প্যারিস ট্রেন ক্র্যাশঃ কি ছিল তার
পেছনে
কমিউনিটি রিপোর্ট ।।
জুন ২৭, ১৯৮৮। ফ্রান্স তার রেলওয়ে ব্যাবস্থাপনাকে আরো
অত্যাধুনিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়ায় ব্যাস্ত। পুরোনো সব সিস্টেমকে বাতিল করে
আধুনিকায়ন করতে প্যারিস রেলওয়ে দেদার পয়সা খরচ করছে, মাথা ঘামাচ্ছে। এরই
মধ্যে এই ট্রেন দুর্ঘটনা আধুনিক প্রযুক্তির সাথে ফ্রান্সের ট্রেন চালক,
গার্ড ও নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থার দক্ষতাকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়।
গ্রীষ্মের সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিটে মেলুন থেকে প্যারিসের গারে ডি লিয়ন ষ্টেশনের
উদ্দেশ্যে একটি ট্রেন যাত্রা করল। সবকিছু স্বাভাবিক গতিতেই চলছিল। ট্রেন
চালক ড্যানিয়েল সোলিন একজন অতি অভিজ্ঞ চালক। ট্রেনের গার্ডও অত্যান্ত
অভিজ্ঞ ব্যক্তি। কাজেই ট্রেনটি নিরাপদ হাতেই ছিল এমন বলা চলে।
বিপত্তিটা ঘটলো ভার্ট ডি মাইসন্স ষ্টেশনে এসে। এই ট্রেনটির শীতকালিন
সময়সূচিতে প্যারিস যাবার পথে এই ষ্টেশনে যাত্রা বিরতি করত। কিন্তু
গ্রীষ্মের রুটিনে এই ষ্টেশনে যাত্রা বিরতি বাতিল করা হয়। নতুন সময় সূচি
সম্পর্কে অজ্ঞাত এক ২১ বছর বয়স্কা মহিলা যখন দেখলেন ট্রেনটি ভার্ট ডি
মাইসন্স পার হয়ে যাচ্ছে তিনি তড়িৎ ইমার্জেন্সি ব্রেক টেনে ট্রেনটিকে থামিয়ে
দেন। আর থামিয়ে দিয়েই দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে উধাও হয়ে যান। গার্ড চটজলদি এসে
তাকে প্রশ্ন করার সুযোগটুকুও পাননি।
যাইহোক, ব্রেক হয়ে যাওয়া ট্রেনটিকে পুনরায় চালু করতে বেশ কিছু টেকনিকাল কাজ
সম্পাদন করতে হয়। ট্রেনের চালক সেক্ষেত্রে দুটি বগির মাঝখানে ব্রেক কর্ড
পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। শক্ত এই কাজটি করতে গিয়ে তিনি
ভুলে ব্রেক ভাল্বে চাপ দিয়ে বসেন। ফলে ব্রেক ভাল্ব যেটি বাতাসের সাহায্যে
ট্রেনের ব্রেক কষত তা বন্ধ হয়ে যায়।
কম্যিউটার ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে শেষ বগিটি অবধি একটি সরু পাইপের মধ্যে দিয়ে
বাতাস প্রবেশ করানোর ভাল্ব থাকে। ট্রেন ব্রেক করতে চাইলে বাতাস প্রবেশের
ভাল্ব খুলে দিলে পাইপগুলো দ্রুত বাতাসে পূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু ভাল্বের কারনে
বাতাস বের হতে পারেনা। এদিকে বাতাসে পাইপগুলো পূর্ণ হয়ে উঠলে চাকার সাথে
লাগানো ব্রেক ট্রেনের চাকাকে শক্তকরে আটকে ধরে। ফলে ট্রেন সহজেই থেমে যায়।
প্যারিসের এই ট্রেনটির ক্ষেত্রে ড্রাইভার ভুলবশতঃ বাতাস প্রবেশের মুখটি
বন্ধ করে দেন। এরপরও ট্রেনটিকে চালু করতে ব্যার্থ হলে, প্রতিটি বগির নীচে
পাইপে জমে থাকা বাতাসও বের করে দেন। ফলে কার্যত ট্রেনটির কোন ব্রেকই আর
রইলনা। নিয়মানুযায়ী এসকল ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারকে খবর দেবার কথা। কিন্তু
ট্রেনচালক সময় বাঁচাতে গিয়ে এসব নিয়মের কোন তোয়াক্কা করলেননা।
প্রতিটি বগির জমে থাকা বায়ূ বের করে দেবার পর, ট্রেনচালক ট্রেনটিকে চালু
করতে সক্ষম হলেন। ট্রেন ততক্ষনে ২৬ মিনিট দেরী করে ফেলেছে। রেলওয়ের
নিয়ন্ত্রন কক্ষ থেকে ট্রেনচালক সোলিনকে নির্দেশ দেয়া হলো পরের ষ্টেশন মাইসন
আলফোর্টে না থামিয়ে সোজা গারে ডি লিয়নে নিয়ে যেতে। সোলিন যথাসময়ে ট্রেনকে
প্যারিসে নিয়ে যাবার উদ্দেশ্যে ট্রেনের গতি বাড়িয়ে দিলেন। একসময় তা বেড়ে ৭০
কিঃমিঃ উঠে গেল। তখন রেললাইনের পাশে গতি কমানোর বাতি জ্বলে উঠলো। সোলিন গতি
কমাতে গিয়ে যা দেখলেন তাতে রীতিমত ভড়কে গেলেন। ট্রেনে ব্রেক নেই। তিনি
প্রানপন চেষ্টা করলেও ব্রেকে কোন কাজই করছেনা।
অনেক চেষ্টায় ব্রেককে কিছুটা ব্যাবহার করতে পেরেছিলেন। কারন ৮টি গাড়ির ৭টিতেই
বাতাস পৌঁছানোর উপায় ছিলনা, কেবলমাত্র তার ইঞ্জিনের ভাল্বেই তিনি বাতাস
ঢোকাতে সক্ষম ছিলেন। তাই ট্রেনের গতি কমে ২৪ কিঃমিঃ হলো কিন্তু থামলোনা।
সোলিন মাথা গরম করে গার্ডের সাথে মিলে হ্যান্ডব্রেকের সন্ধান করতে লাগলেন।
কিন্তু তার সামনেই যে আরেকটি ব্রেকিং সিস্টেম ছিল "ইলেক্ট্রিকাল ব্রেকিং
সিস্টেম" তার কথা তিনি বেমালুম ভুলে গেলেন। ইলেক্ট্রিকাল ব্রেকিং সিস্টেম
আসলে প্রায় ব্যাবহার হয়না। কারন ট্রেনচালকদের ওই ব্রেকটি অপছন্দ। একবার
ব্যাবহার করলেই ট্রেনের চাকাগুলো জ্যাম হয়ে যায়, সেটা ছোটানো বেশ কষ্টকর।
আর তাই ব্যাবহার না করতে করতে সোলিন ভুলেই গেলেন ইলেক্ট্রিকাল ব্রেকিং
সিস্টেমের কথা। হ্যান্ডব্রেকও খুঁজে পেলেননা। অবশ্য পেলেও হ্যান্ডব্রেক
এক্ষেত্রে খুব সামান্যই কার্যকরী। ওটা মুলতঃ ব্যাবহার হয় স্টেশনে ট্রেনের
নড়াচড়া বন্ধ রাখতে।
উপায়ন্তর না দেখে সোলিন বেতারে জানিয়ে দিলেন তার ট্রেনের ব্রেক ফেল। বলেই
তিনি আবার হ্যান্ডব্রেক খুঁজতে বেরিয়ে গেলেন। নিয়ন্ত্রন কক্ষ জানল সেই
মুহুর্তের ৩৬০ ট্রেনের কোন একটির ব্রেক ফেল হয়েছে। কিন্তু কোনটির? কোথায়
যাচ্ছে সে? কিছুই বুঝতে পারলনা নিয়ন্ত্রনকক্ষ, কারন সোলিন নিজের পরিচয়,
ট্রেনের কোড ও অবস্থান কিছুই জানাননি।
উপায়্ন্তর না দেখে নিয়ন্ত্রন কক্ষ সকল সবুজবাতিকে লাল করে দিল। সকল ট্রেন
থেমে গেল।
এদিকে প্যারিসের গারে ডি লিয়নের ১ নং প্ল্যাটফরমে আরেকটি ট্রেন অপেক্ষা করছে।
তার ছাড়ার সময় অনেক আগেই পার হয়ে গেছে কিন্তু ট্রেনের গার্ড এখনো পৌঁছুতে
পারেনি। ফলে ট্রেনটি ছাড়তে পারছেনা। ঘটনাচক্রে এই প্ল্যাটফরমেই ব্রেকহীন
ট্রেনটির আসার কথা।
ষ্টেশন থেকে আধা কিলোমিটার পেছনে সয়ংক্রিয় উপায়ে ট্র্যাক পরিবর্তনের
সিস্টেম বসানো আছে। যদি প্ল্যাটফরম ১ এ কোন ট্রেন অবস্থান করে তবে সয়ংক্রিয়
পদ্ধতি অপর ট্রেনটিকে ২নং প্ল্যাটফরমে পাঠিয়ে দেবে।
কিন্তু সবকিছুর পরেও ব্রেকহীন ৩০০শ টনের ট্রেনটি এক নম্বর প্ল্যাটফরমে এসে
থেমে থাকা ট্রেনটির উপর আছড়ে পড়লো। ট্রেনে ও প্ল্যাটফরমে অপেক্ষমান
যাত্রীদের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লো বগিগুলো। নিহত হলেন ৫৬ জন। আহত শত শত।
পুরো ফ্রান্স জুড়েই এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির ব্যাপারে তীব্র
দাবি ওঠে। তদন্ত কমিশন ট্রেন চালক সোলিনের ভুলত্রুটি ছাড়াও গার্ড ও
নিয়ন্ত্রনকক্ষের ব্যার্থতা তুলে ধরে।
ট্রেনটি যদি মাইসন আলফোর্টে থামানোর চেষ্টা করা হতো তবে তা প্যারিস পর্যন্ত
আসতে আসতে নিজে থেকেই থামতে পারত। তা ছাড়া, ট্রেনচালকের বিপদবার্তা পেয়ে
সাথে সাথেই ম্যানুয়ালী সকল সিগনালকে লাল করে দেবার ফলে সয়ংক্রিয় পদ্ধতি
বন্ধ হয়ে যায়। এতে যে সয়ংক্রিয়ভাবে এক নং প্ল্যাটফরমে আগত দ্বিতীয় ট্রেনকে
দুই নং প্ল্যাটফরমে পাঠিয়ে দেবার পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানের
নানা ভুল মিলে প্যারিস সাবওয়েকে যেন নরকে পরিনত করেছিল ঐদিন।
ঘটনার পরে ট্রেনচালক ড্যানিয়েল সোলিনকে ৪ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। তবে তাকে
৭ মাস পর মুক্তি দেয়া হয়। ট্রেনের গার্ড সোলিনকে ব্রেক অকার্যকর করতে
সাহায্য করায় তাকেও অনুরূপ শাস্তি পেতে হয়। গারে ডি লিয়নের সুপারভাইজরের
বিরুদ্ধে সময়মত ষ্টেশন ও প্ল্যাটফরম খালি করতে ব্যার্থ হবার অভিযোগ আনা হয়।
অবশ্য সেটা সফল হয়নি।
>>প্যারিস ট্রেন ক্র্যাশঃ কি ছিল তার
পেছনে
>>ডিম নয়, বিজ্ঞান বলছে, 'সম্ভবত মুরগিই!’
>>সমুদ্রতলে মাছরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে
>>সবচাইতে
শীতল বাদামী বামনের সন্ধান লাভ
>>রাশিয়ান কার্গো শিপ ইন্টারন্যাশনাল
স্পেস স্টেশনে থামতে ব্যর্থ হল
>>ফ্রিক
ওয়েভঃ সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউ
>>২০৫০ সাল নাগাদ এশিয়ার বেশিরভাগ নদীর
পানিপ্রবাহ কমে যাবে
>>সিঙ্গাপুরে প্রত্যেকের জন্য ইলেকট্রনিক
মেইলবক্স
>>মিশরে ৩,৬০০ বছর আগের একটি শহরের সন্ধান
লাভ
>>আগুনের সঙ্গে বসবাস
>>বিজ্ঞানের অসহায়ত্ব ভুপাল দুর্ঘটনা
>>কুমিরের সাগর পাড়ি দেবার রহস্য
>>ছাইমেঘ থেকে বিমান বাঁচানোর নতুন উপায়
>>ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস
>>নানা মারাত্মক রোগের কারণ প্রক্রিয়াজাত
মাংস
>>মাদাগাস্কারের ছোট্ট ডুবুরি পাখি হারিয়ে
গেল
>>হাবলের চোখে, গ্রহ খাদক
নক্ষত্র
>>বিমান বিধ্বস্তের কাহিনী
>>ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গলে নতুন প্রজাতির জীব
আবিষ্কার
>>ছাইমেঘের জন্য বিজ্ঞানীরা প্রস্তুত
>>জোয়ান অব আর্ক
>>এশিয়ায় হুমকির মুখে পরিযায়ী পাখির দল
>>নেয়ানডার্থালরা আধুনিক মানুষের
পূর্বপুরুষ
>>ডেঙ্গু প্রতিরোধে জিনগত কারণ অনুসন্ধান
>>মেক্সিকো উপসাগরে ‘এক্সোন ভালডেজ’ ঘটতে
আর কতো দেরী?
>>বোর্নিওতে নতুন প্রানের সন্ধান
>>প্রথমবারের মত পুরো মুখমন্ডলের
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন
>>আইসল্যান্ডে আরো বড় অগ্নুৎপাতের সম্ভাবনা
বাড়ছে
>>আইসল্যান্ডেই এই, ইয়েলোস্টোন ফাটলে কি
হবে?
>>আগ্নেয়গিরির ছাইয়ে প্রভাবিত বিমান,
আবহাওয়া, সূর্যাস্ত
>>বাংলা বছরের সূচনা
>>বিশ লাখ বছরের পুরনো কঙ্কাল থেকে
বিবর্তন ধারার সন্ধান
>>শুকিয়ে যাচ্ছে আরল সাগর
>>জেব্রাফিশঃ হৃদযন্ত্রের টিস্যু নিজেই
সারিয়ে তোলে
>>হাতি -ফোর হুইল ড্রাইভ
>>গ্রহাণুর ওপর নজর রাখবে নতুন
‘কমপ্যাক্ট’ স্যাটেলাইট
>>প্রবালেরা মারা যাচ্ছেঃ
বিভিন্ন দেশে নেমে আসতে পারে বিপর্যয়
>>মৌমাছির হুল ফোটানোয় অসুখ সারে!!
>>মায়া সভ্যতা
>>অ্যাকিলিস
>>২০১৪ সালে চালু হচ্ছে গ্যালিলিও
>>"সেটি" প্রকল্পের ৫০ বছর
>>প্রাচীন মানবের পূর্ণাঙ্গ জিন বিশ্লেষণ
>>ধ্বসে যেতে পারে পশ্চিম এন্টার্কটিকা
>>ঝড়ের সংখ্যা কমে বাড়তে পারে গতি
>>শিরাকাওয়া-গো এবং গোকাইয়ামা
>>পৃথিবীর গভীরতম স্থানঃ চ্যালেঞ্জার ডিপ
>>সুপার ভলকেনো
>>চীনে হাজার হাজার ডাইনোসরের পায়ের চিহ্ন
>>শিকোকুর তাকামাত্সুঃ প্রকৃতি,
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রন
>>তিমি কাহিনী
>>মাউন্ট সেন্ট হেলেনের অগ্নুৎপাত
>>ছাদ উড়ে যাওয়া বিমানের কাহিনী
>>টর্নেডো
>>জলবায়ু পরিবর্তনে গাছপালা ও প্রাণীকূল
সর্বোচ্চ হুমকির মুখে
>>ভূপাল বিপর্যয়
>>মাছেরা যেদিন ডাঙায় উঠল
>>মহাবিশ্বে অজানা গরম বস্তু!
>>এয়ার ক্র্যাশ ইনভেস্টিগেশনঃ
মাঝ আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ঘ
>>তেনেরিফেঃ এভিয়েশন ইতিহাসের
সবচাইতে বড় দুর্ঘটনা
>>সুপার কন্টিনেন্টের ভাঙাগড়া
>>কিং
কোবরা
>>লেক চুজেনজিঃ মনমাতানো একটি লেক
>>রোমানিয়ায়
কমিউনিস্ট বিরোধী বিপ্লবের ২০ বছর
>>ঐতিহাসিক
নগরী কামাকুরা
>>গ্র্যান্ড
ক্যানিয়নের রহস্য
>>একাত্তুরের টুকরো ছবি
>>একাত্তুরের গনহত্যা
>>চ্যানেল স্ক্যাবল্যান্ডস
>>চীন জাপান যুদ্ধ
>>সাপ্পোরোর ইয়ূকি মাতসুরি
>>যশোর রোড
>>ইয়াইয়ামাঃ অবকাশ যাপনের অদ্বিতীয় স্থান
>>ইয়াকুশিমাঃ জাপানের প্রাচীনতম বৃক্ষরাজির দ্বীপ
>>মাতসুশিমাঃ জাপানের অন্যতন দর্শনীয় স্থান
>>ওসাকা ক্যাসেল
>>বিশ্বের ব্যাস্ততম ষ্টেশন শিঞ্জুকু
[প্রথমপাতা] |