ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কাক-জ্যোৎস্নায়
কাক-ভোর (পর্ব-৭)
শাশ্বত স্বপন
নিতাই শীল এর অকথ্য
গালি-গালাজের কারনে এ গায়ের সব ছেলেমেয়েরা তাকে অপছন্দ করে। তার বাড়িতে নানা
জাতের ফুল আর ফলের গাছ আছে, পুকুর আছে, পুকুরে সে মাছ চাষ করে; বাড়ির পাশে
জমি আছে, সারা বছরই খেত মজুর কাজ করে। কোন কোন খেত মজুর তার বাড়িতেই থাকে।
তবে বাড়িতে আপন লোকজন খুবই কম। সবাই বলে আয়ের টাকা সবই কোলকাতা পাঠায়। তার
চার ছেলে চার মেয়ে--এদের মধ্যে ছয় জন বিবাহিত, তারা কোলকাতা চলে থাকে। বছরে
এক কি দু'বার আসে। বাকি এক ভাই, এক বোন ঢাকা থাকে। বোনের বিয়ে হলেও ভাইয়ের
বিয়ে হয়েছে আবার হয়নি--দু'টাই সত্য। বোন ভিন্ন ধর্মের এক ছেলেকে বিয়ে করে
ধর্মান্তরিত হয়েছে। আর ভাই ভিন্ন ধর্মের এক মেয়েকে বিয়ে করেছে কিন্তু
সামাজিক বাঁধার কারণে সংসার করা হয়নি। নিতাই শীল বলে, ঢাকায় ঐ যবন এর মেয়ের
কোন যবন এর ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে। তবে, তার ছেলে কিছু বলে না।
কালীকে দেখলেই নিতাই শীল বকতে শুরু করে, বেশি খেপালে অভিশাপ দেওয়া শুরু করে।
শুধু কালী নয়, কল্যাণ, শিখা, নাসরিন সবাই তার উপর খেপা। আজ রাতে নিতাই
শীলের নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল চুরি করার সমস্ত পরিকল্পনা কালী, নাসরিন,
দীপা, মিলন, কল্যাণ করে ফেলেছে। নিতাই শীলের বাড়ি কালীদের বাড়ির কাছাকাছি।
রাতে পড়ার ফাঁকে পায়খানায় যাবার কথা বলে কালী নিতাই শীলের নারিকেল বাগানে
চলে আসে। কালী নারিকেল গাছে উঠল। নারিকেলের গুচ্ছ কেটে দড়িতে বাঁধতে লাগল।
একটি নারিকেল তার হাতের গিঁট দেওয়া দড়ি থেকে মাটিতে পড়ে যায়, ভীষণ শব্দ হয়।
নীতাই শীল কে কে করে চিৎকার দিয়ে হারিকেন নিয়ে বাগানে আসে। নাসরিন, দীপা,
মিলন, কল্যাণ পালিয়ে যায়। কালী গাছ থেকে তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে মাটিতে পড়ে
যায়। বেশ ব্যথা পায়। নিতাই শীল ওর কান ধরে কালীপদের কাছে নিয়ে আসে। বকাবকি
করে নীতাই শীল বাড়ী ফিরে। কালীপদ কালীকে খুব মারে। রাতে কালী ভাত না খেয়ে
কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়ে। তুলসী ওকে জোর করে ঘুম থেকে উঠায়ে ভাত খাইয়ে দেয়।
কালীকে তুলসী বোঝাতে থাকে--
-- শুন, তুই যদি খোদাই ষাড়ের মত চলিস, তাহলে তোর বাবায় তোরে বিয়া দিয়া দিব।
-- ইস্? বিয়া দিয়া দিব, বুড়ী বলল একটা কথা। ঐ বুড়ী মিলনওতো চুরি করছে। ওর
মা ওরে বকব, বিয়া দিব? নাসরিনরে ওর মা-বাবায় বিয়া দেবার কথা বলে? বাবায়
যতবার আমাকে মারে ততবার আমারে বিয়া দেয়, মাও আমারে বিয়া দেয়।
-- ঐ মিলন, নাসরিনের কথা বলিস--ওরা তো মুসলমান।
-- আহারে মুসলমান!কাল কল্যাণরে জিজ্ঞাসা করব, ওর মা ওকে বিয়ার কথা বলেছে
কিনা ?
-- ওরাতো পুরুষ মানুষ।
--আর তুমি তো মেয়ে মানুষ। এজন্যই তো সাদা কাপড় পড়, উপাস কর, নিরামিষ খাও,
একাদশী কর। ঐ বুড়ী, কারো বউ মারা গেলে সে কি সাদা কাপড় পড়ে, উপাস করে,
একাদশী করে, নিরামিষ খায়?
-- আহারে, এই জন্যই তো ভগবান আমাদের মেয়ে বানিয়েছে।
--আর তাদের ছেলে বানিয়েছে। আমি ভগবানের কাছে যাব। তুমি আমারে উনার কাছে নিয়ে
যাও।
-- হায়, হায় বলে কি? পাপ হবে, এই কথা বলতে নাই।
-- হ্যাঁ, তোমার পাপ হবে, আমার হবে না। আমি মারা গেলে ভগবতীকে ধরব।
-- ঐ পাগল হলি! তোর পেটে এত! অল্প বয়সে বেশি পাকছস। কালীপদরে বলব, তোরে যেন
তাড়াতাড়ি বিয়া দেয়।
-- বা-বা! আবার বিয়া! আর কতবার বিয়া দিবা?
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |