প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

বন, কুয়াশা আর শীতের গল্প
 

 

শাশ্বত স্বপন

 

 

পদ্মা নদীর কাছে দীর্ঘ বনঝাউ, কাঁশবনের মাঝে সারি সারি গজারি, বাবলা, বন্য কাঁটা বাঁশ, বেত ঝোপ। সন্ধ্যায় বাতাসে বন্যপুষ্প ও তৃণগুল্মোর সুগন্ধ, পাখির কিচিরমিচির ডাক, বনের ডোবার অগভীর জলে ফুটন্ত লিলি ফুল--বাতাসে সুবাস ছড়িয়ে দেয়। শীতকালে আমাদের অঞ্চলে লিলি ফুল হেমন্ত কালে দেখা যায়। নির্জন আকাশতলে দিগন্তব্যাপী জোৎস্না রাতে বনপুষ্পের সুবাশ, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, শীতের মধ্যে শিয়ালের পাক্কা হুয়া ডাক--রাত্রির পরিবেশে আমাকে যে কোথায় নিয়ে যায়। নির্ঘুমে আমরা সবাই। বিড়ি-সিগারেটের ফাঁকে গাছ ও ঘাস কাটার হিসাব শেষ করে বনের শুকনো ডাল-পাতা জ্বালিয়ে, আগুনের চারিদিকে পাটি, গামছা বিছায়ে বসে শীতের গান আর সেই সাথে বনমুরগী, বনহাঁস অথবা বনজলের মাছ পুড়াইয়া ভাত অথবা মুড়ি-পিয়াজ-তেল দিয়ে খাওয়া। আহা! সে কি স্বাদ, কি শান্তি এই ঘন কুয়াশা রাত্রিতে। মনে হয়, পিকনিক অথবা মাসুদ রানা সিরিজের কোন কাহিনীর নির্জন দ্বীপের ছবি।আগুনের কাছে থাকলে শান্তি, দূরে গেলেই কনকনে শীত। রাতের শীত বাড়লে অথবা শীতের ভোরে ধনে পাতার ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া। শীতের পার্বণের কত স্বাদ নিয়েছি কত সাথীদের বাড়ী গিয়ে; অন্যের ক্ষেত থেকে পিয়াজ তুলে আনতে গিয়ে ধরাও পড়েছি। গ্রামে থাকলে মা হয়তো শুঁটকী, মটরশুটি, শীম, আলু, ধনে পাতার ভর্তা দিয়ে চিতের পিঠায় মেখে দিত। মায়ের কথা মনে হলে শীত যেন, আরো বেড়ে যায়। পূরাণের গঙ্গা (পদ্মা নদী) দেবী যে, মা-বাবা-ভিটেমাটিসহ সব নিয়ে গেছে, দূরে থাকলে--তা মনে হয় না। বরং মনে হয়, বাড়ি গেলেই মাকে দেখতে পাব।

এই বন পথে প্রতিদিন সূর্যের উদয় দেখি, দেখি দূরের টিলা, জঙ্গল; আবার সন্ধায় বন ঝাউ, দীর্ঘ ঘাস (বাঁশ) তথা বনশীর্ষ লাল আভায় মাখিয়ে সূর্য ঘুমিয়ে যায়। ফিরে আসি কিছু কাচা টাকা হাতে নিয়ে। আবার ছুটে চলি লাউয়া ছড়ায়, চিম্বুক পাহাড়ে, ভাওয়াল বনে অথবা অন্য কোথাও। রাতের চর বন আর ভাওয়াল বন একই রূপ ধারন করে। রাতে উদীয়মান চন্দ্রের গোলাকার বৃত্তের নিচের পরিধি যেন বাঁশের চিকন পাতা ছোঁয়া দিয়ে যায়। নিঃশব্ধ অরন্যভূমি, নিস্তব্ধ জনহীন নিশীথ রাত্রি, চকচকে সাদা বালু, কোথাও দো-আঁশমাটি মিশানো বন, দিনের রৌদ্রে কাচা শুকনা কাঁশবনে জোৎসার আলো পড়ে অপার্থিব সৌন্দর্যের অপূর্ব মহিমায় ভরে দেয় আমার দৃষ্টির দিগন্ত। জল ডোবায় সাদা-বেগুনি কলমী ফুলের সমারোহ আর এই ভিজা বালু-দো-আঁশ মাটিতে সাদা সাদা (কেউ বলে এর নাম দুধলি ফুল) ফুল--বড় মিষ্টি সুগন্ধ ছড়ায় আশেপাশে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে হঠাৎ করে। এ সময় বৃষ্টি! অবাক হলাম, এটা কি মাস? কখনো কখনো পৌষ মাসের শেষে, মাঘ মাসের শুরুতে কিছু কিছু বৃষ্টি পড়ে।

মনে পড়ে, উত্তরবঙ্গের পথে--এখানকার মত ওখানেও খড়ের ঘর; তার মেঝে জমির সাথে সমতল; ঘরের বেড়া শুকনো ঘাস, পাটখড়ি, বনঝাউয়ের ডাল-পাতা; কোথাও কোথাও কাঠ, বাঁশ, বনঝাউয়ের সরু সরু গুঁড়ির বেড়া; তার উপর মাটি দিয়ে লেপা। এখনো সেই ঘরের কাটাখড়, অর্ধকাচা ঘাস, মুলি বাঁশের গন্ধ নাকে ভেসে আসে। শীতের রাতের গরুর গাড়ীতে যাত্রার কথা ভাবলে হাত পা গুটিয়ে আসে। জামা-কাপড়-কম্বল সব ঠান্ডায় বরফ হয়ে যায়। শুয়ে থাকা পাশে শীত কম থাকলেও অন্য পাশে কাত হয়ে শুতে গেলে মনে হয়, মাঘ মাসের জলডোবায় ডুব দিয়েছি।

শীতের বনতল; শীতের সকাল-দুপুর-বিকাল-সন্ধ্যা; শীতের জোৎস্না রাত্রির চাঁদ, দিনের সূর্য; শীতের নির্জনতা আর স্থান কাল ভেদে সৌন্দর্যেয় বৈচিত্র্যতা; নির্জন আকাশতলে দিগন্তব্যাপী কত রুপে, কত সাজে যে শীত কন্যা সাজে, এ বাংলার প্রকৃতিতে। সৌন্দর্য পিয়াসীর চোখ অথবা কবির মন হারিয়ে যায় বারে বারে প্রকৃতির নদী-নালা-খাল-বিল-হাওর-বাঁওর-মাঠে-ঘাটে অথবা অন্য কোথাও, কোন কুয়াশার বাঁকে।


 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ