|
আলোকিত অন্ধকারের জনপথ
শাশ্বত স্বপন
মিটফোর্ড হাসপাতালে
চাকুরীতে যোগদানের দিন এবং তারপরও আরো কিছুদিন বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত পানির
দুর্গন্ধে আমার বেশ কষ্ট হয়েছিল। ভাবতাম, আর সব মানুষেরা কিভাবে চলছে?
কিছুদিন পর এই পরিচিত গন্ধ আমার নাকের alfactory নার্ভ স্বাভাবিকভাবে মেনে
নিয়েছে এবং আমি আর এখন গন্ধ পাই না। হাসপাতালে রোগীর ভীড় খুব বেশি। এখানে
কোন কোন বিভাগের Out door এর ডাক্তাররা দিনে দুইশ থেকে তিনশ জন রোগী দেখেন।
Out door এর রোগীদের মধ্যে ষাট শতাংশ মুখ খোলা বোরকা পড়া, দশ শতাংশ মুখ ঢাকা
বোরকা পড়া মহিলা এবং সাথে তাদের ছেলে-মেয়ে; দশ শতাংশ লুঙ্গি-শার্ট পড়া, আর
বাকীরা লুঙ্গির সাথে গেঞ্জি বা গামছা, লুঙ্গির সাথে পাঞ্জাবী ও টুপী; অবশ্য
কিছু রোগী শার্ট-প্যান্ট ইত্যাদি পরিধান করেও এখানে আসে। পরিধানের এই বর্ণনা
দিয়ে বুঝাতে চাচ্ছি, এদের প্রায় সবাই অতি সাধারণ মানুষ। এ দেশের দারিদ্র
আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এরা আচ্ছাদিত। এদের সবাই ধর্মভীরু। হাসপাতালের
ঔষধের সাথে তাবিজ-কবচ, পানিপড়া, পীর-ফকির ইত্যাদিতেও এরা বিশ্বাস করে।
যোগদান করার পর থেকে আমার মনে হয়েছে, আমি সতেরশ অথবা আঠারশ শতাব্দিতে এসে
পড়েছি। রোগীরা খুবই সহজ-সরল এবং রোগ-বালাই সম্পর্কে এদের ধারণা হাস্যকর।
দারিদ্রতা, অজ্ঞতা, অশিক্ষা, পারিবারিক অশান্তি-এদেরকে মনে হয়, একুশ শতকের
আলোকিত অন্ধকারের জনপথে আবদ্ধ করে রেখেছে।
হাসপাতালের প্রথম গেটের গলি দিয়ে রোগী, রোগীর সাথী ও সাধারণ মানুষের
যাতায়াত খুব বেশি। প্রথম গেটের গলি দিয়ে হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের গেট পার
হয়ে বুড়িগঙ্গা ঘাটে যাওয়া যায় এবং সেই ঘাট দিয়ে বিষাক্ত পানিপথ নৌকা যোগে
পার হয়ে কেরানীগঞ্জ যাওয়া যায়। কোরবানী ঈদের আগের কয়েকদিন প্রথম গেটের গলি
দিয়ে রোগী ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত খুব বেশি দেখা গেছে। বিশেষ করে, ঈদের
দুই দিন আগে নয়া বাজার হাটের গরু, ছাগল, মোটর গাড়ী, রিক্সা, ভ্যান আর
মানুষের প্লাবনে প্লাবিত হয়েছে মিটফোর্ডের রাস্তা, হাসপাতালের গেট,
বুড়িগঙ্গা ব্রীজের এপারের তীরদেশ। প্রথম গলি দিয়ে ঢুকতে হাতের বাম পাশের
ছোট ফুটপাতে সাড়ে তিন হাতের কম পরিমাণ জায়গার সাপের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে একটি
কঙ্কালসার, অর্ধনগ্ন নারী গত কয়েকদিন যাবৎ পড়ে আছে। প্রায়ই দেখতাম, কিছু
মানুষ উৎসুক হয়ে দেখছে; কেউ কথা বলতে চেষ্টা করছে। আমি নারীর কাছে গিয়ে ভীড়
করা মানুষের নানা কথা শুনেছি; নানা জন নানা ধরনের কথা বলেছে; কিভাবে
সাহায্য করা যায়-তাও আমি শুনেছি তাদের আলোচনা থেকে। আমিও ভীড় করা মানুষের
একজন, দায়িত্ব এড়িয়েছি; তবে ভেবেছি, শত শত ধর্মভীরু মানুষ, বোরকা পড়া রোগী,
তাদের সাথীরা অথবা কোন স্টাফ নিশ্চয়ই জরুরী বিভাগে নিয়ে যাবে।
কোরবানী ঈদের পরের দিন। হাসপাতালের গেট দিয়ে ঢুকতেই গরু-ছাগলের বিষ্টার
চেয়েও বেশী তীব্র গন্ধ নাকে এসে লাগল। না, এ গন্ধ কোন পশুর নয়, মানুষের
মলমূত্রের গন্ধ। বাম দিকে তাকালাম। সেই অর্ধনগ্ন নারী, মলত্যাগ করে তার
চারপাশে ছড়িয়েছে। বুঝলাম, ঈদের দিন পর্যন্ত তাকে কেউ সাহায্য করতে আসেনি।
মনে হল, পূর্বের কয়টা দিন এ নারী মানুষ নাকি কুকুর বিড়াল--এ গবেষণায় ছিল।
কারণ এ নারী খাবার ছাড়া আর কিছু চাইতে পারে না। তার পরিচয়, সে নিজেও জানে
না। মানুষের মত (অস্পষ্ট স্বরে) দু’একটা কথা বললেও কুকুর, বিড়ালের মতই
ঠিকানাবিহীন। নিরব, নিথর দেহ সাপের মত কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে। অসুস্থ গরু অথবা
গাভী হলেও কোন কাজে আসত। এ যে মানুষরূপী শান্ত কোন প্রাণী, এর জন্য আলোচনা
হতে পারে, কর্ম হতে পারে না। নারীর মুখটা দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, She
is going to die--পৃথিবীর মানুষ রূপী নির্দয় জন্তু-জানোয়ারের চেহারা সে
দেখতে চায় না। কারণ এ রকম কোন জানোয়ারের কাছ থেকে আঘাত পেয়েই সে আজ মানসিক
বিকারগ্রস্ত, নাম ঠিকানাবিহীন কোন কুকুর, বিড়ালের মত পড়ে আছে। কয়েকদিনে
মশার কামড়ে হাত-পাত-মুখ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্ত জমাট চিহ্নে ভরে গেছে।
ঈদের আগের দিনের মত, ঈদের পরের দিনও উপ-পরিচালক স্যারের বিশেষ আদেশে অফিস
খোলা, তবে রোগী কম। আমি আমার স্টাফ মনিরকে নিয়ে কিছু করার ইচ্ছা প্রকাশ
করলাম। মনির নারীটির কাছে গিয়ে বলল, `স্যার মহিলা স্টাফদের আসতে বলি?’ আমি
ওর কথার অর্থ বুঝে চিরায়ত সমাজ প্রথায় মাথা নত করলাম। বসে না থেকে দু’একজন
আয়া-বুয়া নিয়ে ইসলাম, কোরবানী, বেহেস্ত-দোযখ, পাপ-পূণ্য এবং এই নারী
সম্পর্কে নানা বিষয়ে আলোচনা করলাম। বুঝাতে চেষ্টা করলাম, এই যে নারী, আধা
মরা, কুকুর-বিড়ালের মত পড়ে আছে, কেউ নেই তার, খাবার চাইবার শক্তিও নেই, একটি
মশা তাড়াবার শক্তিও নেই, কয়দিন যাবৎ না খাওয়া--আমরা কেউ তা জানি না। এটা কি
তার দোজখের শাস্তি হচ্ছে না? আজ আমরাও যদি দেখে, না দেখার ভান করি, একদিন
আল্লাহপাক আমাদের কাউকেও এভাবে শাস্তি দিতে পারেন...।
এভাবে বুঝানোর পর আয়া-বুয়ারা আমাকে বড় পরহেজগার মানুষ মনে করল। ওদের টাকা
দিলাম স্যালাইন, সিরিঞ্জ, ইনফিউশন সেট, ভিটামিন ক্রয় করার জন্য। ওরা
নারীটিকে গোসল করাল। ফুটপাতকে খোলা ছাদে Single patient ward বানালাম।
স্যালাইন ঝুলিয়ে দিলাম দেয়ালের সাথে দড়ি বেঁধে। হাসপাতাল থেকে কিছু ঔষধ
আনলাম। এখন কিছু মানুষ এবং ঔষধের দোকানীরা টাকা ছাড়াই ঔষধ পানি দিচ্ছে। মনে
হলো `তুমি জাগলে, সবাই জাগবে--জেগে উঠবে একদিন বাংলাদেশ।`
বলে রাখা ভালো, আমি ধর্ম, ঈশ্বর, পাপ-পূন্যে বিশ্বাসী কোন মানুষ নই, বিবেক
বিশ্বাসী কর্মভীরু মানুষ। মানুষ হবার জন্য জ্ঞান হবার পর থেকে চেষ্টা করছি।
মানুষ কিছুটা হতে পেরেছি বলে কখনও কখনও মনে করতে ইচ্ছে হয়; পরক্ষণে ভয় হয়,
মানুষ হবার অপরাধে মানুষরূপী অমানুষেরা অথবা ভন্ড, ধার্মিকরূপী অধার্মিকেরা
আমাকে পদে পদে যদি কাঁটা ছড়ায়ে দেয়।
নারীটিকে স্যালাইন সেট করার সময় কয়েকবার ক্যানোলা দিয়ে পিক করতে হয়েছে শিরা
পাচ্ছি না বলে। শিরাগুলি মৃত্যু ভয়ে যেন, চুপসে গেছে। পিক করার সময় সব
রোগীই ব্যথা অনুভব করে। এই নারীটির যেন, কোন অনুভুতিই নেই। বলেই চলেছে,
‘মোরে পানি দে, কইলজাটা জ্বইল্লা গেল।’--বুঝলাম, বরিশাল অথবা দক্ষিণ বঙ্গের
মানুষ। এই প্রথম মুখখানা দেখলাম; শত শত কষ্টের ছাপ তার চোখে মুখে; বয়স
বেশিই মনে হয়। চুলগুলিতে যেন জট লেগে আছে শহরের যানজটের মত। বুড়িগঙ্গার মত
দুর্গন্ধ তার আশে পাশে। বুয়ারা তাকে গোসল করায়ে পরিস্কার করালেও, তার
মলমূত্র--যা চারিদিকে ছড়িয়ে আছে, তা পরিস্কার করেনি। নিথর দেহ পড়ে আছে।
চিবুক বসে গেছে। গাল দুটি ঢুকে গেছে মুখের ভিতর। হাড়-গোড় যেন বের হয়ে আসতে
চায় কারণ এ দেহ তাদের খাবার দেয় না। মাঝে মাঝে গোঙ্গানোর শব্দ, কাকে যেন
গালি দিচ্ছে। ভাবি, হে প্রকৃতি, এ নারীটি--যা তোমারই জীবন্ত অংশ; পানি, ভাত
শব্দগুলি মনে রেখেছে; মনে রাখেনি স্থান-কাল-পাত্র অথবা ঠিকানা। কারণ এ
সমাজে ঠিকানাবিহীন মানুষ ভাবা যায় না। বড় দুর্ভাগা এ দেশে তারা।
এই যে এ কাজটি করছি, কেউ ভাল বলছে, কেউ অবাক হচেছ। কেউ বলছে, সারাদেশে এ
রকম মানুষ হাজার হাজার, কয়টার সেবা করবেন, স্যার। আমি বললাম, আমরা সতের
কোটি মানুষ যদি দশ জনে মিলে একজনের জন্য নূন্যতম দায়িত্ব পালন করি, তাহলে
তো হবে। সবাই আমরা যে যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে পারি। হাসপাতালের
স্টুয়ার্ড গোলাম মোস্তফাকে সব বললাম। তিনি উৎসাহ নিয়ে আমার সাথে থাকা
বুয়াকে বললেন, এই তুমি প্রতিদিন যতবার খুশী খাবার নিয়ে যাবে। স্যার, খাবার
নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না।
পরদিন, গাড়ী একসিডেন্টে মুখের চোয়াল ভাঙ্গা রোগীর জন্য জরুরী ভিত্তিতে
আমাকে হাসপাতালে ডাকা হয়েছে। গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখি নারীটি এখনও উন্মুক্ত
খোলা ছাদের ওয়ার্ডেই পড়ে আছে। তবে আগের চেয়ে কিছুটা সুস্থ্য। আরো কিছু
আয়া-বুয়া ও স্থানীয় কয়েকজন মমতাময়ী, দয়াময়ী মহিলার সাহায্যে জটা পাকানো চুল
কাটালাম, নক কাটালাম। পরিস্কার করিয়ে বন্ধু ডাঃ ফেরদৌস এর সাহায্যে মেডিসিন
ওয়ার্ডে অজ্ঞাত বলে পুলিশ কেইস হিসাবে ভর্তি করালাম। ওর সাহায্য পাওয়াতে
দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ এগোতে লাগল। এখন ডাক্তার, নার্স, রোগীদের আত্মীয়, ঔষধ
কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভ, আয়া-বুয়া সবাই সাধ্যমত মানবিক দায়িত্ব পালন করতে
লাগল।
আরেকদিন সকাল বেলা, মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখি নারীটি শুয়ে আছে। দুপুর বেলা
দক্ষিণ বঙ্গের আমার দুই জন আত্মীয়--এডভোকেট স্বপন, এডভোকেট সঞ্জিত এবং
স্কয়ার ফার্মার সিনিয়ার অফিসার নুরুন্নবী, আমার ছাত্র-ছাত্রী--নিশু,
আরজিনা, আলী আহমদকে নিয়ে বেড-এ গিয়ে দেখি নারীটি বসে বসে ভাত খাচ্ছে। নিশু
অবাক হয়ে বলছে, স্যার, একি! পুরোপুরি সুস্থ্য। অবাক হবার কারণ সে আমার সাথে
প্রথম থেকেই ছিল। এ রকম অবস্থা থেকে একটু ভালোবাসায় ছোঁয়া পেলে মানুষ যে
বাঁচতে পারে--এটা তার প্রথম অভিজ্ঞতা। এডভোকেট স্বপনদাকে বললাম, আপনাদের
অঞ্চলের মানুষ, দেখুন কথা বলে, কোন ঠিকানা বলে কিনা। স্বপনদা কিছু কথা
বললেন, ঠিকানা উদ্ধার করতে পারলেন না। বললেন, কিছুদিন পর আবার আসব, আরো
সুস্থ্য হোক।
চিকিৎসা বিদ্যার পাশাপাশি মানুষ হিসাবে নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য শিক্ষার
জন্য এখন প্রতিদিন সকাল এবং অফিস শেষে ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে দু’বার রোগীটি
দেখতে যাই। আমার পরিবারের উৎসাহ আমার চেয়ে কম নয়। আমার সহধর্মিনী ডাঃ
সুপ্রিয়া, জামা-কাপড়, ফল নিয়ে একদিন রোগীটিকে দেখেও গেছে। পুরান ঢাকার
সুহৃদ বন্ধু, জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে রোগীটিকে একদিন দেখতে গিয়েছিলাম। সব
ঘটনা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে জাহাঙ্গীর বললেন, মন্ডল ভাই, আল্লাহ্ আপনাকে দিয়ে
এই নারীটিকে বাঁচিয়েছেন।
ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স হাসিনা খানম অকৃত্রিম মাতৃস্নেহে রোগীটিকে সেবা করে
যাচ্ছেন। এই রকম নার্স হাসপাতালে কিছু সংখ্যায় থাকলে এরকম অজ্ঞাত, অসহায়
রোগীর ভাল সেবা হয়। একদিন হাসিনা খানম বললেন, 'স্যার, মনে হয়, মানসিক
বিভাগে ভর্তি করানো লাগবে না। রোগী কথা-বার্তা ভালই বলছে। এখন সে নিজে খায়।
নিজে নিজেই বাথরুমে যায়। সবার সাথে একটু একটু কথা বলে। আমি আর একটু চেষ্টা
করে দেখি।' আমি শুনে খুশি হলাম, 'বললাম, মানসিক বিভাগে না নিলে তার প্রকৃত
চিকিৎসা হবে না।'
অফিসে বসে ভাবছি, বিস্তীর্ণ শীতের কুয়াশা অথবা অন্ধকারের পথে আমরা আজও
হাজার বছর ধরে পথ হাঁটছি। এত আলোকিত আধুনিক সভ্যতা, অথচ কি ঘোর কুয়াশা ঘেরা
অন্ধকারের মধ্যে মানুষ বাস করছে। মনে হয়, আলোর ছোঁয়া যেন, এদেরকে স্পর্শ
করে না, অথবা এরা নিজেরাই আলোতে আসতে চায় না; বরং ধর্মীয় বলয়ের মধ্যে
নিজেদের মত করে সাজানো অন্ধকারেই এরা বসবাস করতে চায়; অন্ধকারকেই বুকে নিয়ে
থাকতে চায়; আলোকিত মানবতার রূপ-স্বাদ-গন্ধ কোন অদৃশ্য ভয়ে, কোন স্বার্থের
দ্বন্ধে গ্রহণ করতে চায় না। কে বা কারা যেন সর্বদা এদেরকে পিছু টানে; টানতে
টানতে নিয়ে যেতে চায় কোন কুয়াশাচ্ছন্ন পূরাণের যুগে, আরব্য রজনীর দেশে অথবা
অন্য কোন ঘোর অন্ধকারে।
মানুষগুলো দিনে দিনে রাষ্টের মত স্বার্থপর হয়ে উঠছে। নিজের স্বার্থ ছাড়া
কেউ কিছু ভাবতে চায় না, কিছু করতে চায় না। এদেশের পথে-ঘাটে পড়ে থাকা
ঠিকানাবিহীন মানুষ, মানসিক বিকারগ্রস্ত রোগী, পাগল, নেশাখোর মানুষ, হিজরা
সম্প্রদায়, বেদে গোষ্ঠী--এদের নিয়ে রাষ্ট্রের, রাষ্ট্র পরিচালকদের কোন মাথা
ব্যথা নেই। এদের ভোট নেই, তাই এদের নিয়ে কারো কোন ভাবনাও নেই। এদেশে ধর্মীয়
শাখা-উপশাখা, ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল, ধর্মের নামে বা ভিন্ন নামে ব্যাংক,
এনজিওর অভাব নেই, যাদের ধর্মীয় স্বার্থে হলেও কিছু করা উচিত; উল্লেখিত
মানুষের জন্য এরা কিছু করে না বরং যার মাথায় তেল আছে, তার মাথায় আরো তেল
দেয়। বিশেষ করে এনজিওগুলোর বিশেষ বা বিরাট ভূমিকা থাকার কথা, কিন্তু তাদের
নিজেদের আকাশ ছোঁয়া উন্নয়ন দেখলেই বুঝা যায়, তারা কাদের স্বার্থে কাজ করে।
স্রষ্টার নামে যারা মাসের পর মাস ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে, ধর্মের বানী প্রচার
করে, যারা পীর-আওলিয়া-মহাপ্রভু-মহারাজ-ফাদার-বুদ্ধ আছেন (এবং যাদের বিশাল
শীষ্য বাহিনী আছে); তারা কি স্রষ্টার এই অবহেলিত আদম সন্তানদের চোখে দেখে
না, তারা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য যেভাবে কাজ করেন, সেভাবে কি
তাদের জন্য কাজ করতে পারেন না।
মাঝে মাঝে আমার খুব কষ্ট হয়, যখন ভাবি, এত মানুষ, এত সম্পদ, এত কোরবানী, এত
আনন্দ, আবার মানুষের কারণে কত যন্ত্রণা, কত দুর্বিসহ ঘটনা ঘটে! একজন
ডায়বেটিস রোগী, সারাদিনে আধা কেজি খাবারও খেতে পারে না অথচ কোটি কোটি টাকার
সম্পদ তার। সম্পদ বাড়ানোর জন্য এদেশের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ, হেন কোন খারাপ
কাজ নেই--যা তারা করে না। যদি এরা ধর্মানুযায়ী যাকাত আদায় করত অথবা সরকারী
নিয়মে ট্যাক্স ঠিকমত দিত তাহলে এদেশের পথে পথে এ রকম নারীরা পড়ে থাকত না।
কেন যে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছে না--বুঝি না।
মানুষরূপী কিছু মানসিক ভারসাম্যহীন যাদেরকে খুব সহজ করে পাগল বলি; এরা
আমাদের আশে পাশে থাকে বিড়াল কুকুরের মত ছন্নছাড়া হয়ে। ফুটপাতের সর্বহারারা
তো তবুও ভিক্ষা বা কাজ এর মাধ্যমে খাবার চাইতে পারে। এরা তাও পারে না। কেউ
এদেরকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না।
মানুষ, প্রকৃতির এ নির্মম খেলা থেকে কিছুই শিখে না। শিখে না ইতিহাস থেকে,
শিখে না এ নিথর পড়ে থাকা মানুষরূপী, এ নারীটির জীবন থেকে। তবে এ কাজ থেকে
একটা বিষয় বুঝতে পারলাম। সাধারণ মানুষরা কেউ একা একা ঝামেলায় জড়াতে চায় না।
তবে মানবীয় গুণাবলী প্রকাশ করার সুযোগ সবাই চায়, সবাই খুঁজে। চায় একজন নেতা
এবং তার নিঃস্বার্থ নেতৃত্ব। এই যে আমি, নেতৃত্ব দিয়ে কাজটি শুরু করেছি,
এখন সবাই যার যার সাধ্য মত কাজ করছে। আসুন, আমরা শুরু করি, আমরা জাগি, আমরা
জাগলে, সবাই জাগবে, জাগবে বাংলাদেশ।
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|