ কিচেন খুলতে হয়েছিল অভুক্তদের খাওয়ানোর জন্য।

সুমাত্রা ও জাভার মধ্যবর্তী অঞ্চলের ক্রাকাতাউ (বা কখনো ক্রাকাতোয়া বলা হয়) আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে ১৮৮৩ সালে এর আশেপাশে দু'দিন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, সূর্য্য ওঠেনি। এর ছাই পুরো পৃথিবী কয়েকবার চক্কর দিয়েছিল, যা মনোরম কমলা-লাল সূর্যাস্তের রূপ এনে দিয়েছিল -তা আজও জীবন্ত রয়ে গেছে বৃটিশ শিল্পী উইলিয়াম অ্যাশক্রফট এর আঁকা ছবিতে।

 

 

>>বাংলা বছরের সূচনা

>>বিশ লাখ বছরের পুরনো কঙ্কাল থেকে বিবর্তন ধারার সন্ধান

>>শুকিয়ে যাচ্ছে আরল সাগর

>>জেব্রাফিশঃ হৃদযন্ত্রের টিস্যু নিজেই সারিয়ে তোলে
>>হাতি -ফোর হুইল ড্রাইভ

>>গ্রহাণুর ওপর নজর রাখবে নতুন ‘কমপ্যাক্ট’ স্যাটেলাইট

>>প্রবালেরা মারা যাচ্ছেঃ বিভিন্ন দেশে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়

>>মৌমাছির হুল ফোটানোয় অসুখ সারে!!

>>মায়া সভ্যতা

>>অ্যাকিলিস

>>২০১৪ সালে চালু হচ্ছে গ্যালিলিও

>>"সেটি" প্রকল্পের ৫০ বছর

>>প্রাচীন মানবের পূর্ণাঙ্গ জিন বিশ্লেষণ
>>ধ্বসে যেতে পারে পশ্চিম এন্টার্কটিকা

>>ঝড়ের সংখ্যা কমে বাড়তে পারে গতি

>>শিরাকাওয়া-গো এবং গোকাইয়ামা

>>পৃথিবীর গভীরতম স্থানঃ চ্যালেঞ্জার ডিপ

>>সুপার ভলকেন

>>চীনে হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের চিহ্ন

>>শিকোকুর তাকামাত্সুঃ প্রকৃতি, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রন

>>প্যারিস ট্রেন ক্র্যাশঃ কি ছিল তার পেছন

>>তিমি কাহিনী

>>মাউন্ট সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত

>>ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিন

>>টর্নেড

>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল সর্বোচ্চ হুমকির মুখে

>>ভূপাল বিপর্যয়

>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল

>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!

>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ

>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা

>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া

>>কিং কোবরা

>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক

>>রোমানিয়ায় কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর

>>ঐতিহাসিক নগরী কামাকুরা

>>গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের রহস্য

>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস

>>ফ্রিক ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি

>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ

>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুক

 

 

[প্রথমপাতা]